চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪

চাষীদের টাকা আত্মসাৎ

অগ্রণী ব্যাংকের সাবেক কর্মকর্তা গ্রেপ্তার

নিজস্ব প্রতিবেদক

২২ জুলাই, ২০১৯ | ১:৩৯ পূর্বাহ্ণ

জালিয়াতির মাধ্যমে পার্বত্য অঞ্চলের আদা ও হলুদ চাষীদের নামে ঋণের ২৭ লাখ ৭০ হাজার টাকা (বর্তমানে সুদসালে ৫০ লাখ ২২ হাজার ৫০৫ টাকা) আত্মসাৎ করেন বান্দরবান বাজার শাখার অগ্রণী ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপক নিবারণ চন্দ্র তনচংগ্যা (৫৯)। ভুয়া কাগজপত্র তৈরি করার এ কাজে সহযোগিতা

করেন ব্যাংকের আরও চার কর্মকর্তা। দুর্নীতি দমন কমিশনের অনুসন্ধানকালে এর সত্যতা উঠে আসে। এ বিষয়ে গতকাল রবিবার সকালে দুর্নীতি দমন কমিশন-দুদক সমন্বিত জেলা কার্যালয়,চট্টগ্রাম-২ এ অর্থ আত্মসাতের মামলা দায়ের করেন অনুসন্ধান কর্মকর্তা ও দুদক-২ এর উপ-সহকারী পরিচালক জাফর সাদেক শিবলী। মামলায় নিবারণ চন্দ্র তনচংগ্যা ছাড়াও আসামি করা হয় অগ্রনী ব্যাংকের মাঠ কর্মী জ্ঞান চাকমা (৫০), ক্যাচিঅং মার্মা (৪৫), জ্যোতিষ কুমার খীসা (৪৯) ও হীরেন্দ্র লাল চাকমাকে (৪৭)। পরে দুপুরে নগরীর জিইসি মোড় এলাকা থেকে অগ্রণী ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপক নিবারণ চন্দ্র তনচংগ্যাকে গ্রেপ্তার করে দুদকের একটি টিম। মামলার বাকি আসামিরা বর্তমানে অগ্রণী ব্যাংকের বিভিন্ন শাখায় মাঠকর্মী হিসেবে কর্মরত রয়েছেন।
গ্রেপ্তার নিবারণ চন্দ্র তনচংগ্যা রাঙামাটির কাপ্তাইয়ের বরইছড়ি এলাকার মৃত সুরেন্দ্র লাল তনচংগ্যার ছেলে। তিনি বর্তমানে নগরীর জিইসি মোড় এলাকায় বসবাস করেন।
এদিকে, ব্যাংকের এ কর্মকর্তাকে গ্রেপ্তারের পর আদালতে হাজির করা হলে আদালত তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
দুদক জানায়, ২০১১-১২ ও ২০১২-১৩ অর্থ বছরের মধ্যে খাগড়াছড়ি জেলার অগ্রণী ব্যাংকের তৎকালীন ব্যবস্থাপক নিবারণ চন্দ্র তনচংগ্যাসহ ব্যাংকের আরও চার কর্মকর্তার যোগসাজসে প্রতারণা ও জাল জালিয়াতির মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট ব্যাংক হতে ২৮ লাখ ৯০ হাজার টাকা আদিবাসী আদা ও হলুদ চাষীদের মাঝে বিতরণ করা হবে দেখিয়ে উত্তোলন করেন। পরবর্তীতে কয়েকজন কৃষককে মোট ১লাখ ২০ হাজার প্রদান করে বাকী ২৭ লাখ ৭০ হাজার টাকা অসৎ উদ্দেশ্যে পরস্পর আত্মসাৎ করেন। যা বর্তমানে সুদসলে ৫০ লাখ ২২ হাজার ৫০৫ টাকা।
এ প্রসঙ্গে দুর্নীতি দমন কমিশন-দুদক সমন্বিত জেলা কার্যালয়,চট্টগ্রাম-২ এর উপ-সহকারী পরিচালক ও মামলার তদন্ত কর্মকর্তা জাফর সাদেক শিবলী পূর্বকোণকে বলেন, ‘ নিবারণ চন্দ্র তনচংগ্যা ৪২ উপজাতী কৃষকের নামে আদা ও হলুদ চাষ বাবদ ঋণ মঞ্জুর করে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগের পর্যালোচনা করে দেখা যায় ৩০টি ভুয়া ঋণের বিপরীতের ২৮ লাখ ৯০ হাজার টাকা ছাড় করা হয়েছে। কিন্তু ওই ৩০ জনের সাথে কথা বলে জানা যায় মাত্র পাঁচজন ব্যক্তি বিভিন্ন অংকে মোট এক লাখ ২০ হাজার টাকা পায়। বাকী ২৭ লাখ ৭০ হাজার টাকা আত্মসাৎ করা হয়।
তিনি বলেন, এ ৩০টি ঋণের মধ্যে অগ্রণী ব্যাংকের সাবেক মাঠকর্মী জ্যোতিষ কুমার খীসা ও জ্ঞান চাকমা ১১টি করে ২২টি ঋণের অনুমোদনের জন্য সুপারিশ করেন। আর মাঠকর্মী হীরেন্দ্র লাল চাকমা ৮টি ঋণের অনুমোদনের জন্য সুপারিশ করেন। এ কাজে স্থানীয় দালাল ক্যচিঅং মারমা প্রায় সবকটি ঋণের বিপরীতে গ্রাহকদের ছবি এবং জাতীয় পরিচয়পত্র সংগ্রহ করে নিজেই আবেদন ফরম পূরণ, স্বাক্ষর প্রদানসহ যাবতীয় প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে জমা দেন। তদন্তে এ পাঁচজনের যোগসাজসে অর্থ আত্মসাতের বিষয়ে প্রমাণ পাওয়া যায়। এ বিষয়ে দীর্ঘ অনুসন্ধানের পর কমিশনে প্রতিবেদন জমা দিলে কমিশন মামলা দায়েরের অনুমোদন দেয়। পরে দুদকের একটি টিম ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপককে গ্রেপ্তার করে।
এদিকে, দুর্নীতি দমন কমিশন-দুদক সংশোধিত আইনের চট্টগ্রাম বিভাগের প্রথম মামলা হিসেবে রেকর্ড করা হয়েছে। এতদিন থানায় গিয়ে দুদকের কর্মকর্তারা মামলা দায়ের করলেও গত ২৩ জুন প্রকাশিত গেজেটে দুদকের আইনে সংশোধন আনা হয়েছে। এতে বলা হয়, দুর্নীতির তফসিলভুক্ত সব ধরনের অপরাধের মামলা এখন আর থানায় করা যাবে না। দুর্নীতি দমন কমিশনের নিজ দপ্তরে এসব মামলা দায়ের করতে হবে। এমনকি কেউ যদি থানায় দুর্নীতির অভিযোগ করেন, সেক্ষেত্রে পুলিশ সেটি সাধারণ ডায়েরি হিসেবে রেকর্ড করবে। পরবর্তীতে তা অনুসন্ধানের জন্য দুদকে পাঠাবে।
অন্যদিকে মামলার অন্য আসামিদের গ্রেপ্তার করতে দুদকের অভিযান অব্যাহত রয়েছে জানিয়ে দুর্নীতি দমন কমিশন-দুদক, সমন্বিত জেলা কার্যালয়,চট্টগ্রাম-২ এর উপ-পরিচালক মাহবুবুল আলম পূর্বকোণকে বলেন, ‘দুদকের সংশোধিত আইনের এখন যেকোন মুহুর্তে আসামীর বিরুদ্ধে মামলা দায়ের ও গ্রেপ্তার করায় আমাদের কাজে কিছুটা সহজ হয়েছে। এ মামলায় অন্য আসামিকে শীঘ্রই গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনা হবে’।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট