চট্টগ্রাম শনিবার, ২৭ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

প্রিমিয়ার ইউনিভার্সিটির সমাবর্তনে নওফেল

বাণিজ্যিক মনোভাবের প্রাধান্য রোধে বেসরকারি বিশ^বিদ্যালয় আইন

নিজস্ব প্রতিবেদক

২২ জুলাই, ২০১৯ | ১:৪১ পূর্বাহ্ণ

বেসরকারি বিশ^বিদ্যালয় পরিচালনার ক্ষেত্রে যাতে বাণিজ্যিক মনোভাব বেশি প্রাধান্য না পায় সেজন্য বর্তমান প্রধানমন্ত্রী বেসরকারি বিশ^বিদ্যালয় আইন ২০১০ প্রণয়ন করেছেন। এই আইন যদি না থাকতো, বর্তমানে বেসরকারি বিশ^বিদ্যালয় যেভাবে এগিয়ে যাচ্ছে সেভাবে এগোতে পারতো না। বরং গতানুগতিক ব্যবসায়িক শিক্ষাখাত হিসেবে পরিচালিত হতো। ইতোমধ্যে আমাদের দেশের অনেক বিশ^বিদ্যালয় গবেষণার কাজে বেশ সুনাম অর্জন করেছে। বর্তমান সরকারের চেষ্টায় বিশ^বিদ্যালয়ে মালিকানা শব্দটি বিলুপ্ত করে বোর্ড অব ট্রাস্টিজের মাধ্যমে পরিচালনা করা হচ্ছে। গতকাল রবিবার নগরীর নেভি কনভেনশন সেন্টারে প্রিমিয়ার বিশ^বিদ্যালয়ের দ্বিতীয় সমাবর্তন অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল এসব কথা বলেন। শিক্ষা উপমন্ত্রী আরো বলেন, যে সব শিক্ষার্থীরা এই ইউনিভার্সিটি থেকে পড়ালেখা শেষ করেছেন তারা যেন বিশ^বিদ্যালয়ে এলামনাই এসোসিয়েশন করেন। যারা এই বিশ^বিদ্যালয় থেকে পাস করে বের হবে তাদের কর্মসংস্থানের জন্য আপনারা এলামনাই এসোসিয়েশনের মাধ্যমে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবেন। জ্ঞান সৃষ্টি এবং উচ্চশিক্ষায় গবেষণার জন্য বিশ^বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে আগে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান তিনি। সমাবর্তন বক্তার বক্তব্যে ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটির প্রতিষ্ঠাতা উপাচার্য ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর প্রফেসর ড.

মো. ফরাসউদ্দিন বলেন, বিগত শতাব্দী থেকেই শিক্ষাখাতের বিভিন্ন দিক ও পর্যায়ে বহুমুখী প্রবণতা দেখা দেয়। যেমন ধর্ম, প্রকৃতি ও সমাজ বিষয় ছাপিয়ে পাঠ পঠনের বিষয়বস্তুতে কর্মসংস্থানের প্রশ্নটি বিপুলভাবে সামনে চলে আসে। বিশেষ করে বাংলাদেশের মত একটি কল্যাণমুখী রাষ্ট্র প্রথমে অনুন্নত থেকে স্বল্পোন্নত এবং বর্তমানে উন্নয়নশীল দেশের কাতারে উঠে আসার যোগ্যতা অর্জনে শিক্ষা একটি উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রেখেছে। কিন্তু স্বল্পোন্নত দেশের সাথে সংযুক্ত কিছু সুযোগ সুবিধা উন্নয়নশীল দেশের প্রতিযোগিতাকালে আর পাওয়া যাবে না। তাই বিশেষ করে শিল্পোন্নয়নের মাধ্যমে টেকসই উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদায় বাংলাদেশকে উন্নীত হতে হলে মানসম্মত শিক্ষাক্ষেত্রে জ্ঞান বিজ্ঞানে পারদর্শিতা অর্জন করতে হবে এবং লাগসই প্রযুক্তি ও উন্নয়ন কৌশল বিষয়ে তাত্ত্বিক ও ব্যবহারিক গবেষণা কাজে বিনিয়োগ বাড়ানো জরুরি।
স্বাগত বক্তব্যে প্রিমিয়ার ইউনিভার্সিটির উপাচার্য প্রফেসর ড. অনুপম সেন বলেন, একটি বিশ^বিদ্যালয়ের মূল কাজ কেবল শিক্ষাদানের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, জ্ঞান সৃষ্টি করাই হচ্ছে বিশ^বিদ্যালয়ের মূল কাজ। প্রিমিয়ার বিশ^বিদ্যালয় চেষ্টা করছে জ্ঞান সৃষ্টি করার জন্য। দেশের উন্নয়নে বড় কোন ভূমিকা যাতে রাখতে পারে এই জন্য বেসরকারি বিশ^বিদ্যালয়কে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য পথ সৃষ্টি করেছেন।
তিনি আরো বলেন, বাংলাদেশে এখন যে বিশাল উন্নয়ন কর্মকা- চলছে, সেগুলো এগিয়ে নিতে হলে বিশাল একটি শিক্ষিত জনগোষ্ঠী প্রয়োজন। শুধুমাত্র সরকারি বিশ^বিদ্যালয়ের পক্ষে সেই জনগোষ্ঠী সৃষ্টি করা সম্ভব না। সে ক্ষেত্রে বেসরকারি বিশ^বিদ্যালয়কে এগিয়ে আসতে হবে। বেসরকারি বিশ^বিদ্যালয়গুলোকে গবেষণার উপর জোর দেয়ার জন্য বলা হয়। জ্ঞান সৃষ্টির করতে হলে গবেষণা ছাড়া কোন পথ নেই। বেসরকারি বিশ^বিদ্যালয়গুলোকে গবেষণার সুযোগ দিতে হবে। আমাদের গবেষণা করার জন্য বলা হয়, কিন্তু গবেষণার পথ তো বন্ধ রয়েছে। তাই যেসব বেসরকারি বিশ^বিদ্যালয়ের সক্ষমতা আছে, সেসব বিশ^বিদ্যালয়কে এম ফিল ও পিএইচডি গবেষণার সুযোগ দিতে হবে।
সভাপতির বক্তব্যে ইউজিসির চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. কাজী শহীদুল্লাহ বলেন, আমরা পরিবর্তনশীল বৈশ্বিক অর্থনীতিতে বাস করছি। তীব্র প্রতিযোগিতামূলক বিশ্বে আমাদের টিকে থাকতে হলে শিক্ষার মান উন্নত করতে হবে। শিক্ষার মান যত উন্নত হবে, অর্থনীতি তত উন্নত হবে। শিক্ষার মান উন্নত করতে হলে যোগ্য শিক্ষক নিয়োগ দিতে হবে, গবেষণা খাতকে সচল করতে হবে। শুধুমাত্র জ্ঞান চর্চা করলে হবে না, জ্ঞানের বাস্তব প্রয়োগ ঘটাতে হবে। যুগোপযোগী শিক্ষা দিয়ে তরুণ প্রজন্মকে দক্ষ জনগোষ্ঠীতে রূপান্তর করতে না পারলে বাংলাদেশ ২০২১ সালে মধ্যম আয়ের ও ২০৪১ সালে উচ্চ আয়ের রাষ্ট্রে পরিণত হবে না। বিশ্ববিদ্যালয় যোগ্য মানবসম্পদ সৃষ্টির মাধ্যমে বৈশ্বিক ও জাতীয় সমস্যা সমাধান করতে পারে। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো এই লক্ষ্যে ভূমিকা রাখছে। প্রিমিয়ার ইউনিভার্সিটি তাদের অন্যতম।
সমাবর্তন অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন ইউজিসির সদস্য ড. সাজ্জাদ হোসেন, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. শিরীণ আখতার, মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি হাসিনা মহিউদ্দিন প্রমুখ।
সমাবর্তনে ১ হাজার ১১২ জন গ্র্যাজুয়েট তাঁদের শিক্ষা সমাপনী সনদ গ্রহণ করেন। কৃতিত্বপূর্ণ ফলাফল অর্জন করায় সমাবর্তনে ১১ জন গ্র্যাজুয়েটকে পদক প্রদান করা হয়। অনুষ্ঠান শেষে বেলা ৩টায় মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের পরিবেশনা শুরু হয়। বাংলাদেশের খ্যাতনামা সঙ্গীতশিল্পী নোবেল এই সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে গান পরিবেশন করেন।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট