চট্টগ্রাম শুক্রবার, ১০ মে, ২০২৪

সর্বশেষ:

লস দেখিয়ে তেল চুরি!

ইমাম হোসাইন রাজু

২২ ডিসেম্বর, ২০২১ | ১:২৫ অপরাহ্ণ

দেশে জ্বালানি তেলের চাহিদা মেটাতে ভর্তুকি দিয়েও তেল আমদানি করে যাচ্ছে রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন (বিপিসি)। সরকারি অর্থে তেল আমদানি করলেও তেলের খালাস, অপারেশন, হিসাব, সরবরাহ, বিক্রয়, বিক্রিত অর্থের পরিমাণ সবই দখলে রেখেছে দেশের প্রধান তেল বিপণনের তিন প্রতিষ্ঠান। আর এ সুযোগেই সিন্ডিকেট গড়ে খালাসের নামে অপারেশনাল লস দেখিয়ে প্রতি বছরই চোরাইবাজারে চলে যাচ্ছে কোটি কোটি টাকার তেল। এতে জড়িত রয়েছেন প্রতিষ্ঠানগুলোর নিয়ন্ত্রণ কর্মকর্তারাই। বছর বছর এমন কর্মকাণ্ড চালিয়ে এলেও এবার এসব ‘রাঘব বোয়ালদের’ খুঁজে বের করতে মাঠে নেমেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। জানা যায়, চলতি বছরের মাঝামাঝিতে এসব বিষয়ে অভিযোগ জমা পড়ে দুদকে। যা যাচাই বাছাই শেষে অভিযোগ আমলে নিয়ে অনুসন্ধানের জন্য অনুমতি দেয় দুদক কমিশন। এ জন্য দায়িত্ব দেয়া হয় দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) প্রধান কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক প্রবীর কুমার দাসকে। ইতোমধ্যে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর বিষয়ে জানতে পৃথক পৃথক চিঠিও দিয়েছে দুদকের এ অনুসন্ধান কর্মকর্তা। যা এখন চলছে যাচাই-বাছাই।
সংশ্লিষ্টরা জানান, জ্বালানি তেল সম্পূর্ণরূপে একটি আমদানি নির্ভর পণ্য। যা সরকারের একমাত্র তেল সরবরাহকারী রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন (বিপিসি) প্রতিষ্ঠার পর থেকে দেশের জ¦ালানি তেলের জোগান দিয়ে আসছে। বিপিসির অধীনে ৩টি তেল বিপণন প্রতিষ্ঠান পদ্মা, মেঘনা ও যমুনা সারাদেশে কমিশনভিত্তিক তেল সরবরাহ নিশ্চিত করে থাকে। কিন্তু বিপিসি বা সরকারি অর্থে তেল আমদানি করলেও তেলের খালাস, অপারেশন, তেলের হিসাব, সরবরাহ, বিক্রয়, বিক্রিত অর্থের পরিমাণ সবই থাকে পদ্মা, মেঘনা ও যমুনা এই তিন প্রতিষ্ঠানের দখলে। বিপিসি ও তেল কোম্পানিগুলোর মধ্যে চলে কাগুজে সম্পর্কে। আর এ সুযোগে সিন্ডিকেটের মাধ্যমে অপারেশন লস কিংবা বিভিন্ন অনিয়ম দেখিয়ে তেল চুরি হয় নিত্যদিনেই।
দুদকের অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, বিপিসি তেল আমদানি করে মাদার ভেসেলে করে চট্টগ্রামে আনে। বিদেশি কোম্পানিগুলো মাদার ভেসেলে জ্বালানি তেল সরবরাহ করার ক্ষেত্রে সবসময় এলসির পরিমাণ অপেক্ষা প্রায় কম-বেশ অনুসারে ০.০২ শতাংশ থেকে ০.০৩ শতাংশ তেল বেশি দিয়ে থাকে। যা ভেসেল অনুপাতে ৪০ থেকে প্রায় ১০০ টন পর্যন্ত বেশি তেল দেয়া হয়। কিন্তু বিপণনের দায়িত্বে থাকা এ তিন প্রতিষ্ঠান খালাসের সময় শুধুমাত্র এলসির পরিমাণ তেল খালাস দেখিয়ে বাকি বাড়তি তেলগুলো সরিয়ে নেন। মূলত তিনটি প্রতিষ্ঠান বছরে দুই মাস পরপর তেল খালাসের কাজে নিয়োজিত থাকে। অর্থাৎ তিন প্রতিষ্ঠান বছরে সময় পায় চার মাস করে। যাতে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারাই এমন কর্মকাণ্ডের সাথে জড়িত বলে অভিযোগ তোলা হয়।
বিপিসি ও দুদক সূত্রে জানা যায়, গত ৮ নভেম্বর বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশনের সচিব বরাবরে মেঘনা পেট্রোলিয়ামের ২০১৬-১৭ অর্থবছর থেকে ২০২০-২০২১ অর্থবছরের তেল আমদানি ও জাহাজ থেকে খালাস করাসহ প্রায় সাতটি বিষয়ের রেকর্ডপত্র চেয়ে চিঠি দেন অনুসন্ধান কর্মকর্তা প্রবীর কুমার দাস। এছাড়া আমদানি ও রিফাইনারি হতে ট্যাংকে তেল গ্রহণের পর ভোক্তা পর্যায়ে বিক্রয়ের ক্ষেত্রে কি পরিমাণ বা ধরণের অপারেশন লস বা গেইন হয়, তার বিবরণ ও ব্যাখাও চায় দুদক। একই ট্যাংক হতে কোস্টাল ট্যাংকারে বোঝাইকালে কি পরিমাণ বা ধরনের অপারেশনাল লস/গেইন হয় তার বিবরণ প্রদান করতে বলা হয়। এছাড়া বিপিসি হতে আমদানি পর্যায়ে জাহাজ হতে তেল খালাসের সময়, ট্যাংকে তেল লোডের সময়, পরিমাপের সময়, গাড়িতে তেল লোডের সময় কোন ধরণের লস বা গেইন (কনভার্সন) হয় কি-না তার বিবরণ। অর্থাৎ আমদানি জাহাজসমূহের স্বাভাবিক তাপমাত্রা কম বা বেশি গ্রহণে কোন লস বা গেইন হয় কিনা তার বিবরণ দাখিল করতেও বলা হয়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দুদকের এক কর্মকর্তা বলেন, বিপিসিসহ সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান ও অভিযুক্ত কর্মকর্তাদের বিষয়ে অনুসন্ধান চলমান রয়েছে। ইতোমধ্যে প্রতিষ্ঠানগুলোর পক্ষ থেকে যাবতীয় নথিপত্রও সংগ্রহ করা হয়েছে। ধাপে ধাপে অভিযুক্ত ব্যক্তিদের জিজ্ঞাসাবাদও করা হবে।

 

পূর্বকোণ/এসি

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট