চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

দিনেদুপুরে বাসায় ঢুকে ব্যবসায়ীর স্ত্রীকে খুন

রক্তাক্ত কোরবানিগঞ্জের আমিন বিল্ডিং

নিজস্ব প্রতিবেদক

১ মে, ২০১৯ | ২:৪৫ পূর্বাহ্ণ

দিনেদুপুরে বাসায় ঢুকে নগরীর কোরবানিগঞ্জে ব্যবসায়ীর স্ত্রীকে ছুরিকাঘাত করে খুন করেছে সোহেল নামে এক সন্ত্রাসী। এ সময় ব্যবসায়ীর কলেজ পড়–য়া ছেলেকেও ছুরিকাঘাত করেছে। তাকে বাঁচাতে গিয়ে প্রতিবেশী আরো এক ব্যক্তি ছুরিকাঘাতে আহত হয়েছেন। হত্যার ঘটনার পর নগদ টাকাভর্তি হাতব্যাগ নিয়ে পালিয়ে যাওয়া সোহেল স্থানীয় কাউন্সিলর হাজী নুরুল হকের ভাগিনা ও নিহত রোকসানার নিকটাত্মীয়। গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে এ নৃশংশ ঘটনাটি ঘটে।
মুমূর্ষু কলেজছাত্র আবদুল আজিজ ও প্রতিবেশী আবদুস সোবহানকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। খুনের শিকার গৃহবধূ রোকসানা বেগম (৪৫) ব্যবসায়ী আবুল কাশেম খাতুনগঞ্জের গম আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান এম এ কাশেম ট্রেডিংয়ের মালিক। তিনি কোরবানিগঞ্জের স্থানীয় বাসিন্দা। নগর পুলিশের দক্ষিণ জোনের অতিরিক্ত উপ-কমিশানর (এডিসি) শাহ মোহাম্মদ আবদুর রউফ জানান, আমাদের ধারণা খুনের অভিযুক্ত ব্যক্তি ঘটনার শিকার ব্যবসায়ীর পরিবারের ঘনিষ্ট এবং পূর্বপরিচিত। টাকা লুট করতে গিয়ে বাধা পাওয়ায় হয়তো খুনের ঘটনা ঘটিয়েছে। চেহারা চিনে ফেলায় ব্যবসায়ীর ছেলেকেও ছুরিকাঘাত করেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
নগরীর কোরবানিগঞ্জে আমিন বিল্ডিংয়ের পাঁচতলা ভবনের চারতলায় ভাড়া থাকতেন ব্যবসায়ী আবুল কাশেম। মঙ্গলবার ওই বাসাতেই খুন হন গৃহবধূ রোকসানা বেগম। আহত হয়েছেন তার কলেজ পড়–য়া ছেলে আব্দুল আজিজ (২১)। নিহত রোকসানার শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। মাকে খুন ও ছেলেকে আহত করে পালিয়ে যাওয়ার সময় ওই ব্যক্তির ছুরিকাঘাতে এক প্রতিবেশীও আহত হয়েছেন।
চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতাল পুলিশ ফাঁড়ির এএসআই আলাউদ্দিন তালুকদার জানান, আজিজ ও আবদুস সোবহান নামে দুইজনকে চমেক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এদের মধ্যে আজিজের অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে জানিয়েছেন কর্তব্যরত চিকিৎসক।
হত্যাকা-ের পর বাসাটিতে থানা পুলিশ ছাড়াও গোয়েন্দা, সিআইডি ও পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) সদস্য বিভিন্ন আলামত সংগ্রহ করে।
নিহত রোকসানার বড় ছেলে মোহাম্মদ তারেক জানান, বাসায় তারা দুই ভাই ও বাবা-মা থাকতেন। তিনি জানান, তার বাবা আবুল কাশেমের গমের ব্যবসা করেন। সকাল ১১টার দিকে আমি বাবার সাথে অফিসে চলে যাই। ছোট ভাই বাসার বাইরে এবং মা ওই সময় বাসায় একা ছিলেন। দুপুর দুইটার দিকে প্রতিবেশীর কাছ থেকে খবর পেয়ে বাসায় আসি। কয়দিন আগে খাতুনগঞ্জে বেশ কিছু জমি বিক্রি করেছেন বাবা। জমি বিক্রির টাকা ছিল বাসায়।
কোতোয়ালি থানার পরিদর্শক (ওসি) মোহাম্মদ মহসিন জানান, “ প্রাথমিকভাবে মনে হচ্ছে পূর্ব পরিচিত ব্যক্তির হাতেই খুন হয় এ গৃহবধূ। বাসার আলমারি ও বিভিন্ন জিনিসপত্র এলোমেলো অবস্থায় পড়ে আছে। আমাদের ধারণা একজন ব্যক্তিই এ খুনের সাথে জড়িত।”
ব্যবসায়ী কাশেমের বাসায় বুয়ার কাজ করেন ইয়াসমিন। তিনি বলেন, সকাল সোয়া ১১টার দিকে আমি বাসায় আসি কাজ করতে। কাজ শেষে ওপরের তলার (পঞ্চম তলা) বাসায় যাওয়ার সময় খালাকে বেতনের কথা বলি। তিনি উপরের বাসার কাজ শেষ করে যাওয়ার সময় বেতন নিয়ে যেতে বলেছিলেন। তিনি বলেন, ওপরের তলার বাসার কাজ শেষ করে এ বাসায় ঢুকে দেখি কালো গেঞ্জি ও প্যান্ট পড়া, দাড়িওয়ালা এক লোক রক্তমাখা ছুরি হাতে আমাকে ধরে ফেলে। আমি ভয়ে নিজেকে বাসার কাজের বুয়া পরিচয় দিয়ে তার পা ধরে ফেলি এবং দৌড়ে বাথরুমে ঢুকে দরজা বন্ধ করে দেয়ার চেষ্টা করলে সে আমাকে চট্টগ্রামের আঞ্চলিক ভাষায় গালি দিয়ে নিচে বসিয়ে রাখে।
ইয়াসমিন বলেন, এক পর্যায়ে লোকটি বিছানায় আগুন লাগিয়ে দিলে পুরো ঘরে ধোঁয়ার সৃষ্টি হয়। এসময় আজিজ বাইরে থেকে বাসায় ঢোকার সাথে সাথে পেছন থেকে তাকে ছুরিকাঘাত করে ওই লোক। ভাইয়াকে (আজিজ) ও আমাকে টেনে বেড রুমে ঢুকিয়ে দিয়ে আঞ্চলিক ভাষায় তিনজনকে পুড়িয়ে মরার কথা বলে এবং রান্না ঘরে গিয়ে কিছু কাপড় ও তুলায় আগুন লাগিয়ে দেয়।” এসময় আজিজ পানি খাওয়ার কথা বলে দৌড়ে বাসা থেকে বের হয়ে গেলে ওই লোকও তার পেছনে দৌড়ে বের হয়ে যায় এবং আমিও বের হয়ে দ্বিতীয় তলায় বাড়িওয়ালার বাসায় খবর দিই। হত্যাকা-ে জড়িত লোকটি পাঁচতলায় যে বাসাটিতে ইয়াসমিন কাজ করেন সেই বাসায় গিয়েও কলিং বেল চেপেছিলেন এবং দরজা খোলার পর ‘বাসা এটা না’ বলে নিচে নেমে যান বলেও জানিয়েছেন ইয়াসমিন।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, পাঁচ তলা ওই ভবনে মোট নয়টি বাসা। দ্বিতীয় ও তৃতীয় তলায় বাড়িওয়ালা থাকেন। চারতলায় রোকসানার প্রতিবেশী ভাড়াটিয়া আইনজীবী মোহাম্মদ হোসেন এমদাদ থাকেন। এমদাদের স্ত্রী শাহনাজ হোসেন বলেন, মেয়েকে নিচে পাঠিয়ে আমি দরজায় দাঁড়ানো ছিলাম। এসময় উপরের তলা থেকে প্যান্ট ও কালো গেঞ্জি পড়া দাড়িওয়ালা লোকটি নেমে আমাকে জিজ্ঞাস করে ‘কাশেম ভাইর বাসা কোনটা?’ “আমি ইশারায় বাসাটি দেখিয়ে দিলে লোকটি দরজার কড়া নাড়ায়। এসময় ভেতর থেকে দরজা খুলে দেয়া হয় এবং নিহত রোকসানা ‘ম অনে এতদিন পরে’ (মামা এতদিন পর) বলতে শুনেছি। তখন আমি বাসার দরজা বন্ধ করে দিই।” ওই লোক প্রবেশের আরও বেশ কিছুক্ষণ পর ওই বাসায় ঢুকে দেখি অনেক ধোঁয়া। রান্না ঘরেও আগুন ছিল এবং গ্যাসের চুলার চাবিও অন ছিল।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট