চট্টগ্রাম শনিবার, ২৭ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

বিএমডব্লিউ জিপ আমদানি

পিবিআই চিহ্নিত করেছে সেই আমদানিকারক শহিদুরকে

নাজিম মুহাম্মদ

১৯ অক্টোবর, ২০২১ | ১২:৩৪ অপরাহ্ণ

মিথ্যা ঘোষণা দিয়ে একটি বিএমডব্লিউ জিপ আমাদানি হয় ২০১২ সালে। এ ব্যাপারে থানায় মামলা হয়। কিন্তু জিপটির আমদানিকারক খুঁজতে সময় লেগেছে প্রায় নয় বছর। থানা পুলিশ, সিআইডি, র‌্যাব জিপটি আমদানিকারক শহিদুর রহমানকে শনাক্ত করতে না পারলেও পিবিআই’র তদন্তে উঠে এসেছে তার (শহিদুর) পরিচয়। মামলাটি তদন্ত করেছেন ছয়জন তদন্ত কর্মকর্তা।
ঘটনার শুরু : ২০১২ সালের ২৩ ডিসেম্বর বন্দর থানায় মামলা দায়ের করেন চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা সাজিব বিকাশ বড়ুয়া। মামলার এজাহারে তিনি বলেন, ঢাকার বনানীর ২৩ নম্বর রোডের বি-ব্লকের জনৈক শহিদুর রহমান যুক্তরাজ্য থেকে একটি রিকন্ডিশন বিএমডব্লিউ জিপ ও একটি ৪০ ইঞ্চি এলসিডি টেলিভিশন আমদানি করেন। যার আমদানি শুল্কের পরিমাণ ৫ কোটি ৯৪ লাখ ৮ হাজার ১’শ ৪৯ টাকা। কিন্তু আমদানিকারক ও তার মনোনীত সিএন্ডএফ এজেন্ট জুবলি রোডের মেসার্স এইচ কে ইন্টারন্যাশনাল রাজস্ব ফাঁকি দিতে বিএমডব্লিউ’র পরিবর্তে একটি টয়োটা প্রাডো জিড ঘোষণা দিয়ে বিল অব এন্ট্রি দাখিল করেন ২০১১ সালের ২ অক্টোবর। সংশ্লিষ্ট সিএন্ডএফ এজেন্ট কাস্টমসে যেসব কাগজপত্র জমা দিয়েছেন সবই ভুঁয়া। মামলাটি প্রথম তদন্ত করেন বন্দর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) রনোজিত রায়। তবে বিষয়টি সিআইডির তফশিলভুক্ত হওয়ায় ২০১৩ সালে ৭ এপ্রিল মামলাটি তদন্তের দায়িত্বভার দেয়া হয় সিআইডির চট্টগ্রাম অফিসের পরিদর্শক মিতশ্রী বড়ুয়াকে।
সিআইডির তদন্ত : পাঁচ বছর তদন্ত শেষে ২০১৭ সালের ৭ জুন আদালেত তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন সিআইডি। প্রতিবেদনে সিএন্ডএফ এজেন্ট এইচকে ইন্টারন্যাশনালের স্বত্বাধিকারী লক্ষীপুরের দত্তপাড়ার মৃত আবদুল্যা মিয়ার ছেলে কামরুল হাসানকে (৪৮) অভিযুক্ত করেন সিআইডি। খুঁজে না পাওয়ায় কথা জানিয়ে আমদানিকারক শহিদুর রহমানকে তদন্ত প্রতিবেদন থেকে বাদ দেন। তদন্ত প্রতিবেদনে সিআইডি বলেন, বিএমডব্লিউ জিপটি বন্দর থেকে ছাড় করতে কাস্টমসের কাছে সিএন্ডএফ এজেন্ট যেসব কাগজপত্র জমা দিয়েছে তার সবই ভুঁয়া। আমদানিকারক শহিদুর রহমানের ঠিকানাও ভুঁয়া। শুল্কায়ন প্রক্রিয়ার কাগজপত্র পর্যালোচনা করে দেখা যায়, চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের কর্মকর্তারা এ ঘটনার সাথে জড়িত নয়। তবে গাড়ি ছাড় করতে তৈরি করা শুল্কায়নের জাল কাগজগুলো কখন কে উদ্ধার করেছিলো কিংবা কাস্টমসের ফাইলে প্রবেশ করেছিলো সে সম্পর্কে তথ্য পাওয়া যায়নি। শহিদুর রহমান আমদানিকারক নয়। সিএন্ডএফ এজেন্ট ইচ্ছে করে এ নামটি ব্যবহার করেছে।
শুধুমাত্র নাম ঠিকানা খুঁজে না পাওয়ার কথা জানিয়ে আমদানিকারক শহিদুর রহমানকে মামলার দায় হতে অব্যাহতি প্রদানের বিষয়টি সমীচিন নয় মনে করে র‌্যাবের একজন এএসপি পদমর্যদার কর্মকর্তাকে দিয়ে মামলাটি অধিকতর তদন্তের জন্য ২০১৭ সালের ২৮ আগস্ট আদেশ দেন বিজ্ঞ আদালত।
র‌্যাবের তদন্ত : ২০১৭ সালের ১৯ নভেম্বর সিএন্ডএফ এজেন্ট এইচ কে ইন্টারন্যাশনালের স্বত্বাধিকারী কামরুল হাসানকে গ্রেপ্তার করে র‌্যাব। কামরুল আদালতে দেয়া জবানবন্দিতে জানান, সিএন্ডএফ এজেন্টটি তার বড় ভাই সিরাজুর রহমানের নামে ছিল। ভগ্নিপতি মোহাম্মদ হোসেন সেটি পরিচালনা করতো। ২০১১ সালে তাদের ফার্মের নামে কে বা কারা মিথ্যা ঘোষণা দিয়ে বিএমডব্লিউ জিপটি এনেছে তা জানে না। তবে তার ভাগিনা ফারুক হোসেনকে ও জেটি সরকারকে তাদের সন্দেহ হয়। ২০১৮ সালের ৬ মার্চ ফারুক হোসেনকেও গ্রেপ্তার করে র‌্যাব।
আমাদানিকারক শহিদুর রহমানের ঢাকার প্রকৃত নাম ঠিকানা সংগ্রহ করা সম্ভব না হওয়ায় এবং ঘটনার সাথে ফারুক হোসেনের জড়িত থাকার কোন প্রমাণ না পাওয়ার কথা জানিয়ে প্রায় দুই বছর তদন্ত শেষে দুইজনকে চার্জশিট থেকে বাদ দিয়ে ২০১৯ সালের ২১ জুলাই আদালতে সম্পূরক চার্জশিট দাখিল করেন তদন্ত কর্মকর্তা র‌্যাবের সহকারী পরিচালক এএসপি খাইরুল ইসলাম।
ন্যায় বিচারের স্বার্থে আমদানিকারক শহিদুর রহমানকে খুঁজে বের করে আইনের আওতায় আনা জরুরি এমনটি জানিয়ে, পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই) মামলাটি পুনরায় অধিকতর তদন্তের জন্য আদেশ দেন বিজ্ঞ আদালত। ২০১৯ সালের ১৭ অক্টোবর মামলাটির তদন্তের দায়িত্ব নেন পিবিআই। সিআইডি ও র‌্যাব শহিদুর রহমানকে চিহ্নিত করতে না পারলেও পিবিআইয়ের তদন্তে উঠে এসেছে বিএমডব্লিউ আমদানিকারক শহিদুর রহমানের বিস্তারিত পরিচয়।
পিবিআই’র চট্টগ্রাম মেট্টো অঞ্চলের পুলিশ সুপার নাঈমা সুলতানা জানান, তদন্তে আমরা শহিদুর রহমানের বিস্তারিত পরিচয় পেয়েছি। তিনি যুক্তরাজ্যের নাগরিক। ৪০ বছরের অধিক সময় ধরে তিনি পরিবারসহ লন্ডনে থাকেন। তার নিজ বাড়ি সিলেটের গোপালগঞ্জ থানার কালিদাস পাড়ায়। তার বাবার নাম মৃত আইয়ুব আলি। সিলেটের শাহ পরাণ থানার ২৯ নম্বর রোডের ৫/এ বাড়িটি তার বাবা আইয়ুবের নামে। শহিদুর ঢাকার বনানীর ঠিকানা ব্যবহার করে যুক্তরাজ্য থেকে নিজের নামে বিএমডব্লিউ জিপটি আমদানি করেন। তিনিই যুক্তরাজ্য থেকে জিপটি পাঠিয়েছেন। আমরা শীঘ্রই মামলাটির তদন্ত প্রতিবেদন আদালতে দাখিল করবো।

 

পূর্বকোণ/এসি

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট