চট্টগ্রাম শুক্রবার, ০৩ মে, ২০২৪

সর্বশেষ:

মন্তব্য প্রতিবেদন

উন্নয়নের শেষ বলি হোক সাদিয়া

ডা. ম. রমিজউদ্দিন চৌধুরী

৩০ সেপ্টেম্বর, ২০২১ | ৫:০৫ পূর্বাহ্ণ

মাত্র এক মাস আগে নগরীর মুরাদপুরে নালায় পড়ে চিরতরে হারিয়ে যাওয়া সবজি বিক্রেতা ছালেহ আহমদের শোক কাটিয়ে উঠতে না উঠতেই আরেকটি মর্মান্তিক মৃত্যুর ঘটনা গোটা দেশবাসীকে হতবাক করেছে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের অবহেলায় খোলা নালায় পড়ে সেহেরীন মাহবুব সাদিয়া নামের তরুণ শিক্ষার্থীর এমন অসহায় মৃত্যু কোনভাবেই মানতে পারছেন না কেউই।

ছালেহ আহমেদ আর সাদিয়াই নয়, এর আগেও প্রায় একই কারণে আরও কয়েকটি তাজা প্রাণ যাওয়ার পরও এমন গুরুতর একটি সমস্যাকে আমলে না নেয়ার খেসারত নগরবাসীকে গুনতে হচ্ছে। অথচ সমস্যাটি সমাধানযোগ্য। আরেকটু পরিষ্কার করে বললে বলতে হয়, প্রতিকারযোগ্য।

দীর্ঘ সময়ের উন্নয়ন বন্ধ্যাত্বের পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আন্তরিক সদিচ্ছায় চট্টগ্রাম নগরীতে গত কয়েক বছর ধরে উন্নয়ন কর্মকান্ডে এক ধরনের জোয়ার বইছে। কিন্তু আমরা লক্ষ্য করেছি, যারা এসব কর্মযজ্ঞের সঙ্গে সম্পৃক্ত, উন্নয়ন কাজের সময় নগরবাসীর কি কি সমস্যা হতে পারে তা বিবেচনায় না নিয়েই তারা কাজগুলো করে যাচ্ছেন। চট্টগ্রামে বড় পরিসরের উন্নয়ন কাজের প্রথম বলি হয়েছিল বহদ্দারহাটে ফ্লাইওভারের গার্ডার পড়ে। সেই ঘটনার পর আশা করা হয়েছিল, প্রত্যেকটি উন্নয়ন কাজের সময় নাগরিক নিরাপত্তার ও অসুবিধার বিষয়টি অগ্রাধিকার বিবেচনা করা হবে। কিন্তু আমরা দেখলাম, সেই আশায় গুঁড়েবালি।

২০১২ সালে বহদ্দারহাট ট্র্যাজিডি থেকে নাগরিকের প্রতি কর্তৃপক্ষের উদাসীনতা প্রদর্শন সেই যে শুরু হয়েছে তা ৯ বছর পরও অব্যাহত আছে। রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ির কারণে খাদে গাড়ি পড়ে মানুষ মরেছে। পানিতে তলিয়ে যাওয়া রাস্তায় বড় বড় খানাখন্দে কাভার্ডভ্যান- লরি চলাচলের সময় পাশের গাড়ির উপর কাত হয়ে পড়ে মানুষ মারা গেছে এই নগরীতেই। তবুও উন্নয়ন কাজের সঙ্গে সম্পৃক্ত কর্তৃপক্ষ বা নির্মাণকারী সংস্থার টনক নড়েনি। তারা ন্যূনতম নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা না নিয়ে নিজের মতো করে কাজ চালিয়ে গেছেন। নাগরিকদের সুবিধা-অসুবিধার তোয়াক্কা না করে মর্জিমাফিক উন্নয়ন কাজ চালিয়ে যাওয়ায় এখনও নগরবাসীকে তার খেসারত দিতে হচ্ছে। এলিভেটেড এক্সপ্রেসের কাজের জন্য রাস্তায় রাস্তায় অসংখ্য খানাখন্দ। যানবাহন আর পায়ে হেঁটে মানুষের চলাচল করা রীতিমতো দায় হয়ে পড়েছে। কিন্তু বিকল্প কোন ব্যবস্থা কিংবা দুর্গতি সহনীয় পর্যায়ে রাখার কোন ব্যবস্থা করা হয়নি। উন্নয়ন কাজের জন্য ভোগান্তি হবে- এমন বক্তব্য দিয়েই দায় সারতে দেখা গেছে সংশ্লিষ্টদের। যে কারণে দুর্ভোগ আর দুঃখজনক নিয়তি পিছু ছাড়েনি নগরবাসীর।

নগরীতে যে পরিমাণ মানুষ যানবাহনে চড়েন প্রায় সমপরিমাণ মানুষ ফুটপাত কিংবা রাস্তার ধার দিয়ে পায়ে হেঁটে গন্তব্যে যান। এসব মানুষ যাতে নির্বিঘ্নে নিরাপদে চলাচল করতে পারে, সেটি দেখার দায়িত্ব যাদের তারা যে অর্পিত দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করছে না, ছালে আহমদ-সাদিয়াদের দুর্ভাগ্যজনক নিয়তি সেই সত্যিটিই বলে দিচ্ছে।

প্রায়ই দেখি, অনাকাঙ্ক্ষিত কোন দুর্ঘটনা ঘটলে সেই দায়ভার কেউ নিতে চান না। একে অপরকে দোষারোপ করার সেই পুরনো কৌশল নেন। নাগরিকদের প্রতি যদি ন্যূনতম দায়ও কেউ বোধ করেন তাহলে সেই জনপ্রতিনিধি কিংবা কর্তৃপক্ষের উচিত সত্যটি মেনে নেয়া এবং সমস্যার সুরাহা করা। যদি সমন্বিত উদ্যোগ নেয়ার প্রয়োজন হয় সেটি করতেও কার্পণ্য করা ঠিক নয়।

প্রধানমন্ত্রীর আন্তরিকতায় চট্টগ্রামে উন্নয়নের যে মহাযজ্ঞ চলছে সেটিকে প্রশ্নবিদ্ধ করার উদ্দেশ্যে অবহেলাগুলো করা হচ্ছে কিনা, এমন কথাও কেউ কেউ বলছেন। উন্নয়ন কাজের সময় ধুলোবালিতে পরিবেশ দূষণ হয় কিনা, খানাখন্দে যানবাহন ও জন চলাচলে সমস্যা হয় কিনা- এসব বিষয়ে গুরুত্ব দিয়ে এবং দুর্ভোগের মাত্রা সহনীয় রেখে ও নিরাপদ ব্যবস্থা নিশ্চিত করেই আগামীতে কাজ অব্যাহত রাখতে হবে।

এক কথায় সাদিয়ার অনাকাঙ্ক্ষিত মৃত্যুই যেনো উন্নয়নের শেষ বলি হয়, নগরবাসী সেই নিশ্চয়তাই চান।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট