চট্টগ্রাম বৃহষ্পতিবার, ০২ মে, ২০২৪

সর্বশেষ:

জেলা কর্মসংস্থান ও জনশক্তি অফিস : ছোট সেবা পেতে বড় হয়রানি!

মোহাম্মদ আলী

২৮ সেপ্টেম্বর, ২০২১ | ১২:৩১ অপরাহ্ণ

পৃথিবীর ১৭৩টি দেশে চট্টগ্রামের ১৫ লক্ষাধিক প্রবাসী থাকলেও উপেক্ষিত থেকেছে জেলা কর্মসংস্থান ও জনশক্তি অফিসের সেবার পরিধি। স্বাধীনতার পর ৪৭ বছরেও বৃদ্ধি করা হয়নি অফিসের কার্যক্ষমতা। সব ধরনের কাজ চট্টগ্রাম অফিসে করা যায় না, যেতে হয় ঢাকায়।
চট্টগ্রাম জেলা কর্মসংস্থান ও জনশক্তি অফিসের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি না করায় সকল প্রবাসীর স্মার্টকার্ড মিলে না। নির্ধারিত ৭টি দেশ ছাড়া অবশিষ্ট প্রবাসীদের ছুটতে হয় ঢাকায়। মৃত প্রবাসীদের ক্ষতিপূরণ আদায়ে চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য ফাইলপত্র প্রেরণ করতে হয় ঢাকায়। তাতে লেগেই থাকে দীর্ঘসূত্রতা। অভিযোগ রয়েছে, চট্টগ্রাম জেলা কর্মসংস্থান ও জনশক্তি অফিস প্রধানের পদমর্যাদা অন্যান্য মন্ত্রণালয়ের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ নয়। পদ আপগ্রেড হলে ঢাকা থেকে বদলি হওয়ার শঙ্কায় পদটির মান বাড়ানো হয়নি। বর্তমানে উপ-পরিচালক পদবির একজন অফিসের যাবতীয় কার্যক্রম পরিচালনা করছেন। এদিকে প্রবাসী সংখ্যা ক্রমাগত বৃদ্ধির কারণে নানা সীমাবদ্ধতার মধ্যেও চট্টগ্রাম জেলা কর্মসংস্থান ও জনশক্তি অফিসে বেড়েছে কর্মযজ্ঞ। চাহিদার অর্ধেকের কম লোকবল দিয়ে প্রতিদিনের দাপ্তরিক কার্যক্রম চলছে।

চট্টগ্রাম জেলা অফিসে ২৩টি পদের বিপরীতে লোকবল রয়েছে মাত্র ১০ জন। ওয়েজ আর্নার কল্যাণ বোর্ড থেকে ডেপুটেশনে এবং আউট সোর্সিংয়ে লোক নিয়ে চলছে অফিসের কার্যক্রম। একই লোকবল দিয়ে চট্টগ্রাম শাহ আমানত বিমান বন্দরে প্রবাসী কল্যাণ ডেস্কেও কর্মকাণ্ড চালানো হচ্ছে। সূত্র জানায়, চট্টগ্রাম জেলা কর্মসংস্থান ও জনশক্তি অফিস চালু হওয়ার আগে ১৯৪৪ সালে এমপ্লয়মেন্ট সার্ভিসেস অফিস প্রতিষ্ঠিত হয়। দ্বিতীয় বিশ^যুদ্ধে যেসব সৈনিকের অঙ্গহানি এবং মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়েছিল মূলত তাদের পুনর্বাসনের জন্য এ অফিসটি চালু করা হয়। এরপর ১৯৪৮ সালে নতুন করে এ অফিসের নামকরণ হয়- ‘চাকরি বিনিয়োগ কেন্দ্র’। এ অফিসের প্রধান কাজ ছিল শিক্ষিত জনগোষ্ঠীকে চাকরিতে পুনর্বাসন করা।

চাকরিপ্রার্থীরা এ অফিসে দুই টাকা ফি দিয়ে নিবন্ধন করে একটি কার্ড সংগ্রহ করতেন। ওইসময়ে চাকরির জন্য পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দেওয়ার রেওয়াজ ছিল না। তাই চাকরি প্রার্থীরা ওই অফিসে এসে নিবন্ধন করতেন। চাকরিদাতা সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান নিজেদের লোকবলের চাহিদা জানিয়ে ‘চাকরি বিনিয়োগ কেন্দ্রে’ চিঠি পাঠাতেন। চিঠি পাওয়ার পর চাকরি বিনিয়োগ কেন্দ্র থেকে চাকরি প্রার্থীর তালিকা পাঠানো হতো। এরপর তালিকা থেকে বাছাই করে পরীক্ষার মাধ্যমে সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো লোকবল নিয়োগ দেওয়া হতো। ১৯৮৫ সালে ‘চাকরি বিনিয়োগ কেন্দ্রে’ এর নাম পরিবর্তন করা হয়। পুনর্গঠন ও সুসংগঠিত করে নতুন নামকরণ হয়- ‘চট্টগ্রাম জেলা কর্মসংস্থান ও জনশক্তি অফিস’। এর আগে ১৯৭৫ সালে ‘চাকরি বিনিয়োগ কেন্দ্র’ কার্যালয়ের মাধ্যমে চট্টগ্রাম থেকে প্রথম জনশক্তি রপ্তানি শুরু হয়। ওই বছরে সংযুক্ত আরব আমিরাত ও কুয়েতে দুই দফায় জনশক্তি রপ্তানি হয় ২৭৯ জন। ১৯৭৬ সালে সৌদি আরবে ৪০০ জন এবং ১৯৭৭ সালে কুয়েতে যান ১২০০ জন।
সূত্র জানায়, ২০০৫ সাল থেকে এ পর্যন্ত চট্টগ্রাম থেকে জনশক্তি রপ্তানি হয় ৭ লাখ ১১ হাজার ২০৭ জন। এর আগে ১৯৭৫ সাল থেকে ২০০৪ সাল পর্যন্ত প্রায় ৮ লাখ জনশক্তি রপ্তানি হয়েছে। সব মিলে গত ৪৭ বছরে চট্টগ্রাম থেকে বিদেশে গেছে ১৫ লাখের বেশি জনশক্তি। ২০১৬ সালের ৩১ জুলাই চট্টগ্রাম থেকে বিদেশগামীদের বহির্গমন ছাড়পত্র দেওয়ার কার্যক্রম আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হলেও তা ৭টি দেশের মধ্যে সীমাবদ্ধ রয়ে গেছে। দেশগুলো হচ্ছে- সৌদি আরব, বাহরাইন, হংকং, সংযুক্ত আরব আমিরাত, ওমান, কাতার ও সিঙ্গাপুর। কিন্তু গত ৫ বছরে নতুন কোন দেশকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। এ অবস্থায় অন্যান্য দেশের প্রবাসীদের বহির্গমন ছাড়পত্রের জন্য ঢাকায় ছুটতে হয়। অথচ চট্টগ্রাম জেলা কর্মসংস্থান ও জনশক্তি অফিসে অপ্রচলিত দেশসমূহে কাজের জন্য বিদেশে যাওয়ার আগে প্রবাসীদের নিবন্ধন ও আঙ্গুলের ছাপের (ফিঙ্গার ইমপ্রেশন) নেওয়া হয়। এরপর বহির্গমন ছাড়পত্র ও স্মার্টকার্ড নিতে ঢাকায় যেতে হয়। এতে সময় ও অর্থের অপচয়ের পাশাপাশি ভোগান্তিরও শিকার হন প্রবাসীরা।
চট্টগ্রাম জেলা কর্মসংস্থান ও জনশক্তি অফিসের উপ-পরিচালক মোহাম্মদ জহিরুল আলম মজুমদার দৈনিক পূর্বকোণকে বলেন, ‘চট্টগ্রাম জেলা কর্মসংস্থান ও জনশক্তি অফিসের কার্যক্রম আরো জোরদারকরণের জন্য উপজেলা পর্যায়ে কর্মসংস্থান ও জনশক্তি অফিস স্থাপন এখন সময়ের দাবি। তাছাড়া চট্টগ্রামের এ অফিসে ৭টি দেশ ছাড়াও পর্যায়ক্রমে আরো দেশ বৃদ্ধি করে প্রবাসীদের স্মার্টকার্ড প্রদানের মন্ত্রণালয় থেকে অনুমতিসহ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করলে এখানকার প্রবাসীরা আরো উপকৃত হবেন।’

 

পূর্বকোণ/এসি

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট