চট্টগ্রাম মঙ্গলবার, ১৯ মার্চ, ২০২৪

চট্টলদরদীর প্রতি শ্রদ্ধা ও হৃদয় উৎসারিত ভালবাসা

ডা. মোহাম্মদ ওমর ফারুক

২০ সেপ্টেম্বর, ২০২১ | ২:৪৩ অপরাহ্ণ

১৯৮৬ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি অর্ডিনারি প্রেস মেটার দিয়ে যে কাগজটির যাত্রা শুরু হয়েছিল জুবিলী রোডস্থ চিলেকোঠার ঘর থেকে সেটি আজ বিশাল বটবৃক্ষে পরিণত হয়ে দেশের সেরা আঞ্চলিক দৈনিক হিসাবে স্বীকৃতিপ্রাপ্ত হয়েছে এটা অত্যন্ত গর্বের, গভীরতম সুখের আর বেদনাময় কষ্টের। আমার প্রাণের স্পন্দন এই পূর্বকোণে, পূর্বকোণের মাটি ও মানুষের সাথে আমার নিবিড় সম্পর্ক।

প্রতিষ্ঠার দিন থেকেই নির্লোভ এক কর্মক্ষম মানুষ ইউসুফ চৌধুরী, যিনি কষ্টের পর কষ্টের পথ মাড়িয়ে কাগজটি ছাপানোর স্বপ্ন বুনেছিলেন সেটি ছিল যেন তাঁর দুরন্ত অভিযাত্রা। কণ্টকাকীর্ণ পথকে অবলম্বন করে দুঃসাহসের চূড়ায় উঠা চাট্টিখানি কথা নয়। সে স্বপ্নবিলাস ছুঁয়ে সামুদ্রিক বিশালতার সেই মানুষটি হারিয়ে গেলেন গভীর অরণ্যে আমরা আর কোনদিন তাঁকে খুঁজে পাব না। খুঁজে পাই তাঁর কাগজ প্রতিদিন সকালে। তিনি চলে গেলেন জ্যোৎস্ন ময় রোদ্দুরের দেশে স্বপ্নের অভিযাত্রী হয়ে। তাঁর নেক আমলগুলো কঠিন দিনে যেন নাজাতের উছিলা হয় সেটিই হোক সর্বোৎকৃষ্ট নোনাজারি মহান আরশের মালিকের কাছে।

সবেমাত্র মেডিকেলের ধূসর মাটিতে পা রেখেছি প্রথম বর্ষের কয়েক মাস ক্লাস হয়েছে। ৮৫-৮৬ বর্ষের ছাত্র, অবিনাশী মনন ও চেতনায় ভরপুর সারাবেলা। কাব্যিক চেতনায় হুল্লোড় ত্রৈমাত্রিক ভালবাসায় আর এতেই জুড়িয়ে যায় আজন্ম স্বরবর্ণের মেঘালয়। সংবাদপত্রের প্রতি তীক্ষè দর্শন আরো একধাপ যেন বাড়িয়ে দেয়, তাই ছুটে চললাম খয়েরি রঙের চটের ব্যাগ কাঁধে ঝুলিয়ে সেই চিলেকোঠার ঘর পানে। পেয়ে গেলাম সুন্দর অবয়বের সেই সুন্দর মানুষটিকে। কোন শিরোনাম ছাড়াই পরিচিত হলাম অতি সন্তর্পণে। শ্রদ্ধায় ভরে গেল প্রিয় চাচা ইউসুফ চৌধুরীকে দেখে। বিবর্ণ ভালবাসায় অভিষিক্ত হলাম নিজেই। পরিচয় দেওয়ার পর কাগজটির পূর্বকোণ প্রতিবেদক হওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করলাম। কোন শর্ত ছাড়াই আমাকে কাজ করার দায়িত্ব অর্পণ করলেন নিমিষেই। আত্মহারা হই গভীরভাবে- গৌরববোধ করি নিজেকে। মেডিকেলের বিভিন্ন এক্সক্লুসিভ সংবাদগুলো নিয়মিত পরিবেশন করতে থাকি সেই প্রেস মেটারের ধূসর কাগজটিতে। তখন ছিল না প্রযুক্তির ক্যারিশমা।

শহর এলাকার বাসে চড়ে ঠায় দাঁড়িয়ে থেকে আট আনা পয়সায় নেমে যেতাম পত্রিকাটির খুব কাছাকাছি। এমনও দিন গিয়েছে ৪/৫টি সংবাদও এসেছে পূর্বকোণ প্রতিবেদকের। উৎসবে শিহরিত হই, আনন্দে বিগলিত হই- পরিতৃপ্ত হই অনন্য। সেই পত্রিকাটির সাথে অনুরাগ-বিরাগ ভোলার নয়। অতি আপন করে নিয়েছি এই পত্রিকাটিকে। অন্তত ৪র্থ বর্ষ পর্যন্ত মেডিকেল প্রতিবেদকের দায়িত্ব পালন করেছি। এভাবেই প্রিয় চাচার সাথে হৃদয়ের গভীরতা আরো বেড়ে যায়। মাঝে মাঝে খুনসুঁটি করতাম তাঁর সাথে, হাসতেন মৃদুভাবে। যেন পৃথিবীর সমস্ত মুক্তার জলোচ্ছ্বাস তাঁর চোখেমুখে। পূর্বকোণ কর্মীদের সাথে সম্পর্ক হয়ে গেল অত্যন্ত নিবিড়। এখনো কেন যেন সেই পত্রিকাটির সাথে সম্পর্কের ছেদ এতটুকু ঘটেনি, বরং গভীরতম দেয়ালে যেন আটকে যায়। এখন অবশ্য মেডিকেল প্রতিবেদক নয়, টুকটাক কিছু লেখার চেষ্টা করি। যেন কাগজের সাথে সম্পর্কের ইতি না ঘটে। পূর্বকোণ সাংবাদিকদের একটি বিরাট অংশের সাথে এখনো আমার যোগাযোগ আছে। বিভিন্ন মেডিকেল বিষয়ে তারা সুপরামর্শ চান। আমিও চেষ্টা করি- যথাসাধ্য উপায়ে।

আজ প্রিয় চাচা নেই। এর পরের সম্পাদক তাঁর প্রিয় বড় পুত্র তসলিম ভাইও চলে গেছেন মহান আল্লাহর সান্নিধ্যে। চাচার মেঝ ও ছোট সন্তান আগলে ধরে রেখেছেন চট্টলার ঐতিহ্যের ধারক-বাহক পত্রিকাটিকে। চাচা ইউসুফ চৌধুরীর হাত ধরে উঠে আসা পত্রিকাটি আজ দেশসেরা আঞ্চলিক দৈনিকের সম্মানে ভূষিত হয়েছে এটা ভেবে যেন আলোড়িত হই অতীত ক্ষণের মূর্চ্ছনায়। গর্বিত হই প্রাক্তন মেডিকেল প্রতিবেদক হিসাবে। আমি বড় কৃতজ্ঞ জসিম উদ্দিন চৌধুরী ও ডাক্তার ম. রমিজউদ্দিন চৌধুরীর কাছে, তাদের অনবদ্য সহযোগিতার জন্য। পত্রিকাটির গেটআপ, ট্রিটমেন্ট অনুকরণযোগ্য। এটির অগ্রযাত্রা দিন দিন দীপ্ত হোক তা-ই প্রত্যাশা।

নিরপেক্ষ সংবাদের নীতি অনুসরণ করার মধ্যেই নিহিত রয়েছে সংবাদপত্রের গ্রহণযোগ্যতা এই আদর্শকে লালন করে চলছে পূর্বকোণ পরিবার। এ ধারা যেন অব্যাহত থাকে প্রতি মুহূর্তে, প্রতিটি ক্ষণে।

লেখক: সিনিয়র কনসালটেন্ট (ইএনটি) রাঙামাটি জেনারেল হাসপাতাল এবং সভাপতি, রাউজান ক্লাব

পূর্বকোণ/এএ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট