চট্টগ্রাম শনিবার, ২৭ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

আলহাজ মোহাম্মদ ইউসুফ চৌধুরী

চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বপ্নদ্রষ্টা

আবদুল করিম

১৯ সেপ্টেম্বর, ২০২১ | ৭:৩৩ পূর্বাহ্ণ

সচিব হিসেবে আমার প্রথম মন্ত্রণালয় ছিল মৎস্য ও পশুসম্পদ (বর্তমানে প্রাণিসম্পদ) মন্ত্রণালয়। চট্টগ্রামে প্রথম দাপ্তরিক সফরেই আমার সাথে সার্কিট হাউসে সাক্ষাৎ করেন চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি বিশ্ববিদ্যালয় বাস্তবায়ন কমিটির আহ্বায়ক মোহাম্মদ ইউসুফ চৌধুরী এবং সাধারণ সম্পাদক শাহেদুল আলম কাদেরী। তাঁরা দুজনই আজ জান্নাতবাসী। চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয়ে উন্নীতকরণের জন্য মুরুব্বি ইউসুফ চৌধুরী বিভিন্ন যুক্তি তুলে ধরেন। তৎকালীন প্রধানমন্ত্রীর চট্টগ্রাম সফরকালে ভেটেরিনারি কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয়ে উন্নীতকরণের ব্যাপারে তাঁর ঘোষণা/প্রতিশ্রুতি-সম্বলিত দৈনিক ‘আজাদী’ পত্রিকার কাটিংসহ কিছু ডকুমেন্ট তিনি আমাকে সরবরাহ করেন। তাঁদের দু’ জনের বক্তব্য আমাকে মুগ্ধ করে। ঢাকায় ফিরেই মন্ত্রী আবদুল্লাহ আল নোমানের সাথে আলোচনা করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে কাজ শুরু করি। ইউসুফ চৌধুরী ও শাহেদ কাদেরী আমাকে সহযোগিতা ও উৎসাহ প্রদানের পাশাপাশি ভেটেরিনারি প্রতিষ্ঠার আন্দোলন বেগবান করেন। চট্টগ্রামের সুশীল সমাজ, সাংবাদিক-রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, শিক্ষাবিদ, পেশাজীবী দল-মত-নির্বিশেষে বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে শরিক হন।

ইউসুফ চৌধুরী প্রদত্ত পত্রিকার কাটিং দিয়েই আমরা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার কাজে হাত দিই। কলেজের অধ্যক্ষ ড. নীতিশ চন্দ্র দেবনাথকে ঢাকায় এনে মাদ্রাজ, লাহোর, দিল্লী, ভেটেরিনারি কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয় উন্নীতকরণসংক্রান্ত আইন/বিধানাবলি পরীক্ষা করে চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি কলেজকে ভেটেরিনারি বিশ্ববিদ্যালয়ে উন্নীতকরণ-সংক্রান্ত আইনের খসড়া তৈরি করে ফেলি। মাঝে মাঝে ফোন করে ইউসুফ চৌধুরী তাগিদ দিতেন ও উৎসাহিত করতেন। মন্ত্রীর সম্মতি নিয়ে ভেটেরিনারি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের নীতিগত সম্মতি নিই প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে। মন্ত্রিসভায় বিশ্ববিদ্যালয় আইনের খসড়া পেশ করার দিন ইউসুফ চৌধুরীকে অবহিত করে তাঁর দোয়া কামনা করি। আইনটির খসড়াটি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পরিবর্তে কেন মৎস্য ও পশুসম্পদ মন্ত্রণালয় কর্তৃক মন্ত্রিসভায় পেশ করা হয়েছে, সিলেট ভেটেরিনারি কলেজকে কেন বিশ্ববিদ্যালয়ে উন্নীতকরণের প্রস্তাব তৈরি করা হয়নি, ইত্যাদি নানা প্রশ্নের জবাব দিতে হয় আমাকে ও মন্ত্রী মহোদয়কে। আমাদের প্রণীত খসড়া আইনটি মোটামুটি হুবহু মন্ত্রিসভায় অনুমোদন করা হয়।

৬ আগস্ট ২০০৬-এ বিশ্ববিদ্যালয় অনুমোদিত হওয়ার বিষয়টি ইউসুফ চৌধুরীকে অবহিত করা মাত্রই তিনি শিশুর মতো আনন্দে ফেটে পড়েন। শাহেদ কাদেরীসহ আনন্দ মিছিল বের করেন চট্টগ্রাম শহরে, সার্কিট হাউসে মিষ্টি বিতরণসহ আমার এবং মন্ত্রী আবদুল্লাহ আল নোমানের জন্য সংবর্ধনা সভার আয়োজন করেন। আমি তখন ঢাকায়। মন্ত্রী মহোদয় তাঁর বক্তব্যে বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠায় আমার ভূমিকার ভূয়সী প্রশংসা করেন। শাহেদ কাদেরী তাঁর মোবাইল ফোনের মাধ্যমে মন্ত্রী মহোদয়ের বক্তব্য আমাকে শোনান। চট্টগ্রামবাসীর জন্য দিনটি ছিল আনন্দের। ইউসুফ চৌধুরীর দীর্ঘদিনের আন্দোলনের ফসল চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি এন্ড এনিমেল সাইন্স বিশ্ববিদ্যালয়। তাঁর অনুরোধে কলেজের অধ্যক্ষ ড. নীতিশ চন্দ্র দেবনাথকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম উপাচার্য নিয়োগের মাধ্যমে এ শিক্ষাবিদকে মেধা ও প্রতিভার স্বীকৃতি দেয়া হয়।

পিতৃতুল্য ইউসুফ চৌধুরী ছিলেন অকুতোভয় সাংবাদিক, শিক্ষানুরাগী, মিতভাষী, কঠোর পরিশ্রমী, মানবতাবাদী ও চট্টল দরদী। মহান আল্লাহ্ তাঁকে জান্নাতের সুউচ্চ স্থানে স্থান দিন।

লেখক – সাবেক মূখ্য সচিব

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট