চট্টগ্রাম শুক্রবার, ০৩ মে, ২০২৪

সর্বশেষ:

ছবি- শরীফ চৌধুরী

দ্বিধা-দ্বন্দ্বে গরু বেপারিরা

ইফতেখারুল ইসলাম

২৭ জুন, ২০২১ | ৯:৩৪ পূর্বাহ্ণ

করোনার কারণে এবার নগরীর কোরবানির হাটে গরু আনা নিয়ে বেপারিরা কিছুটা দ্বিধা-দ্বন্দ্বের মধ্যে পড়ে গেছেন। এ কারণে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন হাটের ইজারাদাররা। ইজারাদাররা বলছেন, বাইরের জেলা থেকে গরু না এলে চট্টগ্রামে কোরবানির পশুর সংকট দেখা দেবে। ক্ষতিগ্রস্ত হবে ইজারাদাররাও।
ঈদুল আজহার বাকি আর মাত্র তিন সপ্তাহ। কঠোর লকডাউনে যাচ্ছে পুরো দেশ। জুলাইয়ের প্রথম সপ্তাহও লকডাউনের মধ্যে চলে যাচ্ছে। বেপারি ও ইজারাদাররা মূলত সময় পাচ্ছেন দুই সপ্তাহ। হাটগুলোতে এখনো সে ধরনের প্রস্তুতি নিতে দেখা যায়নি। গতকাল সরেজমিন বিবিরহাট গরুবাজার ঘুরে দেখা গেছে, বেপারিদের গরু রাখার জন্য বাঁশের খাইন বাঁধা, বৃষ্টির হাত থেকে রক্ষা পেতে উপরে ত্রিপল দেয়ার কোনো কাজই হয়নি। হাটে ১০টির মত গরু আছে। ছাগল আছে প্রায় অর্ধশত। ক্রেতাও তেমন নেই। চট্টগ্রাম জেলা প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের তথ্যানুযায়ী এবার চট্টগ্রামে অর্ধলক্ষাধিক কোরবানির পশুর ঘাটতি রয়েছে। এবারের কোরবানিতে পশুর চাহিদা রয়েছে ৮ লাখ ৯ হাজার। মজুদ আছে ৭ লাখ ৫৫ হাজার ৩৩৪টি। কোরাবানির সময় চট্টগ্রামের গরুর হাটগুলোতে মূলত গরু আসে চাঁপাইনবাবগঞ্জ, চুয়াডাঙ্গা, মেহেরপুর, কুমিল্লা, নাটোর, মাগুরা, রাজশাহীসহ ভারতীয় সীমান্তবর্তী জেলাসমূহ থেকে। ওইসব জেলা থেকে বেপারি এলে চট্টগ্রামের হাটগুলো জমজমাট হয়। এদিকে দেশের প্রায় সব সীমান্তবর্তী জেলাসমূহে করোনার প্রকোপ বেড়ে গেছে। সেসব জেলায় চলছে কঠোর লকডাউন। এমনকি রাজশাহী ও আশপাশের কিছু জেলায় এবার আমচাষীরা আমও বিক্রি করতে পারছেন না। এসব জেলার আমচাষীদের অনেকেই আম বিক্রি করার পর যে টাকা পান তা দিয়ে কোরবানির ঈদে গরুর ব্যবসা করেন। তারা যেকোনো উপায়ে ভারতীয় গরু সংগ্রহ করে চট্টগ্রামের হাটগুলোতে বিক্রির জন্য নিয়ে আসেন। করোনা তাদের আমের ব্যবসায় বড় ধরনের ধাক্কা দিয়েছে। অপরদিকে গরুর হাট নিয়ে সরকারের এখনো সুনির্দিষ্ট কোনো সিদ্ধান্ত আসেনি। একদিকে প্রতিকুল পরিবেশ। অন্যদিকে, গরুর হাট নিয়ে সরকারের সিদ্ধান্তহীনতার কারণে বেপারিরা দ্বিধা-দ্বন্দ্বের মধ্যে পড়ে গেছেন।
নগরীর বিবিরহাটের ইজারাদার মো. আরিফুল ইসলাম পূর্বকোণকে জানান, হাজী এরশাদ মামুন, সাইফুল ইসলামসহ তারা কয়েকজন মিলে বিবিরহাটের ইজারা নিয়ে বড় ধরনের দুশ্চিন্তায় পড়েছেন। তারা প্রতিনিয়ত বেপারিদের সাথে যোগাযোগ করে চলেছেন। কিন্তু বেপারিরা এখনো চট্টগ্রামে গরু নিয়ে আসার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে পারেননি কারণ সেসব জেলায় করোনার প্রকোপ বেশি। অপরদিকে গরুর হাট নিয়ে সরকারও কোনো সিদ্ধান্ত জানায়নি। গতবার তিনি বিবিরহাট ইজারা নিয়ে লোকসানে পড়ার কথা উল্লেখ করে বলেন, রাজশাহী এবং আশপাশের কিছু জেলার ব্যবসায়ী আম বিক্রি করে সীমান্ত থেকে ভারতীয় গরু কিনেন। এসব গরু নিয়ে তারা চট্টগ্রামে আসেন। এবার তারা আমের দাম পাচ্ছেন না। এমনকি অনেক আমচাষী কম দামেও আম বিক্রি করতে পারছেন না। যাদের কাছে গরু মজুদ আছে তারাও এখনো চট্টগ্রামে আসার সিদ্ধান্ত নিতে পারেননি। তিনি বলেন, করোনার কারণে ইজারাদাররা এমনিতেই লোকসানে আছেন, পাড়ায় পাড়ায় হাট এবং অনলাইনে গরু বিক্রির কারণে ব্যাপক লোকসানের শিকার হচ্ছেন। করোনার কারণে বিয়ে, মেজবান, আকিকা, ওরশ ইত্যাদি সামাজিক অনুষ্ঠান হচ্ছে অনাড়ম্বর। এ কারণে হাটে গরু বিক্রি হচ্ছে না বললেই চলে। বেচা-বিক্রি না হলে হাসিল পাওয়ারও সুযোগ নেই। এখন দিনে যে পরিমাণ হাসিল উঠে তা দিয়ে হাটের দৈনিক আনুষঙ্গিক খরচ মেটানোও কঠিন হচ্ছে।
সাগরিকা গরুবাজারের ইজারাদার আবুল কালাম আজাদ বাবুল পূর্বকোণকে বলেন, করোনার কারণে তারা এবার কিছুটা দুশ্চিন্তায় আছেন। তবে বেপারিদের সাথে যোগাযোগ অব্যাহত আছে। কোরবানির হাটের প্রস্তুতিও নিচ্ছেন।
মইজ্জারটেক বাজারের ইজারাদার সাইফুল হুদা জাহাঙ্গীর পূর্বকোণকে বলেন, তাদের গরুরহাট রাস্তার পাশে মনোরম পরিবেশে। যে কারণে ক্রেতা-বিক্রেতা উভয়েই সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে কেনাকাটা করতে পারবেন। তারা ইতোমধ্যে বিভিন্ন জেলার বেপারিদের সাথে যোগাযোগ করেছেন। তারা গরু নিয়ে আসার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। কোরবানির গরু আনার জন্য প্রশাসন তাদেরকে অনুমতি দেবে। তাছাড়া বাইরের জেলা থেকে গরু না এলে চট্টগ্রামে গরুর সংকট দেখা দেবে। তারা এবার খাইন ভাড়া তুলনামূলক কম নিচ্ছেন উল্লেখ করে বলেন, এবার তারা প্রতিখাইনে নেবেন ২০ হাজার টাকা। এ কারণেও বেপারিরা তাদের হাটে গরু আনার আগ্রহ প্রকাশ করেছে। তিনি জানান, কোরবানিযোগ্য পশুর যে পরিসংখ্যান চট্টগ্রাম জেলা প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর থেকে প্রকাশ করা হয় তা পুরোপুরি সত্য নয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, যদি তাদের তথ্য সঠিক হত তাহলে কোরবানির আগে গরুর সংকট সৃষ্টি হত না।

 

পূর্বকোণ/এসি

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট