চট্টগ্রাম শনিবার, ০৪ মে, ২০২৪

এলপিজি: দাম নির্ধারণ শুধুই কাগজে

মিজানুর রহমান 

৬ জুন, ২০২১ | ১:৩০ অপরাহ্ণ

মে মাস থেকে ৬৪ টাকা কমিয়ে জুনে ১২ কেজি এলপিজি সিলিন্ডারের সর্বোচ্চ দাম ৮৪২ টাকা নির্ধারণ করেছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিইআরসি। তবে বাজারে সরকার নির্ধারিত এই দামে এলপিজি সিলিন্ডার বিক্রি হচ্ছে না। পাইকারিতেই প্রায় সব কোম্পানি এসব সিলিন্ডার বিক্রি করছে ৮৪০-৯২০ টাকায়। আর খুচরা পর্যায়ে ভোক্তাদের কিনতে হচ্ছে ৮৮০-১০০০ টাকায়। ফলে এলপিজি সিলিন্ডারের দাম কমানোর সুফল মিলছে না বাজারে।

দেশে এলপিজির ব্যবহার শুরুর পর বেসরকারি কোম্পানিগুলো ‘যেমন খুশি তেমন’ স্টাইলেই এলপিজি সিলিন্ডারের দাম আদায় করে আসছিলো। কয়েক দশক ধরে চলা এই নৈরাজ্য বন্ধ করতে গত এপ্রিলে প্রথমবারের মতো এলপিজির দাম নির্ধারণ করে দেয় বিইআরসি। ওই সময় ১২ কেজির এলপিজি সিলিন্ডারের দাম নির্ধারণ করা হয় ৯৭৫ টাকা।

এলপিজি উৎপাদনের প্রধান উপাদান প্রোপেন এবং বিউটেন সরবরাহের বৃহত্তম কোম্পানি সৌদি আরামকোর দামের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে মে মাসে প্রতি সিলিন্ডারের দাম ৯০৬ টাকা নির্ধারণ করে বিইআরসি। বিশ্ব বাজারে প্রোপেন এবং বিউটেনের দাম কমতির দিকে থাকায় জুন মাসে এই দাম আরো কমানো হয়। নতুন দাম নির্ধারণ করা হয় ৮৪২ টাকা। বিইআরসি এলপিজি সিলিন্ডারের দাম কমালেও অধিকাংশ গ্যাস কোম্পানি সিলিন্ডারের দাম কমায়নি। বরং সিলিন্ডার প্রতি ১০-৪৫ টাকা পর্যন্ত দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন কেউ কেউ। খুচরা ‘‘পর্যায়ে দূরের কথা- ডিস্ট্রিবিউটর এবং ডিলারদের কাছেই সরকার নির্ধারিত দামের চেয়ে অনেক বেশি দামে এলপিজির সিলিন্ডার বিক্রি করছে এসব কোম্পানি।

ডিস্ট্রিবিউটরদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী- চলতি জুন মাসের প্রথম সপ্তাহে সিলিন্ডার প্রতি ইউনি গ্যাসের পে-অর্ডার দর ছিলো ৮৪০ টাকা। টোটাল গ্যাসের ৮৪২ টাকা। ডেল্টা গ্যাসের ৮৫৫ টাকা। সেনা ও ওরিয়ন গ্যাসের ৮৬০ টাকা। জি-গ্যাস, বসুন্ধরা ও ফ্রেস গ্যাসের ৮৮০ টাকা। যমুনা গ্যাসের ৮৮৩ টাকা। ইউরো গ্যাসের ৮৯০ টাকা। ওমেরা ও লাফ গ্যাসের ৯০৫ টাকা এবং বিএম গ্যাসের ৯২০ টাকা।

অন্যদিকে খুচরা বাজার ঘুরে দেখা গেছে- স্থানভেদে টোটাল গ্যাসের সিলিন্ডার বিক্রি হচ্ছে ৮৮০-৯০০ টাকায়। জেএমআই গ্যাস ৮৮০-৯২০ টাকায়। সেনা ও ওরিয়ন গ্যাস ৯০০-৯৫০ টাকা। জি-গ্যাস, বসুন্ধরা ও ফ্রেস গ্যাস ৯০০-৯৮০ টাকায়। যমুনা গ্যাস ৯০০-৯৫০ টাকায়। ইউরো গ্যাস ৯১০-৯৫০ টাকায়। ওমেরা ও লাভ গ্যাস ৯২০-৯৬০ টাকায়। বিএম গ্যাস বিক্রি হচ্ছে ৯৩০-১০০০ টাকায়।

সিলিন্ডারের দাম না কমানোর বিষয়ে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম মহানগর এলপি গ্যাস ডিস্ট্রিবিউটর-ডিলার এসোসিয়েশনের সভাপতি সাইফুল আলম পূর্বকোণকে বলেন, সরকার সিলিন্ডারের দাম কমিয়েছে। কিন্তু কোম্পানি কমায়নি। সরকার নির্ধারিত দামে কোম্পানিই বিক্রি করছে না। আমরা কীভাবে বিক্রি করবো। আমরা শুধু কমিশন পাই। তিনি বলেন, কোম্পানি সিলিন্ডার প্রতি যে পে-অর্ডার রেট দেয়- তা থেকে পরিবহনের জন্য ২০ টাকা, কমিশন হিসেবে ১০ টাকা এবং টার্গেট ফিলআপ করতে পারলে আরো ১০ টাকা কমিশন পাই আমরা। বেশি দামে বিক্রির পেছনে আমাদের কোনো হাত নেই। এরপরেও জেলা প্রশাসন এবং ভোক্তা অধিকার আমাদের ডিস্ট্রিবিউটর-ডিলারদের জরিমানা করছেন।

সাইফুল আলম বলেন, গ্যাস কোম্পানিগুলোর অনিয়মে আমাদের শাস্তি দেওয়া হচ্ছে।  এটি বন্ধে আমরা বিইআরসি, জেলা প্রশাসক এবং ভোক্তা অধিকারকে স্মারকলিপি দেবো। দাবি মানা না হলে আগামী ২০ ও ২১ জুন এলপিজি সিলিন্ডার নেওয়া বন্ধ রাখবো। কোম্পানির অনিয়ম কেনো আমাদের উপর চাপিয়ে দেওয়া হবে?

তবে ডিস্ট্রিবিউটর-ডিলার এসোসিয়েশনের সভাপতির এই বক্তব্য মানতে নারাজ কনজ্যুমারস এসোসিয়েশন বাংলাদেশ-ক্যাবের ভাইস প্রেসিডেন্ট এসএম নাজের হোসাইন। তিনি পূর্বকোণকে বলেন- ভোক্তাদের কাছে যিনি বেশি দামে বিক্রি করছেন- তাকেই আইনের আওতায় আনা প্রয়োজন। তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন। এসএম নাজের হোসাইন বলেন, বিইআরসি এলপিজি সিলিন্ডারের দাম নির্ধারণ করে দিলেই হবে না- এটি বাস্তবায়নে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, খনিজ সম্পদ বিভাগ এবং স্থানীয় প্রশাসনকে উদ্যোগ নিতে হবে। নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করতে হবে। তবেই এলপিজি সিলিন্ডারের দাম নিয়ে বিইআরসির সিদ্ধান্তে সুফল আসবে।

সরকার নির্ধারিত দামে এলপিজি সিলিন্ডার কিনতে না পেরে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন ভোক্তারাও। নগরীর ২ নম্বর গেট এলাকায় এলপিজির সিলিন্ডার কেনার সময় কথা হয় আসহাব উদ্দিনের সঙ্গে। তিনি পূর্বকোণকে বলেন, সবাই ব্যবসায়ীদের কথা ভাবে। ভোক্তাদের কথা কেউ ভাবে না। এই কারণে ৮৪২ টাকার সিলিন্ডার ৯৩০ টাকায় কিনতে হচ্ছে। কোনো প্রতিকার পাচ্ছি না।

তবে বাজার মনিটরিংয়ে নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. উমর ফারুক। তিনি পূর্বকোণকে বলেন, এলপি গ্যাসের দাম সরকার যা নির্ধারণ করে দিয়েছে, এর চেয়ে বেশি দামে বিক্রি করার সুযোগ নেই। কোম্পানি বা বিক্রেতা- যারা বেশি দামে বিক্রি করবে, তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেবে জেলা প্রশাসন।

পূর্বকোণ/এএ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট