চট্টগ্রাম রবিবার, ০৫ মে, ২০২৪

সর্বশেষ:

করোনায় দিনকাল

অলস সময় কাটাচ্ছেন সঙ্গীত আর যন্ত্রশিল্পীরা

মরিয়ম জাহান মুন্নী

২৯ মে, ২০২১ | ১২:০৯ অপরাহ্ণ

করোনার কারণে ঘরবন্দি শিল্পীরা। কণ্ঠশিল্পীদের আয়ের প্রধান উৎস মঞ্চ অনুষ্ঠান। করোনা ভাইরাসের কারণে এটি একেবারে বন্ধ। ঘরবন্দি অবস্থায় অনলাইনভিত্তিক কিছু অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করলেও সেখানে নেই কোনো আয়। এদিকে, একই কারণে বাদ্যযন্ত্র শিল্পীরা প্রথম থেকেই রয়েছেন কর্মহীন অবস্থায়। নেই আয়। বন্ধ রয়েছে সাংস্কৃতিক চর্চাও। চট্টগ্রামের বেশ ক’জন কণ্ঠশিল্পী ও যন্ত্রশিল্পীদের সাথে কথা বলে এমনটাই জানা যায়। শিল্পীরা আরো বলেন, প্রতিটি মানুষই যে কোনো কাজ করে আয়ের আশায়। শখের বসে গ্রহণ করা পেশা থেকেও আয় করতে চায় মানুষ। কিন্তু পেশা থেকে যদি আয় না হয় তবে সেটি আর শখের থাকে না। তখন তা বোঝা হয়ে যায়। বর্তমানে আমাদের শিল্পচর্চাও এমনি।
জেলা শিল্পকলা একাডেমির গানের শিক্ষক, বাংলাদেশ বেতার এবং বাংলাদেশ টেলিভিশনের শিল্পী মো. মোস্তফা কামাল বলেন, আমি ব্যক্তিগতভাবে অনলাইনে যেসব গানের অনুষ্ঠান হচ্ছে তার পক্ষে নই। কারণ অনলাইনে কণ্ঠ দিয়ে গাওয়া যায়, কিন্তু প্রকৃত অর্থে তা গান হয়ে ওঠে না। গান হচ্ছে একটা আবেগের নাম। যা ভালোবাসা দিয়ে গাইতে হয়। এছাড়াও আমরা যারা প্রবীণ আছি অনলাইনে এতটা অভ্যস্ত নই। যদিও এ করোনাকালে অনলাইনের মাধ্যমে জেলা শিল্পকলা একাডেমির কিছু গানের অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেছি কিন্তু এতে আমি কোনো তৃপ্তি পাইনি। বরং অনলাইনে সঙ্গীতচর্চার কারণে শিল্পীর বিষয় শ্রোতার মনে বিরূপ প্রভাব তৈরি হতে পারে। যেমন- অনলাইনে নেই কোনো বাদ্যযন্ত্রের ব্যবহার, ইন্টারনেট সমস্যাসহ নানারকম যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে শিল্পীর গানের মাধুর্য হারিয়ে যায়। আর এ অসঙ্গতি শ্রোতা মনে বিরূপ প্রভার পড়ে। তারা ভাবে, এ শিল্পীর এখন আর ভালো গাওয়ার ক্ষমতা নেই। তিনি তার কণ্ঠের জৌলুস হারিয়ে ফেলেছেন। এমন অনেক সমস্যার কারণে আমি অনলাইন অনুষ্ঠানের পক্ষে নই। অনেকে ভাবছেন গান অনলাইনে করা সহজ, মোটেই তা নয়।
বাংলাদেশ টেলিভিশন ও বেতারের শিল্পী শ্রেয়সী রায় বলেন, আমরা শিল্পীরা একেবারেই ঘরবন্দি জীবনযাপন করছি। প্রতিটি শিল্পের ক্ষেত্রে অতি গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে মঞ্চ। মঞ্চই শিল্পীর অলংকার আর দর্শক শিল্পীর ভূষণ। দুইয়ের উপস্থিতিতে একজন শিল্পী তার উপস্থাপনায় পরিপূর্ণতা আনতে পারে। কিন্তু অনলাইনের ক্ষেত্রে এর কিছুই নেই। নেই বাদ্যযন্ত্রের ব্যবহার। তাই অনলাইন অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করে কোনো শিল্পীই প্রকৃত আনন্দ পান না। আমিও ভালোবোধ করছি না। তবে প্রতিটি জিনিসেরই একটা ভালো দিক আছে। তেমনি অনলাইনেরও একটা ভালো দিক আছে। সেটা হচ্ছে, এখানে কোনো বাদ্যযন্ত্র ছাড়াই শুধু কণ্ঠের সেধে গান করা হয়। এ গান দেশের মাটিতে বসে করছি কিন্তু বিদেশ থেকেও মানুষ শুনে। এক্ষেত্রে মানুষ তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া লিখে প্রকাশ করে। যদি ভালো বলে তবে দেখতে ভালো লাগে।
এদিকে, সাংস্কৃতিক অঙ্গনের অন্যান্য শিল্পীরা মোটামুটি ঘরবন্দি অবস্থায় অনলাইনের তাদের স্ব স্ব শিল্পচর্চা চালিয়ে গেলেও একেবারে কর্মহীন অবস্থায় আছেন বাদ্যযন্ত্র শিল্পীরা। চর্চা থেকে বিমুখ হয়ে পড়ছেন তারা। পাশাপাশি আছেন আর্থিক সংকটেও। নেই কোনো আয়, এমনকি কাজও। আর্থিক সংকটের কারণে এরমধ্যে অনেকে পেশা পরিবর্তন করছেন।
বাংলাদেশ টেলিভিশন ও বেতারের বেহালা বাদক শ্যামল চন্দ্র দাশ বলেন, স্বাভাবিক সময়ে প্রায় প্রতিদিনই আমাদের অনুষ্ঠান থাকতো। ভালো আয় হত। কিন্তু করোনার মধ্যে কর্মহীন অবস্থায় প্রায় দেড় বছর বসে আছি। মাঝখানে কিছু সময় কাজ শুরু হলেও এখন প্রায় দুই মাস আবারও আয় বন্ধ। আর্থিক সংকটে আছি আমরা। সাংস্কৃতিক মন্ত্রণালয় থেকে কিছু অনুদান এলেও আমরা শুধু শুনেছি, কিন্তু পাইনি। আর লজ্জায় কাউকে কিছু বলতেও পারি না। চট্টগ্রামের শিল্পীদের কথা সরকারকে আরো একটু ভাবা উচিত। আমরা যারা বাদ্যযন্ত্র শিল্পী আছি আমার মনে হয় চট্টগ্রামের মধ্যে তাদের কেউই এ অনুদান পায়নি।
বাংলাদেশ টেলিভিশনের তরুণ তবলা বাদক শিল্পী প্রীতম আচার্য্য বলেন, আমাদের যন্ত্রশিল্পীদের অনলাইনে কোনো অনুষ্ঠান হয়নি। কিন্তু আমি ও অন্যান্য তরুণ যন্ত্রশিল্পীরা নিজেরা নিজেদের ফেসবুক পেজ ও ইউটিউব চ্যানেলে ভিডিও আপলোড করি ভায়োলিন, তবলা, গিটার ও বেহালা- যিনি যে যন্ত্রটি বাজান সেটি নিয়ে। কিন্তু এতেও কোনো আয় আসে না। আমি একজন যন্ত্রশিল্পী। এর বাইরে কিছুই করি না। আর্থিকভাবে কষ্টে আছি। আমাদের অনেক বাদ্যযন্ত্র শিল্পী অর্থের অভাবে পেশা পরিবর্তন করে কেউ ওষুধ, মুদি কিংবা ঈদের সময় কাপড় ও কসমেটিক্সের দোকানে কাজ করেছে। এভাবেই যাচ্ছে আমাদের জীবন।

পূর্বকোণ/এএইচ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট