চট্টগ্রাম রবিবার, ০৫ মে, ২০২৪

বায়েজিদ বাইপাস সড়ক: পাহাড় ধসের ঝুঁকি

ইমরান বিন ছবুর

২৯ মে, ২০২১ | ১২:০০ অপরাহ্ণ

নগরীর বায়েজিদ বোস্তামী সড়ক থেকে ফৌজদারহাট পর্যন্ত বায়েজিদ বাইপাস সড়কটি পাহাড় ধসের ঝুঁকিতে রয়েছে। সামান্য বৃষ্টিতেই বায়েজিদের এসব খাড়া পাহাড় থেকে প্রায়ই মাটি ধসে সংলগ্ন সড়কে পড়ছে। ১৮টি পাহাড়ের মধ্যে অন্তত পাঁচ থেকে ছয়টি পাহাড় অত্যন্ত ঝুঁকিতে রয়েছে বলে স্বীকারও করেছে প্রকল্প বাস্তবায়নকারী সংস্থা চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ)। প্রায় ছয় কিলোমিটার নগরীর গুরুত্বপূর্ণ এই সড়কটিতে প্রতিদিন হাজার হাজার যান চলাচল করছে। ফলে দুর্ঘটনার ঝুঁকি এড়াতে ইতোমধ্যে ঝুঁকিপূর্ণ সড়কের একপাশ বন্ধ করে দিয়েছে সিডিএ। তবে বর্ষার আগেই ঝুঁকিপূর্ণ পাহাড় সংস্কার করা না হলে দুর্ঘটনার আশঙ্কা রয়েছে বলে জানান নগর পরিকল্পনাবিদরা। অন্যদিকে, পাহাড় কাটার জন্য একটি কমিটি গঠন করেছে সিডিএ। কমিটির সুপারিশক্রমে এবং পরিবেশ অধিদপ্তরের অনুমতি পেলে দ্রুত সময়ের মধ্যে ঝুঁকিপূর্ণ পাহাড় কাটা হবে বলে জানান সিডিএ’র প্রধান প্রকৌশলী কাজী হাসান বিন শাম্স।
ছয় কিলোমিটার দীর্ঘ এই সড়ক বাস্তবায়ন করতে সিডিএ ছোট-বড় মিলে ১৮টি পাহাড় কেটেছে। এরমধ্যে পাঁচ থেকে ছয়টি পাহাড় অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। ঝুঁকি এড়াতে শীঘ্রই ঝুঁকিপূর্ণ এসব পাহাড় কাটতে চায় সিডিএ। তবে পাহাড় কাটার জন্য এখনো পরিবেশ অধিদপ্তরের অনুমতির অপেক্ষায় রয়েছে। ২০২০ সালের শেষের দিকে পরিবেশ অধিদপ্তরকে সাথে নিয়ে পাহাড় কাটার ব্যাপারে যৌথ সার্ভে করেছে সিডিএ। সার্ভের পর ঝুঁকিপূর্ণ এসব পাহাড় থেকে প্রায় দুই লাখ ঘনমিটার মাটি কাটার অনুমতি চেয়ে পরিবেশ অধিদপ্তরকে চিঠিও দিয়েছে সরকারি এই সংস্থা। তবে তখনও পাহাড় কাটার অনুমতি দেয়নি পরিবেশ অধিদপ্তর। সেইসাথে পাহাড় কাটার অনুমতি নিতে বিশেষজ্ঞের নিয়ে একটি কমিটি করার পরামর্শ দিয়েছে পরিবেশ অধিদপ্তর এবং কমিটির সুপারিশে পাহাড় কাটার অনুমতি দেয়া হবে বলে জানিয়েছে সরকারি এই সংস্থা। বিশেষজ্ঞ কমিটিতে চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ^বিদ্যালয়ের (চুয়েট) দুই অধ্যাপক রয়েছেন। এর আগে, রাস্তা নির্মাণে পরিবেশ অধিদপ্তরের অনুমোদনের বেশি পাহাড় কাটায় গত বছরের জানুয়ারিতে নিয়ম বহির্ভূতভাবে ১৮টি পাহাড় কাটায় সিডিএকে ১০ কোটি টাকা জরিমানা করেছে পরিবেশ অধিদপ্তর।
এ সম্পর্কে জানতে চাইলে সিডিএ’র প্রধান প্রকৌশলী কাজী হাসান বিন শাম্স বলেন, পরিবেশ অধিদপ্তরের পরামর্শক্রমে একটি বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠন করা হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার কমিটির সাথে মিটিং রয়েছে। কমিটি কিছুদিনের মধ্যে রিপোর্ট দিবে বলে আমাদের নিশ্চিত করেছে। বিশেষজ্ঞ কমিটির রিপোর্ট পেলে পরিবেশ অধিদপ্তরের অনুমতি সাপেক্ষে ঝুঁকিপূর্ণ পাহাড়গুলো কেটে ব্যালেন্স করা হবে।
তিনি আরো বলেন, আমরা ইতোমধ্যে সয়েল টেস্ট করেছি। আমরা পুনরায় পরীক্ষা-নিরিক্ষা করছি কি পরিমাণ মাটি কাটতে হবে। রিপোর্টের উপর ভিত্তি করে মাটি কাটা হবে।
জানতে চাইলে সিডিএ’র বোর্ড সদস্য ও নগর পরিকল্পনাবিদ স্থপতি আশিক ইমরান বলেন, একটি সড়ক তৈরি হওয়ার পর তা ব্যবহার করতে না পারা অত্যন্ত দুঃখজনক। অন্যদিকে, ঝুঁকির কারণে সড়কের একটি বড় অংশ ব্যবহার করা যাচ্ছে না। তাই পরিবেশ অধিদপ্তরের অনুমতি সাপেক্ষে শীঘ্রই ঝুঁকিপূর্ণ পাহাড়গুলো কেটে ব্যালেন্স করা উচিত।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সিডিএ’র একাধিক কর্মকর্তা জানান, বর্ষার আগেই যদি ঝুঁকিপূর্ণ পাহাড়গুলো কেটে ব্যালেন্স করা না হয়, তাহলে খাড়া এসব পাহাড় থেকে যে কোন সময় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। বর্ষা মৌসুমে কোনভাবেই পাহাড় কাটা যাবে না। পাহাড় কাটতে স্কেভেটর নিয়ে উঠলে দুর্ঘটনার আশঙ্কা রয়েছে।
উল্লেখ্য, নগরীর যানজট সমস্যার সমাধানকল্পে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) বাস্তবায়নাধীন বায়েজিদ বোস্তামী থেকে ফৌজদারহাট পর্যন্ত চট্টগ্রামের প্রথম বাইপাস সড়ক। এই সড়কে নির্মাণ করা হচ্ছে ১২টি কালভার্ট ও ৬টি ব্রিজ। ৩২০ কোটি টাকা ব্যয়ে ৬ কিলোমিটার দীর্ঘ ৪ লেন বিশিষ্ট এই প্রকল্পের একাধিকবার মেয়াদ বৃদ্ধি করে সর্বশেষ ২০১৯ সালের জুন মাসে সমাপ্ত হওয়ার কথা ছিল। তবে পুনরায় ২০২১ সালের জুন পর্যন্ত মেয়াদ বৃদ্ধি করা হয়েছে। তবে এই সময়ের মধ্যেও কাজ শেষ হওয়া নিয়ে সংশয় রয়েছে।

পূর্বকোণ/এএইচ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট