চট্টগ্রাম শনিবার, ২৭ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

সিমেন্ট শিল্পে অগ্রিম আয়কর ও সরবরাহ কর প্রত্যাহারের দাবি

নিজস্ব প্রতিবেদক

২৭ এপ্রিল, ২০২১ | ১:৩৮ অপরাহ্ণ

অস্তিত্ব সংকটের মুখে থাকা দেশের সিমেন্ট শিল্পকে রক্ষা করতে আসন্ন বাজেটে এই খাতে বিদ্যমান ৩% অসমন্বয়যোগ্য অগ্রিম আয়কর এবং সরবরাহের উপর ৩% কর  উভয়ই সম্পূর্ণ প্রত্যাহার করার দাবি করেছেন বাংলাদেশ সিমেন্ট ম্যানুফ্যাকচারার্স এসোসিয়েশন (বিসিএমএ) সভাপতি মো. আলমীর কবির।

আসন্ন ২০২১-২২ অর্থবছরের নতুন বাজেটে সিমেন্ট শিল্প সংক্রান্ত বিভিন্ন দাবি জাতীয় রাজস্ব বোর্ডে (এনবিআর) প্রস্তাব করে এই খাতের উদ্যোক্তাদের সংগঠন বিসিএমএ। ওই সব দাবির প্রেক্ষিতে আলমীর কবির দৈনিক পূর্বকোণকে জানান, অস্থিতিশীল এক সময় পার করছে দেশের সিমেন্ট খাত। একদিকে গত এক বছর থেকে করোনা ভাইরাসের কারণে সৃষ্ট বৈশ্বিক মহামারীর প্রভাব, অন্যদিকে সাম্প্রতিক সময়ে আন্তর্জাতিক বাজারে সিমেন্টের মূল কাঁচামাল ক্লিংকারের অস্বাভাবিক ও অব্যাহত মূল্য বৃদ্ধিতে দেশের সিমেন্ট খাতে নেমে এসেছে চরম দুর্দিন।

এই ধারা অব্যাহত থাকলে দেশের সিমেন্ট খাতের ভবিষ্যত কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে তা এখন আর অনুমান করা যাচ্ছে না। এই অবস্থায় অসমন্বয়যোগ্য অগ্রিম আয়কর ও সরবরাহ কর সিমেন্ট শিল্পের জন্য প্রত্যাহারের জোরালো দাবি জানাচ্ছি। তিনি আরো বলেন, সিমেন্ট উৎপাদনে ব্যবহৃত মৌালিক কাঁচামাল ক্লিংকার আমদানিতে নির্ধারিত শুল্ক প্রতি মেট্রিক টন ৫০০ টাকার পরিবর্তে ৫% হারে নির্ধারণের আহ্বান জানাচ্ছি। এছাড়াও সমন্বিত অগ্রিম আয়কর হিসেবে সরকারি কোষাগারে জমাকৃত প্রায় ১ হাজার কোটি টাকা দ্রুত ফেরত বা ছাড় করার বিষয়েও এনবিআরের হস্তক্ষেপ কামনা করছি।

আলমগীর কবির বলেন, সিমেন্টের সবগুলো কাঁচামালই আমদানি নির্ভর, তাই আমদানি শুল্ক, মূসক ও কর সবই কর্তন হয় আমদানি পর্যায়ে। আমরা বারবার অনুরোধ করে আসছি কোন সরকারি প্রতিষ্ঠান কোন বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকে ন্যূনতম প্রফিট বেঁধে দিতে পারেন না। অথচ এই সেক্টরে ৩% অগ্রিম আয়কর বাধ্যতামূলক করা হয়েছে যা সমন্বয় বা ফেরত যোগ্য নয়, অর্থাৎ চূড়ান্ত দায়। এটি গণতান্ত্রিক পন্থায় শুধু ভুল বলবো না, অন্যায়ও বটে।

তিনি আরও বলেন, এই সেক্টরের অন্যতম মূল কাঁচামাল ক্লিংকারের শুল্কায়ন করা হয় ৫০০ টাকা প্রতি মেট্রিক টনে যা প্রায় ১১%। অথচ ইন্টারমিডিয়েট কাঁচামাল হিসেবে এটা কোনভাবেই ৫% এর বেশি হওয়া উচিত না।

বিগত কয়েক বছরে এই সেক্টরে অগ্রিম আয়কর হিসেবে সমন্বয়যোগ্য বা ফেরতযোগ্য যে অর্থ এনবিআরের নিকট জমা রয়েছে তা আমরা ফেরত পাচ্ছি না। বর্তমানে পুঞ্জিভূত টাকার পরিমাণ প্রায় এক হাজার কোটি টাকা। এই সেক্টরে পুঁজি সংকটের এটি অন্যতম কারণ।

তিনি আরো বলেন, কর্পোরেট সেক্টর থেকে যে সমস্ত কোম্পানি পুঁজিবাজারে নিবন্ধিত তাদের কর হার অত্যন্ত বেশি। তার উপর ব্যক্তির লভ্যাংশ থেকে পুনরায় কর কেটে নেওয়া হয় অর্থাৎ একই খাত থেকে মোটা অংকের দ্বৈত কর থাকার কারণে উদ্যোক্তারা পুঁজি সংকটে ভোগেন অর্থাৎ তাদের ইকুইটি কাক্সিক্ষত মাত্রায় না থাকায় নতুন কিছু করার সুযোগ থাকলেও তা করতে পারছেন না।

বিসিএমইএ’র মতে, বাংলাদেশে সিমেন্ট উৎপাদনের সমস্ত কাঁচামাল বিদেশ নির্ভর, সুতারাং আন্তর্জাতিক বাজারে কাঁচামালের মূল্য তারতম্য হলে তার প্রভাব দেশে পড়ে। যেমন বিগত ২ (দুই) মাস যাবৎ আন্তর্জাতিক বাজারে সিমেন্টের কাঁচামালের মূল্য বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। এই মূল্য বৃদ্ধির একটি বড় কারণ পরিবহন বা জাহাজ ভাড়া প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে, গত ডিসেম্বর ২০২০ প্রতি মে. টন পরিবহন ব্যয় ছিল ১১ ডলার, যা বর্তমান সময়ে চলছে ২৩ ডলার, এই অবস্থা ভবিষ্যতে কোথায় যেয়ে দাঁড়াবে তা এখনই কোন অনুমান করা যাচ্ছে না।

পূর্বকোণ/এএ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট