চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪

কর্ণফুলী নদী: পাড় খেয়ে এবার খেতে চায় ‘প্রাণ’

মুহাম্মদ নাজিম উদ্দিন

১৭ এপ্রিল, ২০২১ | ১২:৩৭ অপরাহ্ণ

কর্ণফুলী নদীর ওপারের পটিয়ার কোলাগাঁও গ্রামে গড়ে উঠে চারটি বিদ্যুৎ কেন্দ্র। এক কিলোমিটারের মধ্যেই গড়ে তোলা হয়েছে এসব বিদ্যুৎকেন্দ্র। নদীর তীর দখল করেই চলছে কার্যক্রম। এবার নদীর মাঝপথ দখল করেই নির্মাণ করা হচ্ছে বিদ্যুৎকেন্দ্রের তেল সঞ্চালনের আনলোডিং (খালাস) স্টেশন। অথচ কর্ণফুলী নদীর অবৈধ স্থাপনা নির্মাণ ও সরিয়ে নেওয়ার জন্য উচ্চ আদালতের নির্দেশনা রয়েছে। তা উপেক্ষা করেই নদীর পাড় খেয়ে এবার প্রাণ খেতে চায় একটি বিদ্যুৎকেন্দ্র। স্থায়ী ও পাকা স্থাপনা নির্মাণের কারণে নদীতে পলি জমে ভরাট হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। বন্দর কর্তৃপক্ষ জানায়, সাত দিনের মধ্যে অবৈধ স্থাপনা সরিয়ে নেওয়ার জন্য নোটিশ দেওয়া হয়েছে। এরমধ্যে সরিয়ে না নিলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

জেলা প্রশাসন সূত্র জানায়, নদী দখলমুক্ত করে দখলদারের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশনা দিয়েছেন মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। গত ১০ ফেব্রুয়ারি মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের উপসচিব (জেলা ম্যাজিস্ট্রেসি নীতি অধিশাখা) মো. মাজেদুল ইসলাম স্বাক্ষরিত চিঠিতে জেলা প্রশাসককে এই নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এছাড়াও কর্ণফুলী নদীর অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদে হাইকোর্টের নির্দেশনা রয়েছে।

গতকাল সরেজমিন দেখা যায়, কর্ণফুলী নদীর শাহ আমানত সেতুর ভাটির দিকে নদীর মাঝখানে নির্মাণ করা হচ্ছে বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য তেলের আনলোডিং স্টেশন। নদীর মূল স্রোতে পয়েন্টে নির্মাণ করা হয়েছে ১০টি পিলার। নদীর স্রোতে আটকে মাঝপথে বড় আকারের দুটি প্লটুনে পাইলিং মেশিন বসিয়ে পিলার নির্মাণ করা হচ্ছে। ১০ পিলারের মধ্যে স্থাপন করা হয়েছে তেলের আনলোডিং স্টেশন ও পাইপলাইন। এখান থেকে প্রায় ৫শ মিটার দূরে পাইপলাইনের মাধ্যমে নদীর তীরে তেল সরবরাহ করা হবে। মাসখানেক ধরে নির্মাণ কাজ চলছে বলে জানান স্থানীয় কোলাগাঁও গ্রামের বাসিন্দারা। কর্ণফুলী নদীর বোটমাঝি মো. আবদুল মিয়া বলেন, দখল আর দূষণে কর্ণফুলী নদীর নদী এখন মরণাপন্ন অবস্থা। নদীর তীর গিলে খাচ্ছে ধনীপতিরা। তীর খেয়ে এবার নদীর প্রাণও খাওয়ার পাঁয়তারা করা হচ্ছে।

দেখা যায়, শাহ আমানত সেতুর ভাটি ও উজানের দিকে শত শত লাইটার জাহাজ নোঙর করা হয়েছে। নদীতে চলাচল করছে যাত্রী ও মালবাহী নৌকা-সাম্পান। চলাচল করছে বালুবাহী ড্রেজারও। শত শত লাইটার জাহাজের ফাঁকে ফাঁকে চলছে এসব নৌযানগুলো।

নৌকা-সম্পানের মাঝিরা বলেন, নদীতে পলি জমে অনেকটা ভরাট হয়ে গেছে। দুই পাড়ে বিশাল চর জেগে উঠেছে। ভাটার সময় নদীর তীর ঘেঁষে নৌযান চলাচল করা দুরূহ হয়ে যায়। মাঝপথ ধরেই চলাচল করা হয়। কিন্তু নদীর মধ্যপথে পাকা স্থাপনা নির্মাণের কারণে নৌযান চলাচলের পথ অনেকটা রুদ্ধ হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এছাড়াও স্থায়ী স্থাপনা নির্মাণের কারণে নদীর মাঝখানেও পলি জমে আরও ভরাট হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এতে নৌযান চলাচল হুমকির মুখে পড়ার শঙ্কাও রয়েছে।

স্থানীয়রা বলেন, পটিয়ার কোলাগাঁও ও শিকলবাহা এলাকায় ছয়টি বিদ্যুৎকেন্দ্র ছাড়াও গড়ে তোলা হয়েছে একাধিক শিপইয়ার্ড। নদীর তীর দখল করেই এসব শিল্প-কারখানা গড়ে তোলা হয়েছে। এতে নদীর তীর অনেকটা খিলে খেয়েছে শিল্পোদ্যোক্তারা। এখন নদীর প্রাণ খাওয়া প্রচেষ্টা চলছে।

কর্ণফুলী নদীর এই অংশটি নিয়ন্ত্রণ করে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ। বন্দরের পণ্যবাহী জাহাজ নদীর এই অংশে নোঙর করে থাকে। এছাড়াও প্রাকৃতিক দুর্যোগকালে নিরাপদ স্থান হিসেবে এখানে শত শত জাহাজ নোঙর করে।

চট্টগ্রাম বন্দরের ভূ-সম্পত্তি কর্মকর্তা মো. জিল্লুর রহমান পূর্বকোণকে বলেন, ‘বিষয়টি আমাদের নজরে আসার পর বন্দরের ম্যাজিস্ট্রেট সরেজমিন পরিদর্শন করেছেন। নদীর তীরে অবৈধ স্থাপনা সরিয়ে নেওয়ার জন্য সাতদিনের সময় বেঁধে দেওয়া হয়েছে। এরমধ্যে সরিয়ে না নিলে আইনগত ব্যবস্থা নেবে বন্দর কর্তৃপক্ষ’। তিনি আরও বলেন, ‘কর্ণফুলী নদীতে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদে উচ্চ আদালতের নির্দেশনা রয়েছে। আদালতে নির্দেশনা মতে, অবৈধ স্থাপনা নির্মাণের বিষয়ে জিরো টলারেন্সে রয়েছে বন্দর কর্তৃপক্ষ’।

বন্দর কর্তৃপক্ষ জানায়, গত সোমবার (১২ এপ্রিল) তেল আনলোডিং স্টেশন নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠান আনলিমা বিদ্যুৎকেন্দ্র কর্তৃপক্ষকে সাত দিনের মধ্যে অবৈধ স্থাপনা নির্মাণসামগ্রী সরিয়ে নেওয়ার জন্য নোটিশ দিয়েছে।

আনলিমা বিদ্যুৎকেন্দ্রের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাহমুদুল হক পূর্বকোণকে বলেন, ‘ভাটার সময় নদীর তীরে জাহাজ ভিড়ানো কঠিন হয়ে পড়ে। তখন তেল খালাস করা দুঃসহ হয়ে পড়ে। তাই আনলোডিং পয়েন্ট নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এখন কিছুই রাখব না। প্লটুন ও অন্যান্য নির্মাণসামগ্রী তুলে নেওয়া হবে’।

পূর্বকোণ/পিআর

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট