চট্টগ্রাম মঙ্গলবার, ১৯ মার্চ, ২০২৪

নামমাত্র স্বাস্থ্যবিধি শিল্প কারখানায়

ইমরান বিন ছবুর 

১৬ এপ্রিল, ২০২১ | ১১:৩৬ পূর্বাহ্ণ

স্বাস্থ্যবিধি মেনে শিল্প কারখানা চালু রাখার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন গার্মেন্টস শিল্পসহ অন্যান্য শিল্প মালিকেরা। গার্মেন্টস মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ’র পক্ষ থেকে এ ব্যাপারে বার বার উদাত্ত আহবান জানিয়ে মালিকপক্ষকে তাগাদা দিলেও অধিকাংশ গার্মেন্টস মালিক পুরোপুরি স্বাস্থ্যবিধি মানেননি। শ্রমিকদের কারখানায় যাওয়া- আসা এবং কারখানায় উপযুক্ত স্বাস্থ্যবিধি মানা হচ্ছে কিনা, সেই বিষয়টিও তদারকি করা হচ্ছে না।

এমনকি লকডাউন চলাকালীন সময়ে গার্মেন্টসসহ বিভিন্ন শিল্প- কারখানার মালিকদের পক্ষ থেকে শ্রমিকদের জন্য পরিবহনের ব্যবস্থা করার কথা থাকলে অনেক প্রতিষ্ঠান তাও করেননি বলে অভিযোগ করেছেন শ্রমিকেরা। সব মিলিয়ে স্বাস্থ্যবিধি মানার ক্ষেত্রে এক ধরণের হযবরল অবস্থার মধ্যেই লকডাউনের দ্বিতীয় দিন অতিবাহিত হয়েছে গতকাল।

এদিকে, গার্মেন্টসসহ চট্টগ্রামে ছোট বড় সাড়ে ১২শ’টির বেশি নিবন্ধিত শিল্প কারখানা রয়েছে। যেখানে কাজ করছে প্রায় সাড়ে ৫ লাখ শ্রমিক। এসব শিল্প কারখানায় স্বাস্থ্যবিধি মানা হচ্ছে কিনা, সে ব্যাপারে প্রশাসনেরও কোন তদারকিও চোখে পড়েনি। যদিও নগরীর ইপিজেড এলাকায় শ্রমিকরা স্বাস্থ্যবিধি মানছেন কিনা তা মনিটরিং করা হচ্ছে বলে জানান চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন।

শিল্প কারখানাগুলোতে এভাবে স্বাস্থ্যবিধি মানা না হলে করোনা সংক্রমণ বাড়তে পারে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। নগরীর বৃহস্পতিবার বিকেলে নগরীর ইপিজেড ও দেওয়ানহাট এলাকায় ঘুরে দেখা যায়, গার্মেন্টস ছুটি শেষে গাড়ির জন্য শ্রমিকদের দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষা করতে হয়েছে। ভাগ্যক্রমে একটি গাড়ি পেলে সেখানে হুমড়ি খেয়ে সবাই উঠছেন। এসময় গুনতে হয়েছে দ্বিগুণের চেয়ে বেশি ভাড়া।

নগরীর ইপিজেড এলাকার মো. ফাহিম নামের এক শ্রমিক অভিযোগ করে বলেন, যদিও সরকারি নির্দেশনা ছিল, শ্রমিকদের জন্য নিজস্ব পরিবহনের ব্যবস্থা রাখতে হবে। কিন্তু অধিকাংশ গার্মেন্টস কর্তৃপক্ষ সেটা করেননি। আমার বাসা নগরীর নিউ মার্কেট এলাকায়। গার্মেন্টস ছুটি হয়ে ঘণ্টা পেরিয়ে গেলেও এখন গাড়ি পাচ্ছি না। গার্মেন্টস ছুটি হওয়ার পর ইপিজেড এলাকায় স্বাস্থ্যবিধি মানার বালাই নেই।

গার্মেন্টেসের গাড়িগুলোতে শ্রমিকরা গাদাগাদি করে উঠছে। এভাবে গাদাগাদি করে গাড়িতে উঠলে স্বাস্থ্যবিধি আর কই মানা হলো প্রশ্ন করেন তিনি।  জানতে চাইলে চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক মো. মমিনুর রহমান বলেন, গতকাল বৃহস্পতিবার বেলা ১১টা থেকে সাড়ে ১২টা পর্যন্ত নগরীর ইপিজেড এলাকায় স্বাস্থ্যবিধি মানার ব্যাপারে আমাদের একটি টিম মনিটরিং করেছে। তবে প্রথমদিনে কোন জরিমানা না করে সতর্ক করা হয়েছে। একইভাবে আগামীকাল শনিবার থেকে অভিযান পরিচালনা করা হবে এবং স্বাস্থ্যবিধি না মানলে জরিমানা করা হবে বলে জানান তিনি।

আজম উদ্দিন নামের আরেক শ্রমিক অভিযোগ করে বলেন, টাইগারপাস এলাকা থেকে এসে চাকরি করছি। স্বাভাবিকের চেয়ে তিন থেকে চার গুণ বেশি গাড়ি ভাড়া দিয়ে গার্মেন্টসে আসতে হচ্ছে। মাস শেষে আমরা শ্রমিকরা অল্প টাকা পাই। বেতনের অর্ধেক যদি গাড়ি ভাড়া দিয়ে দিতে হয়, মাস শেষে কি খাবো? অফিস ছুটি হয়েছে প্রায় আধা ঘণ্টার বেশি হচ্ছে। এখনো পর্যন্ত কোন গাড়ি পাচ্ছি না। অর্ধেক পথ হেটে, অর্ধেক পথ রিকশা বা বাইকে করে বাসায় যেতে হবে। অথচ গার্মেন্টস মালিকরা বলছেন, তারা শ্রমিকদের জন্য পরিবহনের ব্যবস্থা করবে।

জানতে চাইলে বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স এন্ড এক্সপোর্টার্স এসোসিয়েশনের (বিকেএমইএ) সচিব আলতাফ উদ্দিন বলেন, সাধারণত গার্মেন্টস চালু থাকে সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত। করোনাকালীন লকডাউন সময়ে কিছু গার্মেন্টস একঘণ্টা আগে অর্থাৎ ৭টায় আবার কিছু গার্মেন্টস একঘণ্টা পরে ৯টায় খোলার সিদ্ধান্ত হয়েছে। এরফলে সুবিধাটা হবে, যারা একঘণ্টা আগে গার্মেন্টস চালু করবে তারা একঘণ্টা আগে ছুটি দিবে। একইভাবে যেসব গার্মেন্টস একঘণ্টা পরে চালু করবে, তারা একঘণ্টা পরে ছুটি দিবে। যাতে রাস্তায় ও গাড়িতে শ্রমিকদের জনসমাগম কিছুটা কমে।

শ্রমিকদের পরিবহনের ব্যবস্থার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, চট্টগ্রামের সবগুলো ফ্যাক্ট্ররিতে নিজস্ব পরিবহন নেই। যেসব গার্মেন্টসের সবগুলো কারখানা চালু রয়েছে, তারা নিজেদের পরিবহন ব্যবহারের পাশাপাশি ভাড়ায় কিছু পরিবহনের ব্যবস্থা করে। অধিকাংশ ফ্যাক্ট্ররিতে শ্রমিকরা আশপাশের এলাকায় থাকে, যাদের কোন পরিবহনের প্রয়োজন হয় না। এমন শ্রমিকের সংখ্যা প্রায় তিন ভাগের কাছাকাছি।

শিল্প পুলিশের উপ-পরিদর্শক আবু সুফিয়ান বলেন, চট্টগ্রামে নিবন্ধিত প্রায় এক হাজার ২৫০টির বেশি শিল্প কারখানা রয়েছে। এর বাইরেও কিছু কিছু ছোট কারখানা থাকতে পারে। এসব শিল্প কারখানায় প্রায় সাড়ে পাঁচ লাখের মত শ্রমিক কর্মরত রয়েছেন।

পূর্বকোণ/এএ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট