চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪

করোনায় ৪ শতাধিক শিক্ষার্থীকে বেঁচে থাকার স্বপ্ন দেখালেন যিনি

নিজস্ব প্রতিবেদক

৯ এপ্রিল, ২০২১ | ১২:২৮ পূর্বাহ্ণ

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী জামালের দিনমজুর বাবা করোনা মহামারীতে উপার্জন বন্ধ হয়ে যাওয়ায় অনেকটা পথে বসতে হয়েছিল। অন্যদিকে আরেক ছাত্রী নুসরাতের বাবা প্যারালাইজড হয়ে পরিবারের মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ে। চাকরি চলে যায় রুদ্রের স্কুলশিক্ষক বাবা ও মায়ের। অর্থের অভাবে কেউ প্রস্তুতি নিচ্ছিল বাসা ছেড়ে গ্রামে চলে যাওয়ার, কেউ ভাবছিল পড়াশোনা থামিয়ে দিয়ে কোথাও শ্রমিক বা কায়িক পরিশ্রমের কাজ করবে।

কিন্তু এই ছাত্র-ছাত্রীদের কাউকেই শেষ পর্যন্ত বাসা ছেড়ে যেতে হয়নি, পড়াশোনা থামাতে হয় নি। ৪০০ শিক্ষার্থীর পাশে এসে দাঁড়িয়েছে সানশাইন চ্যারিটিজ এবং সানশাইন গ্রামার স্কুলের অধ্যক্ষ সাফিয়া গাজী রহমান। যার যতটুকু অর্থের প্রয়োজন তার জন্য প্রদান করা হয়েছে সেই পরিমাণ বৃত্তি। দীর্ঘ একবছর ধরে বৃত্তি দিয়ে গেছে ২৫ জন ছাত্র-ছাত্রীকে যেন তারা নিজের পায়ে দাঁড়াতে পারে। চালু করা হয় সাফিয়া গাজী রহমান উইমেন স্কলারশিপ। দশজন মেধাবী চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীকে নির্বাচিত করা হয় যেন তারা পরিবারের উপর নির্ভরশীল হয়ে না থাকে করোনা মহামারীতে। এছাড়াও চালু করা হয় এক বছরব্যাপী বৃত্তি ‌‘সাফিয়া গাজী রহমান কভিড ফেলোশিপ’– যেখানে কোভিড-১৯ এর সময় বিভিন্ন কোভিড ল্যাবে কাজ করেছে এমন কর্মী, বিভিন্ন কোভিড গবেষণায় কাজে নিয়োজিত ছাত্র-ছাত্রী, কোভিড এর সময়কালীন যারা স্বেচ্ছাসেবকের কাজ করেছে এমন সব ছাত্র-ছাত্রীদের বৃত্তি দেয়া হয়েছে নিরবচ্ছিন্নভাবে কাজ করার জন্য এবং আর্থিক সংকট যেন তাদেরকে দমিয়ে রাখতে না পারে সেই লক্ষে।

সানশাইন ও সাফিয়া রহমানের এই উদ্যোগ বৃথা যায়নি। অনেক ছাত্র-ছাত্রীই দেখাচ্ছে সাফল্য। রাশেদ মহামারীর সময়কালীন এই ফেলোশিপ প্রাপ্ত হয়ে আবেদন করেছিল বিদেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে এবং নির্বাচিত হয়েছে ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের ইরাসমাস মুন্দুস স্কলারশিপের জন্য। রাশেদের ভাষায়- করোনা মাহামারিতে আমাদের গবেষণা ও উচ্চশিক্ষার স্বপ্ন অনেকটাই ব্যর্থ হয়ে যাচ্ছিল অর্থের অভাবে। চ্যারিটিজের এই উদ্যোগ আমাকে পৌঁছে দিয়েছে স্বপ্নের দুয়ারে। ‘আরেকজন শিক্ষার্থী আসমার করোনা নিয়ে গবেষণা প্রকাশিত হয়েছে নেদারল্যান্ডস থেকে।

আসমা বলেন, করোনায় সবাই যখন ভয় পাচ্ছিল কোভিড ল্যাবে কাজ করতে কিংবা কোভিড রোগীদের নিয়ে গবেষণা করতে, আমি তখন চট্টগ্রামের প্রথম মেয়ে হিসেবে স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে ল্যাবরেটরিতে যোগ দিলাম। পাশাপাশি ঝুঁকি নিয়ে যুক্ত হলাম গবেষণায়। আমার এই কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ আমাকে সাফিয়া গাজী রহমান ওমেন এমপাওয়ারমেন্ট স্কলারশিপের জন্য মনোনীত করা হয়। আমাকে আর ভাবতে হয়নি নিজের যাতায়াত খরচ বা নিত্যদিনের ব্যয় নিয়ে। আমি কাজ করতে পেরেছি চিন্তামুক্তভাবে।

সানশাইন চারিটিজ ২ লাখ টাকার বৃত্তি প্রদান করেছে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতিকে। শুধু তাই নয়, তারা পাশে দাঁড়িয়েছে শিশুদের ও বস্তির কিশোরদের। পাঁচশত শিশু ও বস্তিতে থাকা কিশোর-কিশোরীকে একমাসের খাদ্য ও বৃত্তির ব্যবস্থা করেছে চারুলতা বিদ্যাপীঠ, প্রীতিলতা ফাউন্ডেশন, বাঁশখালী সরল সাদেকিয়া হাফেজিয়া এতিমখানাসহ সাতটি প্রতিষ্ঠানে। তাদের ভালোবাসার পরশ পৌঁছে গেছে পার্বত্য চট্টগ্রামে আদিবাসীদের মাঝেও। ১০০ জন চা-শ্রমিক ও আদিবাসী মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে কাপ্তাই পুলিশের সহযোগিতায় করোনা মহামারীতে।

এই প্রসঙ্গে সানশাইন গ্রামার স্কুলের অধ্যক্ষ সাফিয়া গাজী রহমান বলেন, আমার সব অনুপ্রেরণার উৎস হল মানুষের ভালোবাসায়। আমি বিশ্বাস করি মানুষের জন্য মানুষের মমতা পৃথিবীতে বেঁচে থাকার সবচেয়ে বড় প্রেরণা। তাই যেকোন দুর্যোগে পাশে দাঁড়ানো আমি কর্তব্য মনে করি। একটি শিশুও যেন অপুষ্টিতে মারা না যায়, একজন মানুষও যেন খেতে না পেয়ে মারা না যায়– এমন একটা পৃথিবীর স্বপ্ন দেখি আমি। তাই আমরা কাজ করে যাচ্ছি। যত বেশি সংখ্যক মানুষের পাশে দাঁড়াতে পারি ততই নিজেদের ধন্য মনে করব। এই উদ্যোগে সানশাইন চ্যারিটিজ ও সাফিয়া গাজী রহমানের পাশে ছিল সানশাইন গ্রামার স্কুলের প্রাক্তন শিক্ষার্থী ও শুভানুধ্যায়ীরা। যেকোন সংকটে দেশের জন্য, মানুষের জন্য কাজ করার প্রত্যয়ে নীরবে এগিয়ে যাচ্ছে সানশাইন চ্যারিটিজ। 

পূর্বকোণ/মামুন

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট