চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

রোহিঙ্গা কালামের মিয়ানমারে বসেই ইয়াবা পাচার চট্টগ্রামে

নাজিম মুহাম্মদ 

৮ এপ্রিল, ২০২১ | ৪:৪০ অপরাহ্ণ

মিয়ানমারে বসে বাংলাদেশে ইয়াবা পাচার করেন আবুল কালাম ওরফে আমীর আহম্মদ। মিয়ানমারের বাসিন্দা হলেও আমীর ও তার স্ত্রী বাংলাদেশি জাতীয় পরিচয়পত্র তৈরি করেছেন। দু’জনেই হালিশহর থানার উত্তর হালিশহর বি-ব্লকের দুই নম্বর লেনের ১৮ নম্বর বাসার ঠিকানায় জাতীয় পরিচয়পত্র তৈরি করেন। ওই জাতীয় পরিচয়পত্র ব্যবহার করে সামুদ্রিক মৎস্য অধিদপ্তর থেকে প্রায় কোটি টাকা দামের একটি মাছ ধরার ট্রলারের লাইসেন্স নিয়েছেন। পরে জানা যায়, স্ত্রী ও নিজের নামে ভুয়া জাতীয় পরিচয়পত্র তৈরি করে রোহিঙ্গা কালাম মাছ ধরার ট্রলার কিনে সেই ট্রলারে সাগরপথে মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে ইয়াবা পাচার করছে। আমীরের স্ত্রী ফাতেমা বেগম বসবাস করেন নগরীর বাকলিয়া থানার নুর নগর হাউজিং এলাকায়। তবে সবাই জানে কালাম ওরফে আমীর আহম্মদ মালয়েশিয়া প্রবাসী। কালামের হয়ে দুইজন ব্যক্তি বাকলিয়ায় বসে ইয়াবা পাচার দেখভাল করছেন। উক্ত দুই ব্যক্তি ক্ষমতাসীন দলের রাজনৈতিক নেতা আর পুলিশের সাথেও সখ্যতা গড়ে তুলেছেন।

 

চান্দগাঁও থানার পরিদর্শক মোস্তাফিজুর রহমান জানান, মামলাটি আমরা গুরুত্ব সহকারে তদন্ত করছি। মূল পাচারকারী মিয়ানমারের বাসিন্দা আবুল কালাম ওরফে আমীর আহম্মদকে আমরা খুঁজছি।

ওসি বলেন, কালাম হালিশহরের ঠিকানায় আমীর আহম্মদ নাম দিয়ে জাতীয় পরিচয়পত্র তৈরি করেছেন। তার স্ত্রী ফাতেমার নামেও একই ঠিকানায় বাংলাদেশি জাতীয় পরিচয়পত্র রয়েছে। আমরা এ পর্যন্ত তদন্তে যতটুকু পেয়েছি তাতে মনে হচ্ছে তারা ভুয়া জাতীয় পরিচয়পত্র তৈরি করেছে। হালিশহরের যে ঠিকানায় জাতীয় পরিচয়পত্র তৈরি করেছে সেই ঠিকানায় কালাম কিংবা আমীর নামে কোন ব্যক্তির অস্তিত্ব নেই। তবে আমরা কালামের সহযোগী সোহেল উদ্দিনকে ইয়াবাসহ গ্রেপ্তার করেছি।

নগরীর চান্দগাঁও থানা পুলিশ ২০২০ সালের ২১ নভেম্বর রাত এগারটায় চান্দগাঁও থানার পুরাতন কালুরঘাট বিআরটিসি সার উঠানোর ঘাট এলাকা থেকে দুটি ড্রাম থেকে এক লাখ ৪৮ হাজার ইয়াবা উদ্ধার করে। ঘটনাস্থল থেকে সোহেল নামে এক ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করা হয়। পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদের সোহেল জানান, ইয়াবার মূল মালিক মিয়ানমারের বাসিন্দা আবুল কালাম(৫০) ওরফে আমীর আহম্মদ। তার নিজ বাড়ি সাতকানিয়ার ঢেমশা ইউনিয়নের ইছামতি গ্রামে। কালাম তাকে ইয়াবা ট্যাবলেট সরবরাহ করেন। মিয়ানমারের একটি ফোন নম্বরে হোয়াটসঅ্যাপের মাধমে সোহেলের সাথে যোগাযোগ রাখেন নিয়মিত কালাম।

ধারণা করা হচ্ছে কালাম মিয়ানমারের নাগরিক। চান্দগাঁও থানা পুলিশ কালামের হালিশহরের বাসায় তল্লাশি চালায়। সেখান থেকে তার বাংলাদেশি জাতীয় পরিচয়পত্র উদ্ধার করে পুলিশ। জাতীয় পরিচয়পত্র পাবার পর জানা যায়, কালামের প্রকৃত নাম আমীর আহম্মদ। পরে রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করলে সোহেল জানায়, কালামের প্রকৃত নাম আমীর আহম্মদ। তিনি মিয়ানমারের বাসিন্দা হলেও হালিশহরের ঠিকানায় তার ও তার স্ত্রী ফাতেমা বেগমের নামে জাতীয় পরিচয়পত্র তৈরি করেছেন। হালিশহরের ঠিকানায় জাতীয় পরিচয়পত্র করা হলেও আমীর কিংবা ফতেমা কেউ সেখানে থাকে না। পুলিশ জানিয়েছে আমীরের বাকলিয়ার ভাড়া বাসা থেকে ভোটার আইডি ছাড়াও আমীরের ছবি উদ্ধার করেছি। ছবি দেখে আমীরকে শনাক্ত করেন গ্রেপ্তার সোহেল।

খোঁজ নিয়ে জানা যায় ফাতেমা নগরীর বাকলিয়া থানার নুর নগর হাউজিং এলাকার একটি বাসায় ভাড়া থাকেন। ফাতেমার দাবি তার স্বামী আমীর আহম্মদ মালেশিয়া থাকেন। ইয়াবা উদ্ধারের ঘটনার পর পর বাকলিয়ার ওই বাসাও ছেড়ে দেয় ফাতেমা।

এক লাখ ৪৮ হাজার ইয়াবাসহ যে ট্রলারটি পুলিশ জব্দ করেছে সেটির মালিক আমীর আহম্মদ। সেই ট্রলারে আমীর মিয়ানমার থেকে সাগর পথে বাংলাদেশে ইয়াবা পাচার করছে দীর্ঘদিন ধরে। হালিশহর থানার উত্তর হালিশহরের বি ব্লক, দুই নম্বর লেনের ১৮ নম্বর বাসার ঠিকানায় স্ত্রী ফাতেমা বেগমের নামে একটি মাছ ধরার ট্রলার কিনেন। এফবি ‘মায়ের দোয়া-২৭০’ নামে মাছ ধরার ট্রলারটি মৎস্য অধিদপ্তর সামুদ্রিক মৎস্য দপ্তর সরকারি কার্যভবন-১ চট্টগ্রামের আগ্রাবাদ থেকে ২০১৯ সালের ২৯ আগস্ট লাইসেন্স নেন। ১৮ জন নাবিকের ধারণ ক্ষমতা সম্পন্ন জাপানি হিনো কোম্পানির ইঞ্জিন লাগানো ট্রলারটির রেজিস্ট্রেশন নম্বর এফ-১১৩১৪। রেজিস্ট্রেশন করার সময় ট্রলারটির চালকের নাম দেয়া হয় কক্সবাজারের পেকুয়ার মোহাম্মদ হানিফের।

চান্দগাঁও থানায় দায়ের করা মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, ২০২০ সালের ২১ নভেম্বর রাত এগারোটার সময় পুলিশ গোপন সংবাদের জানতে পারেন, চান্দগাও থানার পুরাতন কালুরঘাট বিআরটিসি সার উঠানোর ঘাট কয়েকজন মাদক ব্যবসায়ী সাগর পথে ট্রলারে ইয়াবা নিয়ে এসেছে। খবর পেয়ে পুলিশ সেখানে অভিযান চালায়। রাত সোয়া এগারোটায় সেখানে মাঝারি সাইজের দুটি প্লাস্টিকের ড্রাম নিয়ে তিনজন লোক অপেক্ষা করছে। পুলিশ দেখে দুজন পালিয়ে যেতে সক্ষম হলেও সোহেল উদ্দিন ঘটনাস্থলে ইয়াবাসহ ধরা পড়ে। পরে দুটি ড্রামে এক লাখ ৪৮ হাজার ইয়াবা পাওয়া যায়। এজাহারে বলা হয়েছে, উদ্ধার করা ইয়াবার বাজার মূল্য প্রায় সাড়ে চার কোটি টাকা।

 

পূর্বকোণ/মামুন

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট