চট্টগ্রাম মঙ্গলবার, ৩০ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

আমার দেশের মুক্তির সংগ্রাম

এডভোকেট আবু মোহাম্মদ হাশেম 

২৬ মার্চ, ২০২১ | ৫:০৮ অপরাহ্ণ

১৯৬৮ সালের শেষের দিকে সেপ্টেম্বরে চট্টগ্রাম জেলা পূর্ব পাকিস্তান ছাত্রলীগের সম্মেলন হয়। উক্ত সম্মেলনে আমি সভাপতি নির্বাচিত হই এবং সাবের আহমদ আজগরী সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। সম্মেলনের পর থেকে আমরা অবিভক্ত চট্টগ্রামের বিভিন্ন থানায় ছাত্রলীগকে সংগঠিত করার কাজ শুরু করি এবং বিশেষভাবে ৬ দফা আন্দোলন ও বঙ্গবন্ধুর মুক্তির আন্দোলনকে বেগবান করার জন্য থানায় থানায় সভা-সমাবেশ করি। সেইসাথে বিভিন্ন কলেজের ছাত্র সংসদ নির্বাচনে যাতে ছাত্রলীগের প্রার্থী জয়লাভ করতে পারে তার জন্য কাজ করি। তৎকালীন চট্টগ্রাম জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জননেতা এম.এ আজিজ ও আওয়ামী লীগ নেতা এম. এ. হান্নান ও আবদুল্লাহ আল হারুন সাহেবদের পরামর্শে প্রতিটি জেলার ও প্রতিটি থানার, কলেজ, স্কুলের ছাত্র সংগঠন করে ৬ দফা আন্দোলন বেগবান করার জন্য কাজ করি।  ১৯৬৯ সালের মাঝামাঝি সময়ের বাংলাদেশ ছাত্রলীগ আরো কিছু দফা সংযুক্ত করে ১১ দফা
প্রণয়ন করে এবং ৬ দফা তথা ১১ দফা আন্দোলন বেগবান করার জন্য ছাত্র সমাজকে সঙ্গে নিয়ে আন্দোলন সংগ্রাম চালিয়ে যায়। মাঝে মধ্যে হরতালসহ নানা কর্মসূচি দেওয়া হয়। উক্ত কর্মসূচি পালন করার জন্য ছাত্র সমাজকে উদ্বুদ্ধ করার কাজ করি। ১৯৬৯ এর শেষের দিকে যখন আন্দোলন তীব্র হতে থাকে তখন শাসকগোষ্ঠি বঙ্গবন্ধুকে জেল হতে মুক্ত দিয়ে আগরতলার ষড়যন্ত্র মামলা প্রত্যাহার করে নিতে বাধ্য হয় এবং ১৯৭০ এ নির্বাচন দেওয়ার প্রতিশ্রুতি প্রদান করেন।

১৯৭০ এর আন্দোলন তীব্র থেকে তীব্রতর হয় এবং ডিসেম্বরে সাধারণ নির্বাচনের ব্যবস্থা করা হয়। আওয়ামী লীগ জাতীয় পরিষদ ও প্রাদেশিক পরিষদের নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠ আসন লাভ করে। উক্ত নির্বাচনের পর ইয়াহিয়া সরকার আওয়ামী লীগকে ক্ষমতা হস্তান্তর না করায় আন্দোলন সংগ্রাম তীব্র হতে থাকে এবং ১৯৭১ এর ৭ই মার্চ বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতা ঘোষণা করে এবং যার যার যা আছে তা নিয়ে শত্রু মোকাবেলা করার নির্দেশ দেন। তখন অসহযোগ আন্দোলন শুরু হয়। অফিস আদালতের কাজকর্ম বন্ধ হয়ে যায়। আমরা ছাত্র সমাজ পরবর্তী আন্দোলন অর্থাৎ স্বাধীনতার যুদ্ধের জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করিতে থাকি।

২৫ মার্চ রাতে পাকিস্তানের সেনাবাহিনী আক্রমণ শুরু করে দিলে আমরা ছাত্রসমাজ পরের দিন থেকে পাকিস্তানির হামলা মোকাবিলার জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করতে থাকি এবং অস্ত্রশস্ত্র যোগাড় করতে চেষ্টা করি এবং রাতের বেলায় আমরা শহরের বাইরে গ্রামে গিয়ে অবস্থান করি এবং দিনে শহরে এসে সবার সাথে যোগাযোগ করি।

১৯৭১ সালে ২৬ তারিখ বিকালে কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র থেকে এম, এ হান্নান বঙ্গবন্ধুর পক্ষে স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। ২৬ তারিখের পর থেকে আমরা কালুরঘাটের পরে বোয়ালখালীতে অবস্থান করতে থাকি। দিনে শহরে এসে সবার সাথে যোগাযোগ করি। এইভাবে কয়েকদিন অতিক্রম করার পর আমরা ছাত্র নেতৃবৃন্দ তিনটি মাইক্রো নিয়ে রাতের বেলায় কালুরঘাট হয়ে কাপ্তাই রাস্তা দিয়া ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের হোস্টেলে রাত্রি যাপন করি এবং পরের দিন রাউজানের মধ্য দিয়ে ফটিকছড়িতে মির্জা মনছুরের বাড়িতে গিয়ে অবস্থান করি এবং পরের দিন আমরা রামগড়ে পৌঁছে সেখানে অবস্থান করি।

২ মে ১৯৭১ সাল পাকিস্তান বাহিনী তিন দিক থেকে রামগড় আক্রমণ করে দখলে নেয় এবং আমরা ওইদিন বিকেলে ফেনী নদী পার হয়ে সাবরুম শহরে অবস্থান করি। কয়েকদিন পর আমরা হরিনায় গিয়ে ক্যাম্প স্থাপন করে ট্রেনিং এ অবস্থান করি। আমাকে ১নং সেক্টরের স্টুডেন্ট মুবিলাইজার এর দায়িত্ব দেওয়া হয়। আমরা মেলিটারি ক্যাম্পের পাশা পাশি আরেকটা ক্যাম্প স্থাপন করি। সেখানে দেশের ভিতর থেকে আসা ছাত্র শ্রমিকদের ক্যাম্পে অবস্থান করে। কয়েক দিন পর পর বিভিন্ন ট্রেনিং ক্যাম্পে পাঠিয়ে ট্রেনিং দিয়ে ভিতরের গেড়িলা যুদ্ধ করার জন্য পাঠিয়ে দিই। ছাত্রলীগের কিছু কর্মী ও নেতাদেরকে বি.এল.এফ এর ট্রেনিং এর জন্য পাঠিয়ে দিই।

১৯৭১ সালে সেপ্টেম্বর এর শেষের দিকে প্রায় ৩০০ জন মুক্তিযোদ্ধা নিয়ে ৪ থানার কমান্ডার হিসাবে দায়িত্ব নিয়ে আমি দেশের ভিতর প্রবেশ করি। হাটহাজারী, রাউজান, রাঙ্গুনিয়া, ফটিকছড়ি থানা এফ এল এর দায়িত্ব থেকে অনেক গেরিলা যুদ্ধ পরিচালনা করা হয়। আমরা রাউজানের উত্তরে কচু পাড়া নামক পাহাড়ি জায়গায় ক্যাম্প স্থাপন করে অবস্থান করি এবং সেখানে থেকে কয়েকটি অপারেশন পরিচালনা করি। বিশেষভাবে ডিসেম্বর এর ১০ তারিখ হলদিয়া আমির হাটে অবস্থিত আর্মি ক্যাম্পে আক্রমণ করি এবং বেশ কিছু পাকিস্তানি আর্মি হতাহত হয়। উক্ত অপারেশনে আমাদের কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধা আহত হন। উক্ত অপারশনের দুই তিন দিন পর পাকিস্তানি সেনারা আমাদের ক্যাম্প আক্রমণ করে। আমরা বেরুলিয়া পুল ধ্বংসের জন্য এবং রাঙামাটি রোডে কয়েকটি অপারেশন পরিচালনা করি। ১৬ ডিসেম্বর বিকেলে পাকিস্তান বাহিনী আত্মসমর্পণের খবর পাওয়ার পর পর আমরা সবাই মিছিল করে পাহাড় থেকে রাউজান হেড কোয়ার্টার চলে আসি এবং বাংলাদেশের পাতাক উত্তোলন করি।

 

পূর্বকোণ/মামুন

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট