চট্টগ্রাম বৃহষ্পতিবার, ১৬ মে, ২০২৪

সর্বশেষ:

চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রুটে চলছে কেবল ঈদ স্পেশাল

আন্তঃনগর ট্রেন চালু হয়নি ৫ মাসেও

মিজানুর রহমান

২৯ এপ্রিল, ২০২৪ | ১১:৪০ পূর্বাহ্ণ

পর্যটন নগরী কক্সবাজারে ট্রেন চলাচল করছে পাঁচ মাস ধরে। তবে এখনও চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রুটে কোনো আন্তঃনগর ট্রেন চালু করতে পারেনি রেলওয়ে। এই রুটে এখন ‘ঈদ স্পেশাল’ নামে একটি ট্রেন অনিয়মিতভাবে চলছে। তবে এই ট্রেনও নিয়মিত করতে গড়িমসি করছে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। এতে বাড়ির আঙিনা ছুঁয়ে যাওয়া দোহাজারী-কক্সবাজার রেললাইনের সুফল পাচ্ছে না কক্সবাজারসহ দক্ষিণ চট্টগ্রামের মানুষ।

 

যাত্রীরা বলছেন- চালুর পর গত পাঁচ মাসে প্রমাণ হয়েছে কক্সবাজার হচ্ছে- সবচেয়ে লাভজনক রুট। চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রুটে যে স্পেশাল ট্রেন চলছে- সেটিও প্রতিদিন সোয়া লাখ টাকার বেশি আয় করছে। এরপরেও এই রুটে আন্তঃনগর ট্রেন চালু না হওয়াটা হতাশাজনক। জনপ্রতিনিধিদের জোরালো ভূমিকার অভাব, বাস মালিকদের কারসাজি এবং রেলভবনের কর্মকর্তাদের চট্টগ্রাম বিদ্বেষী মনোভাবের কারণে এটি হচ্ছে না।

 

রেলওয়ের শীর্ষ কর্মকর্তারা এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। কক্সবাজার থেকে ট্রেনে চট্টগ্রাম এসে গত শনিবার সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন রেলওয়ের মহাপরিচালক সরদার সাহাদাত আলী। এই রুটে ট্রেন চালুর বিষয়ে তিনি বলেন, আমরা নীতিগতভাবে একমত; চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রুটে ট্রেন দিতে হবে। এটা এক নম্বর প্রায়োরিটি। এই রুটে ট্রেন চালুর ডিমান্ডে আমাদের না নেই।

 

রেলওয়ের এই শীর্ষ কর্মকর্তা বলেন, ট্রেন চালু হলে মানুষের কষ্ট কম হবে। রেলওয়ের রাজস্ব আয়ও বাড়বে। এটা ঠিক। কিন্তু সমস্যাটা হচ্ছে জনবল ও ইঞ্জিন সংকট নিয়ে। ট্রেন আমরা চালাতে পারবো। কিন্তু সে ক্ষেত্রে ঢাকা-চট্টগ্রাম রুটের কনটেইনারবাহী একটি ট্রেন কম চালাতে হবে।

 

তবে রেলওয়ের একাধিক কর্মকর্তা পূর্বকোণকে জানিয়েছেন- এই মুহূর্তে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রুটে আন্তঃনগর ট্রেন চালু করতে কোনো সংকট নেই। নিয়মিত একটি আন্তঃনগর ট্রেন প্রতিদিন দুইবার যাতায়াত করলেও কোনো সংকট তৈরি হবে না। এখন ঈদ স্পেশাল নামে অনিয়মিতভাবে যে ট্রেন চলছে সেটিও আন্তঃনগর ট্রেন হিসেবে পরিচালনা করা সম্ভব। কেবল রেলভবনের সদিচ্ছা থাকলেই চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রুটে ট্রেন চালানো যাবে।

 

সংশ্লিষ্টরা জানান- দোহাজারী-কক্সবাজার রেললাইন গত নভেম্বরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উদ্বোধনের পর প্রথম এই রুটে বাণিজ্যিক ট্রেন চলাচল শুরু হয় গত ১ ডিসেম্বর। বিপুল যাত্রী চাহিদা থাকলেও গত পাঁচ মাস ধরে এই রুটে চলাচল করছে মাত্র দুটি ট্রেন। তাও চলছে কেবল ঢাকা-চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রুটে। ঢাকা-চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রুটে চলাচল করা কক্সবাজার এক্সপ্রেস ও পর্যটক এক্সপ্রেস বিরতিহীন হওয়ায় দক্ষিণ চট্টগ্রামের লোকজন দোহাজারী-কক্সবাজার রেললাইনের সুফল পাচ্ছেন না। এ নিয়ে ক্ষোভ রয়েছে স্থানীয়দের। চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রুটে নতুন ট্রেন চালুর বিষয়ে দীর্ঘদিন ধরে দাবি জানিয়ে আসছেন তারা।

 

এর বড় কারণ হচ্ছে- বিপুল চাহিদা থাকা সত্ত্বেও বিদ্যমান ব্যবস্থায় কক্সবাজার এক্সপ্রেস ও পর্যটক এক্সপ্রেসে চড়ে প্রতিদিন চট্টগ্রাম থেকে সরাসরি কক্সবাজার যাওয়ার সুযোগ পান মাত্র ১১৫ জন করে যাত্রী। ফলে এই রুটে স্বাভাবিক সময়েই ট্রেনের টিকিট পাওয়া যেন অনেকটা ‘সোনার হরিণ’ পাওয়ার সমান।

 

এমন বাস্তবতায় ঈদযাত্রাকে কেন্দ্র করে গত ৮ এপ্রিল চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রুটে একটি ঈদ স্পেশাল ট্রেন চালু করা হয়। ঈদের দিন বাদ দিয়ে সেটি চলে ১৪ এপ্রিল পর্যন্ত। এরপর ১৭ এপ্রিল থেকে ২৮ এপ্রিল পর্যন্ত এই ট্রেন ফের চলাচলের অনুমতি দেওয়া হয়। এখন এই মেয়াদ ২০ মে পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। ঈদ স্পেশাল ট্রেনটি কক্সবাজার স্পেশাল নাম দিয়ে চলাচল করবে।

 

বিভাগীয় রেলওয়ে ব্যবস্থাপক (ডিআরএম) সাইফুল ইসলাম পূর্বকোণকে বলেন, ঈদ স্পেশাল ট্রেনটি ২৮ এপ্রিল পর্যন্ত পরিচালনা করার অনুমতি ছিল। এখন সেটা আগামী ২০ মে পর্যন্ত পরিচালনার অনুমতি দেওয়া হয়েছে। এরপর রেলভবন থেকে যে নির্দেশনা আসবো সেভাবে কাজ করবো।

 

চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রুটের ঈদ স্পেশাল ট্রেনটি ১০/২০ লোড নিয়ে চলাচল করছে। ট্রেনটিতে সিট রয়েছে ৪৩৮টি। এরমধ্যে ১ম শ্রেণির সিট ৫৪টি, ১ম শ্রেণির চেয়ার ৫৪টি ও শোভন ৩৩০টি। এটি চট্টগ্রামের ষোলশহর, জানালিহাট, পটিয়া, দোহাজারী, সাতকানিয়া, চকরিয়া, ডুলাহাজারা ও রামুতে যাত্রা বিরতি দেয়।

 

রেলওয়ের বিভাগীয় বাণিজ্যিক কর্মকর্তা (ডিসিও) তারেক মো. ইমরান পূর্বকোণকে জানান, ৮ থেকে ২৮ এপ্রিলের মধ্যে ১১, ১৫ ও ১৬ এপ্রিল তিনদিন ঈদ স্পেশাল ট্রেন চলাচল বন্ধ ছিল। এ সময় মোট ১৮ দিন চলাচল করে ঈদ স্পেশাল। এই ১৮ দিনে এই ট্রেন দিয়ে ৪২ লাখ টাকা রাজস্ব আদায় করেছে রেলওয়ে।

 

বাস মালিকদের সুবিধা দিতেই ট্রেন চালু করা হচ্ছে না বলে মনে করেন যাাত্রী অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের সাধারণ সম্পাদক সামসুদ্দীন চৌধুরী। তিনি পূর্বকোণকে বলেন, বাসে এই রুটে প্রতিদিন ৪০-৫০ হাজার যাত্রী চলাচল করে। এই যাত্রীদের স্বস্তিতে যাতায়াতের জন্যই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কক্সবাজার পর্যন্ত রেলরুট সম্প্রসারণ করেছেন। কিন্তু রেলওয়ের কিছু কর্মকর্তা প্রধানমন্ত্রীর উদ্যোগটি বিতর্কিত করার চেষ্টা চালাচ্ছেন।

পূর্বকোণ/পিআর 

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট