চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

সরেজমিনে আনোয়ারা: বর্জ্যে ঢাকা ৬ বধ্যভূমি

এম আনোয়ারুল হক, আনোয়ারা

৬ মার্চ, ২০২১ | ২:১৪ অপরাহ্ণ

১৯৭১-এ পাকবাহিনীর নির্বিচারে হত্যাকান্ডের ঘটনাগুলো স্মৃতিচারণ করলে এখনো শিউরে উঠে শরীর। গণহত্যার সেই স্থানগুলোকে তখন চিহ্নিত করা হয় বধ্যভূমি হিসেবে। চট্টগ্রামের আনোয়ারায় রয়েছে এমন সাতটি বধ্যভূমি। যা এখন অযত্ন আর অবহেলায় ঢেকে গেছে অবর্জনাতে। এই স্মৃতিচিহ্নের এমন পরিস্থিতিতেও নেই কোন সংস্কার ও সংরক্ষণের উদ্যেগ।

যা নিয়ে ক্ষোভ দেখা দিয়েছে মুক্তিযোদ্ধা ও স্থানীয়দের মাঝে। জানিয়েছেন, দ্রুত অরক্ষিত এসব স্মৃতিচিহ্নগুলোকে সংরক্ষণের দাবি।  আনোয়ারার বধ্যভূমিগুলো হচ্ছে, বন্দর বধ্যভূমি, মহাল খান বাজার, বারশত সুরমা পুকুরপাড়, পরৈকোড়া, আনোয়ারা জয়কালী বাজার,  খিলপাড়া ও পূর্ব বারখাইন বধ্যভূমি। শুধুমাত্র বন্দর বধ্যভূমি ছাড়া বাকিগুলো আবর্জনায় মুছে যাওয়ার দৃশ্য দেখা যায় সরেজমিনে। তাই জাতীয় দিবসেও এই বধ্যভূমিগুলোকে ঘিরে পালন হয় না কোন কর্মসূচি।

ইতিহাসের তথ্য মতে, ১৯৭১ সালে ৪ অক্টোবর আনোয়ারা উপজেলার সদরে হামলা চালায় পাক সেনারা। নিহত হন ডাক্তার সুখেন্দু চৌধুরী, লালু চৌধুরী, সতীশ সেন, ভোলানাথ চক্রবর্তী, রজনী চক্রবর্তী ও ফকির সরদার। পরে লাশগুলো জয়কালী বাজারে একটি গর্তে পুঁতে ফেলে রাজাকররা। গণকবরের ওই স্থানটিকে স্বীকৃতি দেয়া হয় বধ্যভূমি হিসেবে। কিন্তু আজ সেই বধ্যভূমির পাশ ঘিরে গড়ে উঠেছে দোকান পাঠ। নেই কোন সংস্কার ও সংরক্ষণের উদ্যোগ।

এছাড়াও ওই গ্রামে গোপাল চন্দ্র বিশ্বাস নামে এক ডাক্তারকে হত্যা করে বাড়ির পুকুর পাড়ে মাটি চাপা দিয়েছিল রাজাকাররা।

সরেজমিনে জয়কালী বাজার বধ্যভূমিতে গেলে দেখা যায়, স্মৃতিস্তম্ভের দু’পাশে গড়ে উঠেছে দোকান। দোকানের কারণে দূর থেকে বোঝার উপায় নেই যে এখানে কোন বধ্যভূমির স্মৃতিস্তম্ভ আছে। প্রবেশের পথে কাঁটা ও আবর্জনায় ভরা। প্রবেশের পথটি দিয়ে কোনমতে একজন যেতে পারে।

মুক্তিযোদ্ধা লিয়াকত আলী জানান, ১৯৭১ সালের ২১ মে বন্দরে পাকবাহিনী ১৫৬ জনকে হত্যা করেছিল। শহীদদের স্মৃতি রক্ষার্থে হত্যাকা-ের স্থানে ৫০ শতক জায়গার ওপর বধ্যভূমি স্মৃতি কমপেক্স গড়ে তোলা হচ্ছে।  ২০০৭  সাল থেকে স্মৃতি কমপ্লেক্সের কার্যক্রম শুরু করা হয়।  এরইমধ্যে ১ কোটি ১২  লাখ টাকা ব্যয় করা হয়েছে। আওয়ামী লীগের  সাবেক প্রেসিডিয়াম সদস্য  প্রয়াত আখতারুজ্জামান চৌধুরী বাবু এ স্মৃতি কমপ্লেক্স তৈরিতে অনন্য ভূমিকা রেখেছিলেন। কিন্তু মহাল খান বাজারের দক্ষিণে আরও দুটি বধ্যভূমি রয়েছে। সেগুলো সংরক্ষণ না করায় আবর্জনা ও ঝোঁপে ঢেকে যাচ্ছে।

মুক্তিযোদ্ধা মো. শাহ আলম জানান, পাক সেনাদের হাতে পরৈকোড়ায় ১৯৭১ সালের ২১ মে ১৭৬ জন, মহাল খান বাজারে ১৬ জন, ৪ অক্টোবর জয়কালীবাজারে ৭ জন, বারশত সুরমা পুকুর পাড়ে ৮ জন, ২১ এপ্রিল  খিলপাড়ায় ৯ জন, ১৭ নভেম্বর পূর্ব বারখাইনে ৭ জন নিহত হয়। তাদের স্মৃতিতে যে বধ্যভূমি করা হয়েছিল সেগুলোর আজ করুণ দশা।

মুক্তিযোদ্ধা সংসদের ভারপ্রাপ্ত কমান্ডার আব্দুল মান্নান জানান, স্বাধীনতা দিবস ও বিজয় দিবসে বন্দর বধ্যভূমিতে কর্মসূচি পালন করা হয়। বারশত সুরমা পুকুর পাড়ে শহীদ রুস্তুম আলীর কবরে শ্রদ্ধাঞ্জলিও জানানো হয়।  তবে অন্য স্মৃতিস্তম্ভে কোন ধরনের কর্মসূচি পালনা হয় না বলে নিশ্চিত করেছেন স্থানীয়রা।

পূর্বকোণ/এএ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট