চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪

খুনে অভিযুক্ত না হয়েও জেল খাটছে ২ সহোদর

নাজিম মুহাম্মদ 

৫ মার্চ, ২০২১ | ১২:৪৯ অপরাহ্ণ

খুনে অভিযুক্ত না হয়েও খুনের অপরাধে জেল খাটছে দুই সহোদর।  খুনে অভিযুক্ত মূল ব্যক্তি ধরা পড়েছে। তবে আইনি জটিতলতায় তিনমাসেও কারামুক্তি মেলেনি দুই ভাইয়ের। কারাবন্দী দুই ভাই হলেন, পটিয়ার কেলিশহর গ্রামের দিলীপ চৌধুরীর ছেলে অনুপম চৌধুরী (৩৮) ও বাসুদেব চৌধুরী (৩৫)। নিজ বাসা থেকে গৃহবধূর লাশ উদ্ধারের ঘটনায় স্বামী, ভাসুরকে  গ্রেপ্তার করেছিল পুলিশ। ঘটনার দুই মাস পর পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) অপর এক ব্যক্তিকে গ্রেপ্তারের পর বলছে, হত্যাকা-ে দুই ভাই জড়িত ছিলেন না।

এ ঘটনায় পিবিআইর হাতে গ্রেপ্তার জাকির হোসাইনের (২৭) বাড়ি লক্ষ্মীপুরের রামগতিতে হলেও পরিবারসহ তারা থাকেন রাঙামাটির কাপ্তাই উপজেলার চন্দ্রঘোনায়। পিবিআই’র দাবি, এই জাকিরই গৃহবধূ সুপ্তি মল্লিককে হত্যা করেছে। জাকির বর্তমানে কারাগারে বন্দী রয়েছে। জাকির গত ১৪ জানুয়ারি চট্টগ্রাম মহানগর হাকিম শফিউদ্দিনের আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দিও দিয়েছে বলে জানিয়েছেন পিবিআই চট্টগ্রাম মেট্টোর পরিদর্শক সন্তোষ কুমার চাকমা। তিনি জানান, গত ১৩ জানুয়ারি রাতে ঢাকার আশুলিয়া থেকে জাকিরকে গ্রেপ্তার করা হয়। পাশাপাশি সুপ্তির দুইটি মোবাইল ফোনও উদ্ধার করা হয়। গতবছরের ৪ নভেম্বর রাতে নগরীর ডবলমুরিং থানার পানওয়ালা পাড়ার একটি বাসা থেকে পুলিশ সুপ্তি মল্লিকের লাশ উদ্ধার করে। লাশ উদ্ধারের পর পুলিশ জানিয়েছিল সুপ্তিকে শ্বাসরোধে হত্যা করা হয়েছে।

এ ঘটনায় সুপ্তির বাবা সাধন মল্লিক ডবলমুরিং থানায় একটি হত্যা মামলা করেন। মামলায় সুপ্তির স্বামী বাসুদেব চৌধুরী ও ভাসুর অনুপম চৌধুরীকে আসামি করা হয়। পুলিশ তাদের গ্রেপ্তার করে কারাগারেও পাঠায়। সুপ্তির পরিবারের সদস্যরা লাশ উদ্ধারের পর জানিয়েছিল ১৩ আগস্ট সুপ্তির সঙ্গে বাসুদেবের বিয়ে হয়। পিবিআই কর্মকর্তা সন্তোষ জানান, লাশ উদ্ধারের পর থানা পুলিশের পাশাপাশি পিবিআই ছায়া তদন্ত শুরু করে। পরবর্তীতে মামলাটি পিবিআই অধিগ্রহণ করে পুরোপুরি তদন্তভার নেয়। তাদের তদন্ত শুরুর পর তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় অবস্থান নিশ্চিত করে আশুলিয়ার নিশ্চিন্তপুর এলাকা থেকে জাকিরকে  গ্রেপ্তার করা হয়।

“জাকির জানিয়েছে, চন্দ্রঘোনায় কাছাকাছি বাড়িতে থাকার সুবাদে ২০১৪ সাল থেকে সুপ্তির সঙ্গে তার প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল। ২০১৮ সালে তারা পালিয়ে বিয়ে করে। কয়েক মাস সংসার করার পর তাদের মধ্যে ছাড়াছাড়ি হয়ে যায়। পরবর্তীতে সুপ্তি পারিবারিকভাবে আবার বিয়ে করে। “ঘটনার দিন সুপ্তি ফোন করে জাকিরকে বাসায় ডেকে নেন। এসময় তাদের মধ্যে কথা কাটাকাটির জেরে জাকির গলায় গামছা পেঁচিয়ে সুপ্তিকে শ্বাসরোধে হত্যা করে পালিয়ে যায়। সন্দেহের বাইরে থাকায় সুপ্তির মোবাইল ফোন সেটগুলোও নিয়ে যায় এবং ঢাকায় আত্মগোপন করে।” পিবিআই কর্মকর্তা সন্তোষ বলেন, “জকির একাই সুপ্তিকে খুন করেছে বলে আমাদের তদন্তে এসেছে। এ হত্যাকাণ্ডে তার স্বামী বাসুদেব ও ভাসুর অনুপমের কোনো সংশ্লিষ্টতা পাওয়া যায়নি। তাদের মামলা  থেকে অব্যাহতি দিতে আমরা আদালতে প্রতিবেদন দেব।

এজাহারে যা বলা হয়েছে : গত ৫ নভেম্বর ডবলমুরিং থানায় দায়ের করা মামলায় নিহত সুপ্তির বাবা সাধন কুমার মল্লিক বলেন, তার মেয়েকে ২০২০ সালের ১৩ আগস্ট বাসুদেবের সাথে বিয়ে দেয়। বিয়ের পর সুপ্তি জানতে পারে  বাসুদেব পরকীয়ায় জড়িত। এ ঘটনার পর থেকে সুপ্তিকে প্রায় সময় নির্যাতন করতো বাসুদেব। বিয়ের দশদিন পর ডবলমুরিং থানার পানওয়ালা পাড়ার ভাড়া বাসায় নিয়ে আসে। ওই বাসায় ভাসুর অনুপম চৌধুরীও থাকতো। বাসুদেব ওষুধের  ফার্মেসি  ও অনুপম সেলুনে চাকরি করে। তারা দুজনে মিলেই সুপ্তিকে শারীরিকভাবে নির্যাতন করতো।  ৪ নভেম্বর (২০২০ সাল) রাত আটটায় পানওয়ালা পাড়ায় বাসায় গিয়ে দেখতে পায় সুপ্তি বাসার পেছনের রুমে মৃত অবস্থায় চিৎ হয়ে পড়ে আছে। সুপ্তির বাবার দাবি- তার মেয়েকে জামাই ও ভাসুর মিলে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করেছে। দুজনকে মামলার এজাহারভুক্ত আসামি করায় পুলিশ গ্রেপ্তার করে।

পূর্বকোণ/এএ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট