ওজন স্কেল চাক্তাই-খাতুনগঞ্জের ব্যবসায়ীদের জন্য গলার ফাঁস হয়ে দাঁড়িয়েছে। সীতাকুণ্ডের বড় দারোগাহাট এলাকায় গাড়ির ওজন পরিমাপক যন্ত্র স্থাপিত হয়েছে আগে। এই স্কেলটি সরানোর দাবির মাঝেই ফৌজদারহাট এলাকায় আরও একটি স্কেল বসানোর উদ্যোগ নিয়েছে সড়ক ও জনপথ বিভাগ (সওজ)। একারণে দেশের অন্যান্য এলাকার ব্যবসায়ীদের সাথে অসম প্রতিযোগিতায় পড়ে ব্যবসায়ীরা বাণিজ্যিক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন। চাক্তাই-খাতুনগঞ্জের ব্যবসায়ীদের সাথে আলাপকালে তারা জানান, বড় দারোগাহাটে একটি ওজন পরিমাপক যন্ত্র আগে থেকেই রয়েছে। একই উপজেলায় ৩৪ কিলোমিটার দূরে আরেকটি বসানোর প্রক্রিয়া শুরু করেছে সওজ। অথচ দেশের অন্য কোথাও মহাসড়কে তা নেই।
ভোগ্যপণ্যের সবচেয়ে বেশি ব্যবসা করেন চাক্তাই-খাতুনগঞ্জ এবং সংলগ্ন বাণিজ্যিক এলাকার ব্যবসায়ীরা। তাই স্কেলের কারণে তারাই সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত। আগে প্রতি গাড়িতে ২০ থেকে ৩০ টন পণ্য আনা-নেয়া করা হলেও ওজন স্কেল চালুর পর এখন ১৩ টনের বেশি পণ্য পরিবহন করা যাচ্ছে না। মালামাল আনা নেওয়ায় দ্বিমুখী পরিবহন ব্যয় বাড়ার কারণে খরচ বেশি পড়ায় চট্টগ্রামের মালামাল বাজারজাত করতে পাইকাররা আগ্রহ হারাচ্ছেন। তারা জানান, চট্টগ্রাম বন্দরকে কেন্দ্র করে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক দিয়ে দেশের সবচেয়ে বেশি পণ্যবাহী গাড়ি আসা-যাওয়া করে। আবার চট্টগ্রামের ভারী শিল্পকারখানার উৎপাদিত পণ্যও সারাদেশে নেয়া হয় এই পথে। সারাদেশের ব্যবসায়ীদের জন্য সমান সুযোগ প্রদানে অন্যান্য মহাসড়কে স্কেল স্থাপন না করা পর্যন্ত চট্টগ্রাম-ঢাকা মহাসড়কের ওজন স্কেল বন্ধ রাখার জন্য এ অঞ্চলের ব্যবসায়ীরা আন্দোলনও করেছে। দাবি না মেনে বরং ফৌজদারহাটে আরো একটি স্কেল বসানো হচ্ছে। এনিয়ে খাতুনগঞ্জ ট্রেড এন্ড ইন্ডাস্ট্রিজ এসোসিয়েশন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রীর কাছে চিঠিও দিয়েছে। ওজন স্কেল স্থাপনের সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করে নিতে চট্টগ্রাম চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রিজের সভাপতি মাহবুবুল আলমও মন্ত্রীর কাছে চিঠি দিয়েছেন।
গত ১০ ফেব্রুয়ারি দেয়া চিঠিতে তিনি বলেন, ইতিপূর্বে ওজন স্কেল বসানোর কারণে শিল্পের কাঁচামাল ও ভোগ্যপণ্য পরিবহন খরচ অনেকাংশে বৃদ্ধি পেয়েছে। নতুন করে ফৌজদারহাট এলাকায় আরও একটি স্কেল বসানো হলে ভবিষ্যতে চট্টগ্রামের ব্যবসায়ীরা ব্যাপকভাবে বাণিজ্যিক ক্ষতির সম্মুখীন হবেন। একারণে চট্টগ্রামের ব্যবসায়ীরা ব্যবসা গুটিয়ে অন্যত্র চলে যেতে বাধ্য হবেন। যা এ অঞ্চলের শত বছরের বাণিজ্যিক ঐতিহ্যকে ব্যাহত করবে। এ ধরণের পদক্ষেপ সারাদেশে ভারসাম্যহীন বাণিজ্যিক পরিবেশ সৃষ্টি করবে। সরকার যেখানে কস্ট অব ডুয়িং বিজনেস কমিয়ে আনার ব্যাপারে নিরন্তর প্রচেষ্টা চালাচ্ছে, সেখানে এ ধরনের পদক্ষেপ চট্টগ্রামের ব্যবসার জন্য সহায়ক হতে পারে না। চট্টগ্রামের ব্যবসায়ীদের অসম প্রতিযোগিতা থেকে রক্ষার লক্ষ্যে ফৌজদারহাটে নতুন স্কেল স্থাপন না করার দাবি জানান তিনি।
আন্তঃজেলা ট্রাক ও কভার্ডভ্যান মালিক সমিতির একাধিক সদস্যের সাথে কথা বলে জানা গেছে, চট্টগ্রাম থেকে মালামাল আনা নেওয়ার জন্য আগে দৈনিক ১০ থেকে ১২ হাজার গাড়ির প্রয়োজন হত। এখন প্রতি গাড়িতে আগের মত পণ্য পরিবহন সম্ভব হচ্ছে না বলে দ্বিগুণ ট্রিপ লাগছে।
খাতুনগঞ্জ ট্রেড এন্ড ইন্ডাস্ট্রিজ এসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক ছৈয়দ ছগীর আহমদ বলেন, দেশের অন্যান্য অঞ্চলের ব্যবসায়ীদের তুলনায় বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন তারা। একারণে দেশে ভারসাম্যহীন বাণিজ্য পরিস্থিতি সৃষ্টি হচ্ছে। দুটো ওজন স্কেলের কারণে পণ্য পরিবহনে ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় অন্য জেলার ব্যবসায়ীরা চট্টগ্রাম থেকে মালামাল কেনা বন্ধ করে দিয়েছে।
চট্টগ্রাম চাল ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক ওমর আজম বলেন, ওজন স্কেলের কারণে চট্টগ্রামের ব্যবসায়ীদের পিঠ দেয়ালে ঠেকে গেছে।
পূর্বকোণ/এএ