চট্টগ্রাম শনিবার, ২৭ এপ্রিল, ২০২৪

পুরোনো তালিকায় নতুন ছুতো

মুহাম্মদ নাজিম উদ্দিন 

১৯ ফেব্রুয়ারি, ২০২১ | ১২:২৭ অপরাহ্ণ

বোয়ালখালী পৌরসভার মেয়াদ শেষ হয় ২০১৯ সালের ১৯ জুন। মামলার কারণে ঝুলে রয়েছে নির্বাচন। নির্বাচন কমিশন বলছে, ভোটার সংক্রান্ত দুটি মামলার কারণে নির্বাচন পিছিয়ে গেছে। ২০১৯ সালে ভোটার জটিলতার বিষয় নিষ্পত্তি করা হয়েছিল। বর্তমানে একই ছুতোয় নতুন আরেকটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। তাও নিষ্পত্তির জন্য প্রতিবেদন দিয়েছে স্থানীয় নির্বাচন কর্মকর্তা। অথচ এই ভোটার তালিকায় অনুষ্ঠিত হয়েছিল গত পৌর নির্বাচন। পুরোনো তালিকার খুঁত খুঁজে নতুন ছুতোয় আটকে দেওয়া হচ্ছে নির্বাচন।  এদিকে, গত বুধবার দেশের নয় পৌরসভায় নির্বাচন অনুষ্ঠানের সিদ্ধান্ত নেয় নির্বাচন কমিশন। মেয়াদোত্তীর্ণের পরও বোয়ালখালীর নাম না থাকায় হতাশ নির্বাচনে আগ্রহী পদপ্রার্থীরা।

জেলা নির্বাচন কার্যালয় সূত্র জানায়, পশ্চিম গোমদন্ডীর সাতগড়িয়াপাড়ার কিছু ভোটার বশরতনগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে অন্তর্ভুক্ত হয়ে যায়। সেই জটিলতায় আটকে রয়েছে পৌর নির্বাচন। তবে এসব ভোটারকে পৌর এলাকা থেকে সাবেক ইউনিয়ন পরিষদে স্থানান্তরের প্রস্তাবনা দিয়েছে স্থানীয় নির্বাচন কর্মকর্তা। বোয়ালখালী উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মো. নুরুল ইসলাম পূর্বকোণকে বলেন, ‘ভোটার জটিলতা বিষয়ে দুটি অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। একটি অভিযোগ নিষ্পত্তি করা হয়েছে। একইভাবে আরেকটি অভিযোগ দাখিল করা হয়। অভিযোগের সত্যতা পাওয়ায় পৌর এলাকা থেকে ১৭০ জন ভোটারকে চরখিজিরপুর ইউনিয়নে স্থানান্তরের প্রস্তাবনা দিয়েছি। এখন সিদ্ধান্ত নেবে নির্বাচন কমিশন’। তিনি বলেন, স্থানান্তর প্রক্রিয়ার পর নির্বাচন নিয়ে আর কোনো বাধা থাকবে না।

জেলার পাঁচ পৌরসভার নির্বাচন শেষ হয়েছে। চলতি মাসে আরও চার পৌরসভার নির্বাচন শেষ হচ্ছে। মেয়াদ শেষ হওয়ার পরও বোয়ালখালী পৌর নির্বাচন নিয়ে গোলকধাঁধা সৃষ্টি হয়েছে।

জেলা নির্বাচন কার্যালয় থেকে পাওয়া তথ্যে দেখা যায়, ২০১৪ সালের ২১ মে বোয়ালখালী পৌরসভার নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। ২০১৯ সালের ১৯ জুন পরিষদের মেয়াদ শেষ হয়। কিন্তু ভোটার সংক্রান্ত মামলার কারণে ঝুলে যায় নির্বাচন।

পৌরসভায় আইনে, পরিষদের মেয়াদ শেষ হওয়ার ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠানের বাধ্যবাধকতা রয়েছে।

২০১৯ সালে ভোটার জটিলতা মামলার শুনানি শেষে কমিশনে প্রতিবেদন পাঠানো হয়। তখন নির্বাচনের আশা দেখেছিল পৌরবাসী। কিন্তু সেই অভিযোগ শেষ হতে না হতেই পুরোনো কাসুন্দি নিয়ে নতুন অভিযোগ দায়ের কথা হয়। তাও ভোটার জটিলতা নিয়ে।

আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশী উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি মো. শফিউর রহমান বলেন, ‘দুরভিসন্ধিমূলকভাবে মামলা করে নির্বাচন পেছানো হচ্ছে। এতে উন্নয়ন বঞ্চিত হচ্ছে পৌরবাসী। আশা করছি, নির্বাচন কমিশন আগামী তফসিলে বোয়ালখালী পৌরসভা অন্তর্ভুক্ত করবে’।

তবে ভোটার জটিলতা সৃষ্টির নেপথ্যে পৌর মেয়র হাজি আবুল কালাম আবুকে দায়ী করছেন সরকারদলীয় পদপ্রত্যাশীরা।

পৌর মেয়র হাজি আবুল কালাম আবু বলেন, ‘জটিলতা থাকলে তা নিষ্পত্তি করে নির্বাচনের উদ্যোগ নিবে নির্বাচন কমিশন’।

পৌরসভা আইনের ৮ ধারা (১) এর ৬ ধারায় বলা হয়েছে, পৌরসভা গঠনের পর প্রথম সভা থেকে পরবর্তী ৫ বছর মেয়াদ থাকবে। এ আইনে আরও বলা হয়েছে, মেয়াদ শেষ হওয়ার পরও নতুন নির্বাচিত পৌরসভা প্রথম সভায় মিলিত না হওয়া পর্যন্ত আগের পরিষদ দায়িত্ব পালন করবেন।

গত বুধবার নির্বাচন কমিশন দেশের ৩২৩ ইউনিয়ন পরিষদ ও নয় পৌরসভা নির্বাচনে সিদ্ধান্ত নেয়। ১১ এপ্রিল নির্বাচনের কথা রয়েছে। মার্চের প্রথম সপ্তাহে তফসিল ঘোষণার ইঙ্গিত দিয়েছে কমিশন। এই ৯ পৌরসভার মধ্যে জেলার বোয়ালখালী ও বাঁশখালী পৌরসভার তালিকা নেই। ২০১৫ সালের ৩০ ডিসেম্বর বাঁশখালী পৌরসভার নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। মেয়াদ শেষ হচ্ছে আজ (১৮ ফেব্রুয়ারি)।

পূর্বকোণ/এএ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট