চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪

নেই ভয়, ভ্যাকসিনে করোনা জয়

ইমাম হোসাইন রাজু 

৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২১ | ১২:১২ অপরাহ্ণ

করোনার টিকা কবে আসছে, এ নিয়ে আলোচনা চলেছে দীর্ঘদিন। টিকা আসার পর এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নিয়েও সরব ছিল বিশ্ব- এমনকি বাংলাদেশও। টিকা গ্রহণের ভীতি আর অন্তহীন দ্বিধার মধ্যেই গতকাল রবিবার চট্টগ্রামসহ সারাদেশে উৎসবের মেজাজে করোনার টিকা প্রদান শুরু হয়েছে। চট্টগ্রাম নগরী ও বিভিন্ন উপজেলায় গতকাল একদিনে এক হাজার ৯০ ব্যক্তি টিকা গ্রহণ করেছেন।  সব ভয়-ভীতি আর দ্বিধাকে পরাজিত করে চট্টগ্রামের করোনার সম্মুখযোদ্ধারা মেতেছিলেন অন্যরকম আনন্দে। অন্যদের মধ্যে টিকা নিয়েছেন মুক্তিযোদ্ধা, চিকিৎসক, রাজনীতিবিদ, গণমাধ্যমকর্মী, বয়স্ক এবং স্বাস্থ্যকর্মীরা। সম্মুখযোদ্ধাদের টিকাদানের মধ্য দিয়েই শুরু হয় গণহারে টিকাদান কর্মযজ্ঞ। এর মধ্য দিয়ে বিশ্বের বিপর্যস্ত কয়েকটি দেশের সঙ্গে করোনা নির্মূলে শামিল হলো লাল সবুজের বাংলাদেশ।

গতকাল রবিবার সকাল ১০ টা ৩৯ মিনিটে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে প্রথম টিকা নিয়ে কর্মসূচির উদ্বোধন করেন শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল। শিক্ষা উপমন্ত্রীর টিকা গ্রহণের পর একইদিন টিকা নেন প্রবীণ রাজনীতিবিদ সাবেক মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন এমপি। এছাড়াও দায়িত্বশীল বেশ কয়েকজন কর্মকর্তা স্বপ্রণোদিত হয়ে টিকা নেন। তাদের টিকা গ্রহণের পরই চিকিৎসক-স্বাস্থ্যকর্মীসহ অগ্রাধিকার তালিকাভুক্তরাও একে একে টিকা গ্রহণ করেন চমেক হাসপাতালে স্থাপিত কেন্দ্রে। এ কেন্দ্র ছাড়াও স্বল্প পরিসরে চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে শুরু হয় টিকাদান কার্যক্রম। একই দিনে চট্টগ্রামের সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যরাও করোনার টিকা গ্রহণ করেন । সবমিলিয়ে চট্টগ্রামে মোট ২০ কেন্দ্রে এদিন ১ হাজার ৯০ জনকে টিকা প্রদান করা হয়। এরমধ্যে নগরীর ৬ কেন্দ্রে টিকা নেন ৪২৩ জন। আর ১৪ উপজেলার কেন্দ্রে ৬৬৭ জন টিকা গ্রহণ করেন।

বিশিষ্টজনের মধ্যে টিকা নিলেন যারা

শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল ছাড়াও চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে সকাল ১১টা ২০ মিনিটে টিকা দেন বীর মুক্তিযোদ্ধা ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন এমপি ও তার স্ত্রী  আয়েশা সুলতানা। তারও আগে ১০টা ৪১ মিনিটে টিকা গ্রহণ করেন চমেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এস এম হুমায়ুন কবির, ১০টা ৪৩ মিনিটে চসিকের প্রধান স্বাস্থ্যকর্মকর্তা ডা. সেলিম আকতার চৌধুরী, ১০টা ৪৬ মিনিটে বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ডা. হাসান শাহরিয়ার কবির, ১০টা ৪৭ মিনিটে সিভিল সার্জন ডা. সেখ ফজলে রাব্বি, ১০টা ৪৯ মিনিটে জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ও ফিল্ড হাসপাতালের উদ্যোক্তা ডা. বিদ্যুৎ বড়ুয়া, ১০টা ৫২ মিনিটে চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি মো. আনোয়ার হোসেন।

লক্ষ্যমাত্রার দ্বিগুণ টিকা প্রদান

আনুষ্ঠানিকভাবে নগরীর দুটি ও উপজেলার ১৪টি কেন্দ্রে টিকা কার্যক্রম উদ্বোধন করার কথা থাকলেও পরবর্তীতে সামরিক বাহিনীসহ সর্বমোট ২০ কেন্দ্রে চলে এ কার্যক্রম। যদিও প্রথম দিন হিসেবে স্বাস্থ্য বিভাগের ১৪ উপজেলা ও নগরীর প্রধান দুই কেন্দ্রসহ ১৬ কেন্দ্রের টিকাদানের লক্ষ্যমাত্রা ছিল পাঁচশ’। তবে টিকাদানে আগ্রহ থাকায় কেন্দ্রে আসা কাউকেই ফেরত পাঠানো হয়নি। এ দিন ২০ কেন্দ্রে ১ হাজার ৯০ জনকে দেয়া হয় করোনার টিকা। ফলে লক্ষ্যমাত্রা দ্বিগুণের বেশিতে পৌঁছে। এরমধ্যে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে একশ’ জনের শরীরে টিকা প্রদানের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ থাকলেও দ্বিগুণের বেশি মানুষকে দেয়া হয় এ টিকা।

এ প্রসঙ্গে চট্টগ্রাম বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ডা. হাসান শাহরিয়ার কবির বলেন, প্রথম দিন হিসেবে সীমিত পরিসরে টিকা দেয়ার পরিকল্পনা নেয়া হয়েছিল। যদিও মানুষের উৎসাহ ছিল প্রচুর। তাই যারাই কেন্দ্রে এসেছে, তাদের কাউকে ফেরত পাঠানো হয়নি। সবাইকেই টিকা দেয়া হয়েছে।

নগরীর ৬ কেন্দ্রে টিকা নিলেন ৪২৩ জন

চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের আওতাধীন ছয় কেন্দ্রে টিকাদান কার্যক্রম শুরু হয়। এরমধ্যে প্রধান কেন্দ্র হিসেবে খ্যাত চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে ২৩৫ জনকে টিকা দেয়া হয়েছে। এছাড়া চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে ৪০ জন, নেভী হাসপাতালে ৫০ জন, বিমানবাহিনী হাসপাতালে ৫০ জন, সিএমইচে ২৪ জন এবং বাংলাদেশ মিলিটারি একাডেমি কেন্দ্রে ২০ জনকে টিকা প্রদান করা হয়।

১৪ উপজেলায় টিকা নিলেন ৬৬৭ জন

চট্টগ্রামের ১৪ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে রবিবার ৬৬৭ জন করোনা যোদ্ধাদের টিকা প্রদান করা হয়। এরমধ্যে লোহাগাড়ায় ২০ জন, সাতকানিয়ায় ৪০ জন, চন্দনাইশে ২০ জন, পটিয়ায় ৭০ জন, বোয়ালখালীতে ৫০ জন, বাঁশখালীতে ৪০ জন, আনোয়ারায় ৭০ জন, হাটহাজারীতে ১৫০ জন, রাউজানে ১০ জন, রাঙ্গুনিয়ায় ৭০ জন, ফটিকছড়িতে ১৮ জন, সীতাকু-ে ৩৯ জন, মিরসরাইয়ে ৫০ জন  এবং সন্দ্বীপে ২০ জনকে টিকা দেয়া হয়।

টিকা গ্রহণকারীর ৭৬ শতাংশই পুরুষ

প্রথম দিনে পঞ্চাশোর্ধ্ব সম্মুখসারির যোদ্ধা করোনার টিকা গ্রহণ করেন। নগরীর ৬ কেন্দ্র ও উপজেলার ১৪ কেন্দ্রে প্রথমদিন ১ হাজার ৯০ জনকে টিকা প্রদান করা হয়। এরমধ্যে ৮৩৭ জনই ছিল পুরুষ। অর্থাৎ মোট টিকা গ্রহণকারীর ৭৬ দশমিক ৭৮ শতাংশ পুরুষই উদ্বোধনের দিন টিকা নিয়েছেন। এরমধ্যে সবচেয়ে বেশি টিকা গ্রহণ করেছেন চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে। এ কেন্দ্রেই টিকা নিয়েছেন ৪২৩ জন পুরুষ।

পূর্বকোণ/এএ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট