চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

প্রযুক্তির যুগেও ফুরায়নি গ্রন্থাগারের আবেদন

মরিয়ম জাহান মুন্নী 

৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২১ | ৫:৫০ অপরাহ্ণ

শিশু থেকে তরুণ। আছেন প্রবীণও। কেউ বুক শেলফ বা বইয়ের তাকে তাকে পছন্দের বই খুঁজছিলেন। কেউ ব্যস্ত বইয়ের পাতা উল্টাতে। অনেকে আবার মগ্ন গল্প-কবিতা-উপন্যাস পড়ায়।

গতকাল বৃহস্পতিবার পড়ন্ত বিকেলে এই চিত্র দেখা গেল নগরীর লালদীঘির চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন পাবলিক লাইব্রেরিতে। এই গ্রন্থাগারে এভাবেই প্রতিদিন বইপ্রেমীদের আনাগোণায় সরব থাকে। প্রায় ১১৭ বছরের পুরোনো চট্টগ্রামের এ গ্রন্থাগারে তাকে তাকে সাজানো আছে নানান ধরণের বই। নতুন ভবন নির্মাণের পর গত বছরে ১৪ ডিসেম্বর পুনরায় এটির উদ্বোধন করা হয়। এই গ্রন্থাগারে নতুন বই যেমন রয়েছে তেমনি রয়েছে শতবছরের পুরোনো বইও। সবমিলিয়ে প্রায় ৪৫ হাজারের মত বইয়ে সমৃদ্ধ এই গ্রন্থাগারটি। নতুন উদ্যোমে চালু হওয়ার পর এই গ্রন্থাগার নিয়ে পাঠকদের আগ্রহও বেড়েছে বলে জানালেন গ্রন্থাগারের পরিচালক সাইফুদ্দিন আহমেদ সাকী।

চাচার হাত ধরে এই গ্রন্থাগারে এসেছিল ৯ বছরের আরিবা ফাইরোজ ও ১৩ বছরের জান্নাতুল মাওয়া তাসিফ। এসেই খুঁজতে শুরু করে গল্পের বই। তাদের ব্যস্ততা দেখে সামনে ছুটে আসে লাইব্রেরির এক কর্মকর্তা। বাড়িয়ে দেয় সহযোগিতার হাত আর খুঁজে দেয় তাদের পছন্দের বই। ওমনি হাসি

মুখে বই নিয়ে পড়তে বসে যায় টেবিলে। ৬৮ বছর বয়সের হাফেজ মো. সালাউদ্দিন বসে খুব মনোযোগ সহকারে পড়ছেন ১৯৯৪ সালের একটি বই। তিনি বলেন, আমি বই পড়ছি আধুনিক মাছ চাষ বিষয়ে। এ জাতীয় বই গুগলে খুঁজলেও পেতাম। কিন্তু কাগজের বই পড়ার মজাই আলাদা। তাই লাইব্রেরিতে আসা।

সালাউদ্দিন বলেন, বই পড়া আমার এক প্রকার নেশা। আমরা যখন ছাত্র ছিলাম বন্ধুরা মিলে এখানে এসে একাডেমিক পড়ালেখা করতাম। বইয়ের নেশায় থাকলে মানুষ খারাপ কিছু ভাবতে পারে না।

চট্টগ্রাম আদালতের আইনজীবী নাজমুল হক বলেন, এখনকার ছেলে- মেয়েরা প্রযুক্তিতে আসক্ত হয়ে পড়েছে। কিন্তু এরমধ্যেও এ লাইব্রেরিতে এসে তরুণ-তরুণীসহ নানা বয়সীদের বই পড়তে দেখে সত্যিই খুব ভালো লাগছে।

চট্টগ্রামের ঐতিহাসিক এ লাইব্রেরি ১৯০৪ সালে বাকলেন ঘাটা পাবলিক লাইব্রেরি এন্ড রিডিং হল নামে প্রথম স্থাপন করা হয়। তখন থেকে এখানে ব্রিটিশ, ভারতীয় ও পাকিস্তানি অনেক বিখ্যাত বই এখানে স্থান পায়। সেগুলোর মধ্যে উল্লেখ্যযোগ্য হলো উইলিয়াম শেক্সপিয়ারের ‘রোমিও এন্ড জুলিয়েট’ প্রথম সংস্কার, বাংলা ১৩০৭ সালের ‘ভীষ্মের শরশয্যা’ ১৩১৬ সালের ‘আনন্দী বাঈ’ দুই টাকা মূল্যের ‘মুর্শিদাবাদ কাহিনী’ বইসহ রয়েছে ১ টাকা মূল্যের ‘গিরিশ গ্রন্থাবলী’ বই। ১৯০২, ১৯০৪ ও ১৯০৯ সালের কলিকাতা গেজেটের বই। এখানে একশ’ বছরের প্রায় একশ ঐতিহাসিক বই রয়েছে।

সিটি কর্পোরেশন পাবলিক লাইব্রেরির পরিচালক সাইফুদ্দিন আহমেদ সাকী বলেন, চট্টগ্রামের এ লাইব্রেরি নতুনভাবে সাজানো হয়েছে। তবে আগে যেমন মানুষের বই পড়ার প্রতি আগ্রহ ছিল এখন তা দেখা যায় না। কিন্তু এ লাইব্রেরি নতুন করে সংস্কার করার পরে এখানে প্রতিদিনই পাঠক বাড়ছে। তাই আমরাও এটি আরো নতুন করে সাজানোর জন্য অনেকগুলো পদক্ষেপ নিয়েছি। উপরে একটা মিউজিয়াম গ্যালারি, শিশু কর্ণার, চাটগাইয়া কর্ণার, বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ কর্ণার, মেডিকেল ও ইঞ্জিনিয়ারিং কর্ণার করা হচ্ছে।

পূর্বকোণ/এএ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট