চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

যানজট নিরসন ও সড়কে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা

ইফতেখারুল ইসলাম 

১ ফেব্রুয়ারি, ২০২১ | ১২:১৬ অপরাহ্ণ

নগরবাসীকে যানজট সমস্যা থেকে উত্তরণ এবং সড়কে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার প্রতিশ্রুতি পূরণ আরেক কঠিন চ্যালেঞ্জ হবে নবনির্বাচিত মেয়র এম রেজাউল করিম চৌধুরীর কাছে। নির্বাচনের আগে ঘোষিত ইশতেহারের তৃতীয় এবং চতুর্থ দফায় তিনি এই প্রতিশ্রুতি দেন। রেজাউল করিম চৌধুরী তাঁর ইশতেহারে যানজটকে নগরীর বড় সমস্যা উল্লেখ করে আধুনিক ডিজিটাল ট্রাফিক সিস্টেম ও মনিটরিং চালুর সাথে কঠোর সড়ক শৃঙ্খলার উপর জোর দেন।

পাশাপাশি ব্যস্ততম পয়েন্টগুলোতে নিরাপদ পথচারী পারাপারে আন্ডারপাস নির্মাণ এবং ট্রাফিক বিভাগ, যানবাহন মালিক, বিআরটিএসহ সড়ক ব্যবহারকারী সবার সাথে বসে সুনির্দিষ্ট নীতিমালা তৈরি ও বাস্তবায়নের প্রতিশ্রুতি দেন। আধুনিক সুবিধার পাবলিক যানবাহনের তুলনায় ব্যক্তিগত যান ও রিকশা, ভ্যান, ঠেলার মত মনুষ্যচালিত যান সংখ্যা বেশি উল্লেখ করে বলেন, বহুতল বাণিজ্যিক বা আবাসিক ভবন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, কনভেনশন সেন্টারে পার্কিং ব্যবস্থা নেই। একারণে কৃত্রিম যানজট সৃষ্টি হয়। সব পক্ষের সাথে বসে যত দ্রুত সম্ভব এই সমস্যা দূরীকরণে মনোযোগ দেবেন।

সংশ্লিষ্টরা জানান, শহরে ট্রাফিক ব্যবস্থাপনার মূল দায়িত্ব পালন করে চট্টগ্রাম মেট্টোপলিটন পুলিশের (সিএমপি) ট্রাফিক বিভাগ। সেখানে লোকবল নিয়োগ কিংবা ট্রাফিক বিভাগের নীতিমালায় সংশোধনের ক্ষমতা মেয়রের নেই। নগর পিতা হিসেবে তিনি সিএমপি কমিশনারকে আহ্বান জানাতে পারেন। যানজট এবং যোগাযোগ ব্যবস্থায় যেসব সমস্যা রয়েছে তার সাথে বন্দরেরও সম্পৃক্ততা রয়েছে। অপরদিকে, অতিরিক্ত মাল বোঝাইয়ের কারণে সড়ক ভেঙে যায়। বন্দরেও মেয়রের কোন নিয়ন্ত্রণ নেই।

এছাড়াও চট্টগ্রাম ওয়াসা, কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি, টিএন্ডটি, পিডিবিসহ বিভিন্ন সেবা সংস্থা তাদের প্রয়োজন অনুযায়ী রাস্তা কাটে। যদিও রাস্তা কাটার জন্য চসিকের অনুমোদন নেয়া বাধ্যতামূলক। কিন্তু তারা যখনই অনুমতি চায় সিটি কর্পোরেশন তা দিয়ে দেয়। সুতরাং রাস্তা অক্ষত রাখার ক্ষমতা সিটি কর্পোরেশনের নেই। তাছাড়া ফুটপাত এবং সড়ক দখল করে শহরে লাখো হকার বসে। অতীতে অনেকেই চেষ্টা করেছেন তাদের উচ্ছেদ করার। কেউ কেউ তাদের শৃঙ্খলায় আনার চেষ্টা করেছেন। সবাই ব্যর্থ হয়েছেন। অতীতে চসিক ট্রাফিক সিগন্যাল বাতি স্থাপন করেছিলেন। ট্রাফিক বিভাগের সাথে পরামর্শ করে স্থাপন করা হয়নি এই অজুহাতে কয়েক কোটি টাকার সিগন্যাল বাতিগুলো অব্যবহৃত থেকেই নষ্ট হয়ে যায়।

এছাড়া গাড়ির নিবন্ধন, সংখ্যা নিয়ন্ত্রণ সবকিছু নির্ভর করে বিআরটিএ’র উপর। এই সংস্থাটি সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের অধীনে। সেখানেও সিটি কর্পোরেশনের কোন নিয়ন্ত্রণ নেই।

অপরদিকে, যেকোন ভবনের গাড়ি পার্কিংয়ের স্থান নিশ্চিত করার দায়িত্ব সিডিএ’র। কারণ পার্কিং না থাকলে সিডিএ ভবন নির্মাণের অনুমতি দেয় না। ইমারত নির্মাণ আইন ভঙ্গের দায়ে ভবন মালিককে জেল জরিমানাও করতে পারে সিডিএ। সিডিএ সহযোগিতা না করলে এক্ষেত্রে সিটি কর্পোরেশন অনেকটা অসহায়।

জানতে চাইলে সিএমপি’র অতিরিক্ত কমিশনার (ট্রাফিক) শ্যামল কুমার পালিত পূর্বকোণকে বলেন, ট্রাফিক ব্যবস্থাপনার অবকাঠামোগত উন্নয়নে চসিকের অনেক কিছু করার আছে। রাস্তাকে যানবাহন চলাচল উপযোগী রাখা, ট্রাফিক সিগন্যাল স্থাপন, ফুটপাত, ফুটওভার ব্রিজ, গাড়ি পার্কিং এলাকা সুনির্দিষ্ট করা, অবৈধ রিকশার সংখ্যা কমিয়ে আনা এসব কাজ সিটি কর্পোরেশন করতে পারে। জিইসি এবং নিউ মার্কেট মোড়ে অতিশীঘ্রই ফুটওভার ব্রিজ দরকার। শহরের মধ্যে ওয়াসা, কর্ণফুলী গ্যাসসহ যেসব সেবা প্রতিষ্ঠান রাস্তা কাটাকাটি করে তাদেরও ভূমিকা আছে। তাদের সাথেও সমন্বয় করতে হবে। বন্দর যেহেতু আছে সেখানে ওভারলোডেড গাড়ি আসবেই। এখানে বন্দরের ভূমিকাও আছে। সিটি কর্পোরেশনকে সবার সাথে সমন্বয় করতে হবে।

বিশিষ্ট নগরবিদ স্থপতি আশিক ইমরান পূর্বকোণকে বলেন, এই কাজটি সরাসরি মেয়রের দায়িত্বে পড়ে না। জটিল সমস্যা। কারণ অনেক সংস্থা এই সমস্যায় সম্পৃক্ত। যেমন সিএমপি’তে ট্রাফিক ম্যানেজমেন্ট সেল নেই। এই সেল প্রতিষ্ঠায় তিনি সিএমপি’কে নির্দেশনা বা আহ্বান জানাতে পারেন। তিনি সবচেয়ে বড় ভূমিকা রাখতে পারেন পরিবহন মালিক-শ্রমিকদের দৌরাত্ম্য থামাতে। কারণ তারা কারো কথা শুনেন না। মেয়র যদি প্রশাসনকে রাজনৈতিকভাবে সহযোগিতা করেন তাহলে কিছুটা শৃঙ্খলা আসতে পারে।

পূর্বকোণ/এএ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট