চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪

হালদা নদী বঙ্গবন্ধু মৎস্য হেরিটেজের জীববৈচিত্র্য ক্ষতি হয় এমন কোন সিদ্ধান্ত নিবে না কোন মন্ত্রণালয়

‘হালদা থেকে নয় পানি উত্তোলন’

পানির বিকল্প উৎস খোঁজে আরো স্টাডি হবে

মোহাম্মদ আলী

৩১ জানুয়ারি, ২০২১ | ১১:১১ পূর্বাহ্ণ

অবশেষে হালদারই জয় হয়েছে। হালদা নদী বঙ্গবন্ধু মৎস্য হেরিটেজের জীববৈচিত্র্য ক্ষতি হয় এমন কোন সিদ্ধান্ত নিবে না কোন মন্ত্রণালয়। বিকল্প উৎস থেকে পানি উত্তোলন করে মিরসরাই বঙ্গবন্ধু ইকোনমিক জোনে পানি সরবরাহ দেওয়া হবে। এর জন্য প্রয়োজনে আরো স্টাডি করা হবে। হাটহাজারীর সাত্তারঘাট এলাকায় হালদা নদীর পাড়ে গতকাল শনিবার বিকেলে আয়োজিত এ সভা থেকে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তটি নেয়া হয়েছে।

সভায় পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব কবির বিন আনোয়ার বলেন, ‘হালদা থেকে পানি উত্তোলনের বিষয়টি আরো খতিয়ে দেখা হবে। সামান্যতম ক্ষতি হলে হালদা নদী থেকে পানি উত্তোলন করা হবে না। বিকল্প উৎস থেকে পানি উত্তোলন করা হবে।’

গতকালের গুরুত্বপূর্ণ এ সভার ব্যপ্তি ছিল টানা প্রায় তিন ঘণ্টা। ইনস্টিটিউট অব ওয়াটার মডেলিং (আইডব্লিউএম) এ সভার আয়োজক। সভায় বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, জনপ্রতিনিধি, সাংবাদিক ও হালদার ডিম সংগ্রহকারীরা বক্তব্য রাখেন। সভায় টেলি কন্ফারেন্সে করেন রেলপথ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি এবিএম ফজলে করিম চৌধুরী এমপি।

সভায় প্রায় প্রত্যেক বক্তাই হালদা থেকে পানি উত্তোলনের বিরুদ্ধে নিজেদের মতামত তুলে ধরে বক্তব্য রাখেন। এ সভায় এ বি এম ফজলে করিম চৌধুরী বলেন, ‘হালদা থেকে কোন পানি উত্তোলন করা যাবে না। এ নদীর পরিবেশ রক্ষায় সব ধরনের পদক্ষেপ নিতে হবে।’

সভায় গুরুত্বপূর্ণ মতামত রাখতে গিয়ে সাবেক মুখ্য সচিব আবদুল করিম বলেন, ‘হালদাকে বঙ্গবন্ধু হেরিটেজ ঘোষণা করা হয়েছে। এটিকে এখন রক্ষা করতে হবে। সুতরাং হালদার ক্ষতি করা মানে দেশের উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত করা এবং এ অনন্য নদীর রুই জাতীয় মাছের প্রজননকে ধ্বংস করা। আর হালদা নয়, বিকল্প উৎস থেকে পানি নেওয়ার বিষয়টি ভাবতে হবে।’

প্রসঙ্গত, মিরসরাই বঙ্গবন্ধু শিল্প নগরীতে হালদা থেকে দৈনিক পানি ১৪ কোটি লিটার পানি সরবরাহ দিতে একটি নতুন প্রকল্প তৈরি করে চট্টগ্রাম ওয়াসা। এ নিয়ে পরিবেশগত একটি সমীক্ষা রিপোর্ট তৈরি করে পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্রের জন্য জমা দেয় আইডব্লিউএম। কিন্তু পরিবেশ অধিদপ্তরের একটি সভায় প্রণীত সমীক্ষা রিপোর্ট নিয়ে নানা অসঙ্গতি নিয়ে বির্তক সৃষ্টি হয়। একই সাথে সমীক্ষা রিপোর্টটি পুনরায় রিভিউ করার জন্য সংশ্লিষ্টদের পরামর্শ দেওয়া হয়। হালদা থেকে পানি উত্তোলন নিয়ে এর মধ্যে নানা বিতর্ক সৃষ্টি হয়। ফলে গতকাল নদীর পাড়ে এ সভার আয়োজন করা হয়।

সভায় হালদা নদী বঙ্গবন্ধু মৎস্য হেরিটেজ : অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যৎ শীর্ষক সভায় পাওয়ার পয়েন্ট প্রেজেন্টেশন করতে গিয়ে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের হালদা রিভার রিসার্চ ল্যাবরেটরির কো-অর্ডিনেটর ও প্রাণিবিদ্যা বিভাগের প্রফেসর ড. মো. মনজুরুল কিবরীয়া বলেন, ‘আইডব্লিউএম’র সমীক্ষা রিপোর্টে বলা হয়েছে দৈনিক ১৪ লিটার প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে হালদা থেকে মোট পানি উত্তোলনের পরিমাণ হবে প্রায় ২৯.৯২%। ফেব্রুয়ারি থেকে মার্চ মাসকে হালদা নদীতে রুই জাতীয় মাছের মাছের প্রজননের পূর্ববর্তী মাস বা প্রি স্পনিং টাইম বলে। এ সময় মাছের গোনাডের পরিপক্কতা ও বৃদ্ধির জন্য নদীতে পর্যাপ্ত পরিমাণ গুণগত মানসম্পন্ন পানি এবং প্রচুর পরিমাণ খাদ্যের (প্লাংটন ও মাইক্রো বেনথিক অর্গানিজম) প্রয়োজন হয়। যদি সেই সময়ে নদীর পানির প্রায় এক তৃতীয়াংশ (২৯.৯২%) তুলে ফেলা হয় তাহলে পানি স্বল্পতা এবং লবণাক্ততার কারণে হালদায় রুই জাতীয় মাছের প্রাকৃতিক প্রজনন ক্ষেত্র, অন্যান্য মাছ, ডলফিনসহ সব জীববৈচিত্র্যের অস্তিত্ব বিলীন হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। একইসাথে কর্ণফুলী নদীর লবণাক্ত পানি হালদা নদীতে অনুপ্রবেশের কারণে চট্টগ্রাম শহরের মানুষের দৈনন্দিন পানির চাহিদা হুমকির সম্মুখীন হবে। তাই হালদা নদী ছাড়া বিকল্প উৎস থেকে পানি উত্তোলন করা সমীচীন হবে। অন্যথায় হালদা নদী বঙ্গবন্ধু হেরিটেজ রক্ষা করা যাবে না।’

বিষয়টির উপর অপর প্রবন্ধকার আইডব্লিউএম’র উপ-নির্বাহী পরিচালক এস এম মাহবুবুর রহমান হালদা নদী থেকে পানি উত্তোলনের বিভিন্ন যুক্তিকতা তুলে ধরে বলেন, কাপ্তাই লেক থেকে শুষ্ক মওসুমে দৈনিক ২০০ কিউমেক পানি ছাড়লে হালদা থেকে পানি উত্তোলন করা সম্ভব। অন্যথা পানি তোলা ঠিক হবে না। এছাড়াও পানি উত্তোলনের হালদার বিকল্প উৎসের কথাও বলেছেন তিনি।

সভায় অন্যান্য বক্তারা বলেন, হালদার নদীর পরিবেশ, জীববৈচিত্র্য রক্ষা, ডলফিনের বিচরণ এবং রুই জাতীয় মাছের প্রজননের স্বার্থে হালদা থেকে পানি তোলা সমীচীন হবে না। যদি এর ব্যত্যয় ঘটে তাহলে হালদা মারা যাবে। এর জন্য একদিন আমাদের জবাবদিহি করতে হবে।

পূর্বকোণ/পি-আরপি

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট