চট্টগ্রাম শনিবার, ২৭ এপ্রিল, ২০২৪

বাবুল হত্যা পরিকল্পিত, রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র: কাদেরের স্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক

২৫ জানুয়ারি, ২০২১ | ৮:২৪ অপরাহ্ণ

নগরীর ২৮ নম্বর পাঠানটুলী ওয়ার্ডের স্বতন্ত্র কাউন্সিলর প্রার্থী আব্দুল কাদেরের স্ত্রী নুসরাত জাহান নির্বাচনী সহিংসতায় গুলিতে বাবুলকে হত্যার বিষয়টি পরিকল্পিত ও রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র বলে অভিযোগ করেছেন। আজ সোমবার (২৫ জানুয়ারি) বিকাল সাড়ে ৩টায় চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এই অভিযোগ করেন।

বাবুল সর্দার হত্যার ঘটনায় জড়িত অভিযোগে দায়েরকৃত মামলার প্রধান আসামি আব্দুল কাদের বর্তমানে কারাগারে রয়েছেন।

লিখিত বক্তব্য পাঠ করে আব্দুল কাদেরের স্ত্রী নুসরাত জাহান বলেন, আমার স্বামী সাবেক কাউন্সিলর আব্দুল কাদের  আওয়ামী লীগের দলীয় সমর্থন না পেয়ে এলাকাবাসীর অনুরোধে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করছেন। নির্বাচনের শুরু থেকেই আমার স্বামীকে নির্বাচন থেকে সরে যেতে নানান হুমকি দেয়া হচ্ছিল। যে ঘটনায় তাকে গ্রেপ্তার করা হয় সেদিন আগে থেকেই মগপুকুড় গাড় এলাকায় তারা গণসংযোগে ছিল। অন্যদিকে তার প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী নজরুল ইসলাম বাহাদুর মতিয়ার পুলে গণসংযোগ করছিলেন। সেখান থেকে এসে এক ঘণ্টা ধরে তিনি মোস্তফা কামাল টিপুর বাসায় অবস্থান নেন। গণসংযোগ করতে করতে আমার স্বামী টিপুর বাসার কাছাকাছি পৌছাতেই নজরুল ইসলাম বাহাদুর সেই বাসা থেকে বের হতেই সংঘর্ষের সূত্রপাত হয়। আর ওই সংঘর্ষে প্রাণ হারান বাবুল। এই হত্যাকান্ডটি পরিকল্পিত। এখন কথা হল এই পরিকল্পনা কে করেছে? যদি আব্দুল কাদের কিংবা তার কর্মী-সমর্থকরা এই পরিকল্পনার সাথে জড়িত থাকত তাহলে তারা নিশ্চয় একটা বাসায় ঢুকে গ্রেপ্তার হওয়ার অপেক্ষা করত না।

তিনি আরো বলেন, ঘটনার দিন আত্মরক্ষার জন্য তাহেরা ম্যানশন নামে একটা বাসায় ঢুকে আমার স্বামী ও তার কর্মী-সমর্থকরা গেট লাগিয়ে দেয়। পরে সেখান থেকেই তাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। এসময় তাদের কাছ থেকে কোন অস্ত্র পায়নি পুলিশ। যেখানে কাদেরের আত্মরক্ষার প্রস্তুতি ছিল না সেখানে তাকে হত্যার পরিকল্পনাকারী বলা হচ্ছে কিসের ভিত্তিতে? তাছাড়া তাহেরা ম্যানশনে পুলিশ যাওয়ার আগে জিয়া নামে একজনের নেতৃত্বে কয়েকজন তাহেরা ম্যানশনের গেইট ভেঙ্গে ভেতরে ঢুকে কাদেরকে আক্রমণ করতে চায়। পরে জিয়া অস্ত্রসহ পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হলেও অজানা কারণে তাকে ছেড়েও দেয় পুলিশ। কেন কাদের নির্দেশে হত্যাকাণ্ডের স্থান থেকে অস্ত্রসহ গ্রেপ্তার হওয়া ব্যক্তিকে ছেড়ে দিল পুলিশ? তাছাড়া হত্যাকাণ্ডের আশপাশের সিসিটিভি ফুটেজগুলো ভেঙ্গে ফেলা হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। ওই সময় পুলিশের সামনেই বাহাদুরের কর্মী-সমর্থকরা ভাঙচুর করছিল। অন্যদিকে ঘটনার শুরু থেকেই তাহেরা ম্যানশনে অবরুদ্ধ ছিল কাদের ও তার কর্মীরা। সেখান থেকেই তাদের গ্রেপ্তার করে নিয়ে যায় পুলিশ। এই অবস্থায় কাদেরের পক্ষে সিসিটিভি ভাঙ্গা সম্ভব নয় বলেও জানান তার স্ত্রী।

নুসরাত জাহান আরও বলেন, অন্যদিকে বাহাদুরের বেশ কয়েকজন কর্মী-সমর্থক এলাকায় সিসিটিভি ফুটেজ ভাঙছে এমন ভিডিও আমাদের নজরে এসেছে। ঘটনাস্থলের সিসিটিভি ফুটেজগুলো তারাই ভেঙেছে বলে আমরা মনে করি। অন্যদিকে, বাবুল খুন হন পিছন থেকে ছোঁড়া গুলিতে। গণসংযোগের পেছনের অংশটির সাথে ছিলেন তিনি। সামনে ছিল বাহাদুর নিজে। আর বাহাদুরের উল্টো দিকে ছিল কাদেরের সমর্থকরা। তাহলে মিছিলের পেছনে থাকা বাবুলকে গুলি করল কে?

নুসরাত জাহান বলেন, এ সময় টিপু কোথায় ছিল? কদমতলীর হারুন মার্ডার, ডবলমুরিং থানা ছাত্রলীগের কর্মী সাহেল খন্দকার, আগ্রাবাদে মারুফ চৌধুরী মিন্টু হত্যাকাণ্ডে মোস্তফা কামাল টিপু প্রকাশ কসাই টিপু জড়িত ছিল তা প্রশাসন অবহিত। পর পর এতগুলো হত্যাকাণ্ডে যার সংশ্লিষ্টতা বাবুল হত্যাকাণ্ডের আগ মুহুর্তে তার বাসায় কি করচ্ছিলেন বাহাদুর? আর সংঘর্ষ মুহূর্তের মধ্যে শতশত বহিরাগত সন্ত্রাসীদের নিয়ে ঘটনাস্থলে ভাঙচুর চালায় বাহাদুরের সমর্থকরা।

একইসাথে তাহেরা ম্যানশনে কাদেরকে হামলার জন্য আক্রমণ চালায় একটি গ্রুপ। একই সময়ে ঘটনাস্থল থেকে দূরে আমাদের বাড়িতে ঢুকে ভাঙচুর চালায় অন্য একটি গ্রুপ। মুহূর্তের মধ্যে এত লোকজন তারা সংগঠিত করল কিভাবে তাও আবার বেশিরভাগ বহিরাগত? তবে তাদের এসব পরিকল্পনা করাই ছিল? সেই সংঘর্ষের ঘটনায় কাদেরের সাথে থাকা ওবায়দুর রহমান মিন্টু ও গুরুতর আহত হয়েছে। তারা এখনো চিকিৎসাধীন। অন্যদিকে বাহাদুরের সাথে থাকা বাবুল ছাড়া অন্য কেউ আহত হওয়ার ঘটনা ঘটেনি। এক্ষেত্রে বাবুল সংঘর্ষে মারা গেছে এই অভিযোগটিও সত্য নয়। বরং পরিকল্পিতভাবে বাবুলকে হত্যা করে সেই হত্যার দায় কাদেরের ঘাড়ে চাপাতেই অত্যান্ত সুচতুরভাবে ওই সংঘর্ষ বাধানো হয়েছিল বলে আমরা মনে করছি।

সংবাদ সম্মেলনে আরো বলা হয়, এই হত্যাকান্ডের পর পরই স্থানীয় প্রশাসনে রদবদল করা হল। এরপর থেকে আব্দুল কাদেরের পক্ষে কাজ করা কর্মী-সমর্থকদের প্রতিনিয়ত হুমকি ধামকি দেয়া হচ্ছে। বলা হচ্ছে, আব্দুল কাদেরের এজেন্টদের কেন্দ্রে ঢুকতে দেয়া হবে না। নেতাকর্মীদের বাসায় বাসায় বিনা কারণে রাতে পুলিশ পাঠানো হচ্ছে। স্বাভাবিকভাবে প্রশ্ন করতে চাই- নির্বাচনের আগ মুহূর্তে এই রদবদল পরিকল্পিত কিনা? এর পেছনে কলকাঠি নাড়ছে কারা? আমাদের বিশ্বাস হত্যাকাণ্ড নয় বরং নির্বাচন করাই আমার স্বামীর অপরাধ এবং সেই অপরাধেই তাকে জেলে যেতে হয়েছে। যে নির্বাচন করার অপরাধে আমার স্বামী, পরিবার ও তার কর্মী-সমর্থকদের এমন চরম মূল্য দিতে হয়েছে আমার স্বামীর হয়ে আমি সে নির্বাচনী লড়াই এগিয়ে নিতে চাই। পাশাপাশি এই ষড়যন্ত্রমূলক মিথ্যা মামলা থেকে আমার স্বামী আব্দুল কাদেরসহ তার কর্মী-সমর্থকদের নিঃশর্ত মুক্তি চাই।

নুসরাত জাহান বলেন, আমরা চাই বাবুল হত্যার সুষ্ঠু তদন্ত করে মূল সত্য বের করে আনুক প্রশাসন। এছাড়া দয়া করে আব্দুল কাদেরের কর্মী-সমর্থকদের অন্যায় ও অযৌক্তিকভাবে হয়রানি বন্ধ করে উৎসবমুখর সুষ্ঠু নির্বাচনী পরিবেশ তৈরি করে মানুষের ভোটাধিকার প্রয়োগের সুযোগ করে দিতে স্থানীয় প্রশাসনের প্রতি অনুরোধ করব আমি ।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন আব্দুল কাদেরের ছেলে কাদের অভি, মেয়ে সায়মা কাদের ও ফারজানা রহমান, কাদেরের ভাই আব্দুর রহমানের স্ত্রী নাজনীন আকতার, কাদেরের খালাতো বোন মনোয়ারা বেগম, খালাতো ভাই মুক্তিযোদ্ধা জাহেদ আহমদ, গ্রেপ্তার হওয়া ওবায়দুল কাদের মিন্টুর স্ত্রী ইসরাত জাহান রানী প্রমুখ।

পূর্বকোণ/আরপি

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট