চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪

মেয়র-কাউন্সিলর সুসম্পর্ক চাই

ইফতেখারুল ইসলাম

২৫ জানুয়ারি, ২০২১ | ১:৩২ অপরাহ্ণ

চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে আগামীর মেয়রকে নির্বাচিত কাউন্সিলরদের সাথে নিয়ে কাজ করার পরামর্শ দিয়েছেন সাবেক কাউন্সিলররা। তাদের অভিমত, অনেক সময় কাউন্সিলর-মেয়র দ্বন্দ্বের কারণে সেবা ব্যাহত হয়। একইসাথে নগরীর অনুন্নত ওয়ার্ডসমূহকে অগ্রাধিকার দিয়ে উন্নয়ন পরিকল্পনা গ্রহণ করলে সার্বিক সুফল মিলবে।

 

কাউন্সিলরদেরকেও জবাবদিহিতার মধ্যে রাখতে হবে

এডভোকেট এম এ নাসের
সাবেক কমিশনার (১৯৯৪-২০০৫ সাল)
সিটি কর্পোরেশন এবং সিডিএ’র মাঝে সমন্বয় অতীতে ছিল না। এখনো নেই। কিন্তু নাগরিক সেবা পাওয়ার জন্য আগামীর মেয়র দুই সংস্থার মাঝে সমন্বয় করবেন। এছাড়া রাস্তাঘাট, ফুটপাত বেদখল হয়ে গেছে। এমনকি সিটি কর্পোরেশনও নালা ও ফুটপাতের উপর স্থাপনা করেছে। বর্তমান প্রশাসক এসব উচ্ছেদে কিছু উদ্যোগ নিয়েছেন। আশাকরি সেই উদ্যোগ অব্যাহত থাকবে। কাউন্সিলর এবং মেয়র নিয়েই সিটি কর্পোরেশন। এটি চট্টগ্রামের মিনি পার্লামেন্ট। এখানে কাউন্সিলরদের গুরুত্ব দিয়েই কাজ করতে হবে। কাউন্সিলরদেরকেও জবাবদিহিতার মধ্যে রাখতে হবে। অনেক কাউন্সিলর তাদের দায়িত্ব নিয়ে সচেতন নয়। কাউন্সিলরের সাথে মেয়রের সুসম্পর্ক থাকলে কাজের অগ্রগতি এবং সেবার মান বাড়ে। তবে কিছু কাউন্সিলর ব্যক্তি স্বার্থকে প্রাধান্য দেয়। এবিষয়টিও মেয়রকে নজরে রাখতে হবে।

 

স্ট্যান্ডিং কমিটিগুলো সক্রিয়, কার্যকর এবং নিয়মিত করতে হবে

এম জামাল হোসেন
সাবেক কমিশনার (২০০৫- ২০১০)
ইশতেহারে জলাবদ্ধা নিরসনকে অগ্রধাধিকার দেয়া হয়েছে। অতীতে ইশতেহারে উল্লেখিত ১০% প্রতিশ্রুতিও বাস্তবায়িত না হওয়ায় সাধারণের কাছে এর গুরুত্ব তেমন নেই। বড় প্রকল্প বাস্তবায়ন করার সক্ষমতা চসিকের নেই। আমলাতান্ত্রিক জটিলতায় মেয়র কাউন্সিলরগণ ‘ঢাল নেই তালোয়ার নেই নিধিরাম সর্দার’, এদের পদমর্যাদার বিষয়টি এখনো ধোঁয়াশা। সরকার ক্ষমতা বিকেন্দ্রীকরণ করলে জনগণ তাদের প্রত্যাশিত সেবা পাবে। জনসেবকরা পদ-পদবির বাইরেও অনেক সেবা দিতে পারেন। স্ট্যাডিং কমিটিগুলো সক্রিয়, কার্যকর এবং নিয়মিত করা। সাধারণ সভায় এর প্রতিফলন ঘটানো। প্রয়োজনে সাধারণ সভার সময় বৃদ্ধি করতে হবে। জলাবদ্ধতার কারণ বর্জ্য অপসারণ ব্যবস্থাপনার চরম দুর্বলতা কাটিয়ে খাল নালা গুলোতে বর্জ্য ফেলা বন্ধ করতে হবে। অপসারণ ব্যবস্থা ঢেলে সাজাতে হবে (প্রয়োজনে প্রাইভেট সেক্টরে)। ফুটপাত হকার মুক্ত রাখতে চসিকের বাজারগুলোর মানোন্নয়ন ও জনবসতি বিবেচনায় নতুন বাজার সৃষ্টি করা। ট্রেড লাইসেন্স ইস্যু ভোগান্তি কমাতে অনলাইন ও ব্যাংকে দেয়া। সড়ক পথে চাপ কমাতে দ্রুত পতেঙ্গা থেকে চাক্তাই হয়ে কালুঘাট ভায়া মদুনাঘাট পর্যন্ত নৌ-যান চালু করা। গুরুত্বপূর্ণ স্থানে মানসম্মত পাবলিক টয়লেট নির্মাণ করা। স্বচ্ছতা জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে সকল কর্মকা-ের বিবরণী ওয়েব-সাইটে প্রকাশ করা। সকল পেশার মানুষের সাথে মেয়র সাক্ষাতের ব্যবস্থা উম্মুক্ত থাকবে।

 

উন্নয়নে মেয়রকে সাহসের সাথে কাজ করতে হবে

রেখা আলম চৌধুরী
সাবেক প্যানেল মেয়র ও সাবেক কাউন্সিলর
(মেয়াদ ২০০৫ থেকে ২০১৫)
সাবেক সংরক্ষিত মহিলা কাউন্সিলর দায়িত্ব পালন করেছিলেন সাবেক প্যানেল মেয়র হিসেবেও। প্রত্যাশা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, শহরবান্ধব একজন মেয়র চাই। জনগণের প্রত্যাশাই আমার প্রত্যাশা। সরকার কখন দেবে তার আশায় বসে না থেকে চট্টগ্রামবাসীর সেবা এবং উন্নয়নে মেয়রকে সাহসের সাথে কাজ করতে হবে। কাউন্সিলররাও যে গুরুত্বপূর্ণ জনপ্রতিনিধি সেই বিষয়টিও মেয়রকে মাথায় রাখতে হবে। কাউন্সিলরদের সাথে সমন্বয় করেই উন্নয়ন এবং সেবা দিতে হবে। বিশেষ করে নারী কাউন্সিলরদের সমান সুযোগ দেয়ার দাবি জানিয়ে বলেন, একজন নারীকে তিনটি ওয়ার্ডে কাজ করতে হয়। অথচ তিনি বরাদ্দ পান একটি ওয়ার্ডের। নাগরিকরা মেয়রের কাছে টাকা চায় না। সেবা চায়। তা যেন মানসম্মত হয়। গৃহকর এবং ট্রেড লাইসেন্স ফি কমানোর পরামর্শ দিয়ে বলেন, বিষয়টি যেন মানুষের কাছে সহজভাবে উপস্থাপন করা হয়। তাহলে সবাই কর দেবে।

 

পিছিয়ে পড়া ওয়ার্ডকে উন্নয়নে অগ্রাধিকার দিতে হবে

নুরুল হুদা লালু
সাবেক কমিশনার (মেয়াদ ২০০০ থেকে ২০০৫)

চট্টগ্রামের মত অপরূপ শহর পৃথিবীতে কম আছে। কোন কোন ওয়ার্ডের আয়তন অনেক বড়। জনসংখ্যাও বেশি। পিছিয়ে পড়া ওয়ার্ডসমূহকে অধিক গুরুত্ব দিয়ে উন্নয়ন করতে হবে। মেয়র প্রার্থীরা, জলাবদ্ধতা, মাদক, কিশোর গ্যাংসহ বিভিন্ন সমস্যা সমাধানের প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন। এসব সমস্যার মূলে রয়েছে পিছিয়ে পড়া ওয়ার্ডসমূহ। কারণ সেসব ওয়ার্ডে বস্তির সংখ্যা বেশি। সেখান থেকেই অপরাধ শুরু হয়। এসব ওয়ার্ডে যে হারে জনসংখ্যা বাড়ে, সেই হারে শিক্ষা ও স্বাস্থ্য সেবা নেই। শহরটি খাল, নদী দ্বারা বেষ্টিত। এসব ওয়ার্ডেই খাল-নালা ভরাট করে স্থাপনা নির্মাণ করে। তাই পিছিয়ে পড়া ওয়ার্ডের পরিকল্পিত উন্নয়ন প্রয়োজন।
গত ১০ বছর ধরে ব্যাপক উন্নয়ন করেছে। শিক্ষারও ব্যাপক প্রসার ঘটেছে। এর ধারাবাহিকতা রক্ষা করতে হবে।

 

পূর্কোণ/পি-মামুন

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট