চট্টগ্রাম শনিবার, ২৭ এপ্রিল, ২০২৪

‘হাতের কাছে ভরা কলস তৃষ্ণা মেটে না’

পাশেই পাইপ লাইন, তবু ওয়াসার পানি পান না উত্তর চান্দগাঁওবাসী

মোহাম্মদ আলী

৬ জানুয়ারি, ২০২১ | ১২:১৯ অপরাহ্ণ

চট্টগ্রাম ওয়াসার শেখ রাসেল (মদুনাঘাট) পানি সরবরাহ এবং মোহরা পানি শোধনাগার প্রকল্প দুইটি থেকে দৈনিক পানি উৎপাদন হয় ১৮ কোটি লিটার। এ দুইটি প্রকল্পের ডেলিভারি পাইপলাইন দিয়ে উত্তর চান্দগাঁও বুক চিরে শহরের নানা প্রান্তে পানি সরবরাহ করা হয়। সকালে ঘুম ভাঙলেই উত্তর চান্দগাঁওবাসী দেখে ওয়াসার বড় বড় পানির পাইপলাইন।

 

কিন্তু সেই লাইনের পানি তারা পান না। শুধু পাইপলাইন দেখেই জীবন পার করে দিচ্ছেন। তাই প্রতিনিয়ত এক বুক কষ্ট নিয়ে জীবন কাটানো উত্তর চান্দগাঁওবাসীকে সেই পরিচিত গানের কথাই মনে করিয়ে দেয়- ‘হাতের কাছে ভরা কলস, তৃষ্ণা মেটে না’। তাদের অতি নিকটে ওয়াসার দুইটি বড় প্রকল্প থাকলেও তারা পানি সরবরাহ পান না। গভীর নলকূপ থেকে তাদের পানি সরবরাহ করে ওয়াসা। এ কারণে উত্তর চান্দগাঁওবাসী চাহিদা অনুযায়ী পানি পান না।

নগরীর অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এলাকা উত্তর চান্দগাঁও। ৪ নং চান্দগাঁও ওয়ার্ডে এটির অবস্থান। এখানকার বেপারিপাড়া ও চৌধুরী বাড়িসহ আশপাশে আনুমানিক ১০ হাজার মানুষের বসবাস। রয়েছে গুরুত্বপূর্ণ শিল্প কারখানা। কাপ্তাই রাস্তার মাথা সন্নিকটে আরাকান সড়কের বাহির সিগনাল এলাকা দিয়ে যাতায়াত ওই এলাকার বাসিন্দাদের। বাহির সিগনাল থেকে কয়েকশ’ ফুট গেলে বেপারিপাড়া ও চৌধুরী বাড়ির অবস্থান। মূল শহরের অতি সন্নিকটে হলেও এ এলাকার বাসিন্দারা পান না ওয়াসার নিয়মিত পানি সরবরাহ। যেটুকু পানি পান তাও অপর্যাপ্ত। গভীর নলকূপের মাধ্যমে ওয়াসা পানি সরবরাহ দিয়ে থাকে। চট্টগ্রাম ওয়াসার শেখ রাসেল (মদুনাঘাট) পানি সরবরাহ প্রকল্প এবং মোহরা পানি শোধনাগার প্রকল্প থেকে পানি সরবরাহ তারা পান না।

সরেজমিনে গেলে বেপারিপাড়ার বাসিন্দা হাজি মোহাম্মদ হোসেন, মঈনুদ্দিন দস্তগীর মিনহাজ, মোহাম্মদ হারুন, নুরুল আবছার, আবুল হাসেম, মোহাম্মদ নেজাম ও মোহাম্মদ কামাল দৈনিক পূর্বকোণকে অভিযোগ করে বলেন, ‘বিগত তিন মাস ধরে এ এলাকার বাসিন্দারা চাহিদা অনুযায়ী ওয়াসার পানি সরবরাহ পান না। গভীর রাতে সামান্য পানি পেলেও গৃহস্থালির কাজও হয় না। এ ব্যাপারে ওয়াসার মড-৩ এর নির্বাহী প্রকৌশলী রানা চৌধুরীকে অভিযোগ দেওয়া হলেও কোন ধরনের প্রতিকার পাচ্ছি না। তিনি শুধু আশ্বাস দিয়েই দায়িত্ব শেষ করেন, পানি আসে না।’

এসব বাসিন্দা আরো বলেন, ‘স্থানীয় বিপুল সংখ্যক বাসিন্দা ছাড়াও এ এলাকায় রয়েছে সুপার ডেইরি ফার্ম, রিফ লেদার, এশিয়ান ফ্যাশন, এশিয়ান পেপার, ম্যাপ সু, ফোর এইচ গ্রুপসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ শিল্প কারখানা। কিন্তু চাহিদা অনুযায়ী পানি সরবরাহ দেয় না ওয়াসা।’

স্থানীয় গৃহবধূ আনোয়ারা বেগম, সমশাদ বেগম, চেমন আরা বেগম ও নুর নাহার বেগম বলেন, ‘ওয়াসার পানি সরবরাহ পাই না। অজু করতে পারি না। নিরুপায় হয়ে পরিত্যক্ত পুকুরের পানি ব্যবহার করতে বাধ্য হচ্ছি।’

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ওয়াসার মড-৩ এর নির্বাহী প্রকৌশলী রানা চৌধুরী দৈনিক পূর্বকোণকে বলেন, ‘বেপারিপাড়া ও চৌধুরী বাড়ি এলাকায় ওয়াসার কোনো প্রকল্প থেকে পানি সরবরাহ হয় না। গভীর নলকূপের মাধ্যমে পানি সরবরাহ হয়। এলাকায় পানি সংকটের বিষয়টি স্থানীয় লোকজনের কাছ থেকে শুনেছি। কিন্তু ওয়াসার গভীর নলকূপ অকেজো থাকায় পানি সরবরাহে বিঘ্ন ঘটছে। আশা করছি খুব দ্রুততার সাথে ওয়াসার পানি পাবেন গ্রাহকরা।’

চট্টগ্রাম ওয়াসার প্রধান প্রকৌশলী মাকসুদ আলম দৈনিক পূর্বকোণকে বলেন, ‘পানি সংকটের বিষয়টি শুনেছি। সংশ্লিষ্টদের অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে পানি সরবরাহ নিশ্চিত করতে বলে দিয়েছি।’

 

পূর্বকোণ/পি-মামুন

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট