চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

চিটাগং শপিং কমপ্লেক্স: প্রমাণ মিলেছে দুর্নীতির

ইফতেখারুল ইসলাম

১৪ ডিসেম্বর, ২০২০ | ২:৪১ অপরাহ্ণ

চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন পরিচালিত চিটাগং শপিং কমপ্লেক্সের দোকান বরাদ্দসহ বিভিন্ন কাজে দুর্নীতির প্রমাণ পেয়েছেন অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (উন্নয়ন) ও স্থানীয় সরকার পরিচালক। সম্প্রতি তিনি এ সংক্রান্ত প্রতিবেদন মন্ত্রণালয়ে জমা দিয়েছেন। এদিকে, গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় গঠিত কমিটি পৃথক তদন্তের কাজ শুরু করেছে।

এদিকে, বর্ধিতাংশের ভারে মার্কেটের বিভিন্ন দেয়ালে ফাটল ধরেছে। এনিয়ে ব্যবসায়ীরা চরম ঝুঁকিতে আছে। চসিকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তাকে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের উপ-সচিব নাজনীন ওয়ারেস স্বাক্ষরিত চিঠিতে বলা হয়, চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন কর্তৃক চিটাগং শপিং কমপ্লেক্সের দোকান বরাদ্দসহ বিভিন্ন কাজে দুর্নীতির বিষয়ে চট্টগ্রামের অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (উন্নয়ন) ও স্থানীয় সরকার বিভাগের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক মো. মিজানুর রহমান তদন্তপূর্বক প্রতিবেদন প্রেরণ করেছেন। তদন্তে অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে। এমতাবস্থায় তদন্ত কর্মকর্তার তদন্ত প্রতিবেদনের বিষয়ে মতামত প্রদান এবং এবিষয়ে গঠিত চার সদস্যের তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনের আলোকে প্রয়োজনীয় কার্যক্রম গ্রহণপূর্বক স্থানীয় সরকার বিভাগকে অবহিত করার অনুরোধ জানানো হয়। জানতে চাইলে চসিকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা খন্দকার মোজাম্মেল হক পূর্বকোণকে বলেন, বিষয়টি তার মনে পড়ছে না। তাছাড়া তদন্ত প্রতিবেদনটি পাঠানো হয়েছে মন্ত্রণালয়ে। তবে এবিষয়ে গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় পৃথকভাবে তদন্ত করছে বলে তিনি জানান।  গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় থেকে চট্টগ্রাম গণপূর্ত বিভাগ-১ এর নির্বাহী প্রকৌশলীকে এ বিষয়ে তদন্ত করে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়। গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের উপ-সচিব মো. মাহমুদুর রহমান হাবিব স্বাক্ষরিত চিঠিতে বলা হয়, চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের চিটাগং শপিং কমপ্লেক্সের বিষয়ে সঠিকভাবে তদন্ত করে পার্কিংয়ের স্থানে বরাদ্দের বাইরে অবৈধভাবে দোকান নির্মাণ এবং তৃতীয় তলায় সিটি কর্পোরেশনের বরাদ্দ ছাড়া এবং সিডিএ’র প্ল্যান ছাড়া অবৈধভাবে দোকান নির্মাণের বিষয়ে তদন্তপূর্বক মতামতসহ প্রতিবেদন প্রেরণের জন্য অনুরোধ করা হয়। চিঠি পাওয়ার কথা স্বীকার করে তদন্তকারী কর্মকর্তা চট্টগ্রাম গণপূর্ত বিভাগ-১ এর নির্বাহী প্রকৌশলী রাহুল গুহ পূর্বকোণকে জানান, এবিষয়ে কাগজপত্র সরবরাহের জন্য তিনি সিটি কর্পোরেশন এবং সিডিএ’কে চিঠি দিয়েছেন। কিন্তু কেউই তাতে সাড়া দেয়নি। তবে মৌখিকভাবে কথা হয়েছে।

তিনি জানান, মূলত তিনি দেখবেন সিডিএ’র অনুমোদন আছে কিনা। যদি অনুমোদন না থাকে তাহলে বিষয়টি প্রতিবেদনে উল্লেখ করবেন। সিটি কর্পোরেশন যদি কোন ধরনের সহযোগিতা না করে তাহলে সিডিএ’র সরবরাহকৃত তথ্যাদির উপর ভিত্তি করে তিনি প্রতিবেদন দিয়ে দেবেন বলে জানান।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে সিডিএ’র প্রধান পরিকল্পনাবিদ ও ইমারত নির্মাণ কমিটির চেয়ারম্যান শাহীনুল ইসলাম খান পূর্বকোণকে বলেন, সিটি কর্পোরেশন চিটাগং শপিং কমপ্লেক্সে সিডিএ’র লিজের শর্ত ভঙ্গ করেছে। সেখানে অতিরিক্ত দোকান নির্মাণের কোন অনুমতি তারা দেননি। এবিষয়ে সিটি কর্পোরেশনের পক্ষ থেকে সিডিএ’র কাছে কোন আবেদনও করা হয়নি। সিটি কর্পোরেশন যেহেতু লিজের শর্ত ভঙ্গ করেছে, তাই তাদের লিজ বাতিল করে মার্কেটটি সিডিএ’র মাধ্যমে পরিচালনার জন্য তিনি সিডিএ চেয়ারম্যানের কাছে সুপারিশ করবেন বলে জানান।

চিটাগং শপিং কমপ্লেক্সের হানিমুন টেইলার্স এন্ড ফেব্রিক্সের স্বত্বাধিকারী মো. মোস্তফা কামাল পূর্বকোণকে বলেন, পার্কিংয়ের জায়গাসহ আলো-বাতাস চলাচলের জন্য রাখা খোলা স্থানে দোকান নির্মাণ করা হচ্ছে। বিষয়টি নিয়ে এই মার্কেটের ব্যবসায়ীরা শুরু থেকেই অভিযোগ করে আসছেন। ব্যবসায়ীদের অভিযোগ কর্ণপাত না করে মার্কেটের তিন তলায় কাজ শুরু করার কারণে বিভিন্ন দেয়ালে ফাটল ধরেছে। এখন পুরো মার্কেটটিই ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে গেছে। অবিলম্বে এবিষয়ে উদ্যোগ নিয়ে কার্যকর পদক্ষেপ নেয়ার জন্য তিনি কর্তৃপক্ষের কাছে দাবি জানান। তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, তিন তলার অবকাঠামো ভেঙে ফেলার জন্য সিটি কর্পোরেশন প্রশাসক নির্দেশ দিলেও তারা কাজ করছে অত্যন্ত ধীর গতিতে। যাতে প্রশাসকের মেয়াদ চলে যায়। তারই কৌশল হিসেবে তারা অত্যন্ত ধীর গতিতে কাজটি করছে।

পূর্বকোণ/এএ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট