চট্টগ্রাম শনিবার, ২৭ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

আলহাজ শামসুল হক ফাউন্ডেশনের উদ্যোগ

চান্দগাঁওয়ে অতিথি সেবায় অনন্য ‘মুসাফিরখানা’

মরিয়ম জাহান মুন্নী

১৩ ডিসেম্বর, ২০২০ | ৮:১৯ অপরাহ্ণ

ভর্তি পরীক্ষার মৌসুমে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে অনেক শিক্ষার্থী আসেন চট্টগ্রামে। আবার কেউ আসেন চাকরির পরীক্ষা দিতে। কেউ বা চিকিৎসা সেবা নিতে। এই অচেনা শহরে কে দেবে তাদের ঠাঁই! অনেকের পকেটে এত টাকা থাকে না যে হোটেলে উঠবেন। এমন অসহায় পরিস্থিতিতে যারা পড়েন, তাদের আর চিন্তা নেই। এই মানুষগুলোর জন্য রাত যাপনের ব্যবস্থা করেছে আলহাজ শামসুল হক ফাউন্ডেশন।

সংস্থাটির উদ্যোগে কয়েকদিনের জন্য এ শহরে থাকা যাবে একেবারেই বিনামূল্যে। উদ্যোক্তারা এ উদ্যোগের নাম দিয়েছেন ‘মুসাফিরখানা’। মানবতার অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে যাচ্ছে আলহাজ শামসুল হক ফাউন্ডেশন। দীর্ঘ ১৬ বছর ধরে সামাজিক কর্মকা-ের সাথে জড়িত এ সংগঠন। বহুমুখী সমাজকল্যাণমূলক কাজের পরে এবার নতুন উদ্যোগে শুরু করেছে মুসাফিরখানা নামের মানবিক কাজ।

এই মুসাফিরখানা তৈরি করা হয়েছে দূর থেকে আসা মানুষদের জন্য, যারা অতি প্রয়োজনে শহরে আসেন। এক-দুইদিন বা সপ্তাহখানেক থাকতে হবে শহরে, এমন সমস্যায় পড়া কিছু চাকরি প্রত্যাশী তরুণ-তরুণী, ভর্তি পরীক্ষা কিংবা চিকিৎসার জন্য আসা মানুষের জন্য। মুসাফিরখানার ব্যবস্থা করেছে নগরীর চান্দগাঁও থানার গোলাম আলী নাজির পাড়া এলাকার আলহাজ শামসুল হক ফাউন্ডেশন। ইতোমধ্যে ‘মুসাফিরখানার’ কাজ শেষ হয়েছে। আগামী বৃহস্পতিবার উদ্বোধন করা হবে বলে জানালেন ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান প্রকৌশলী মোহাম্মদ নাছির উদ্দীন। চট্টগ্রামে আসা অতিথিরা যোগাযোগ করতে পারেন ০১৮৪১০৪০৫৪০ নম্বরে। এখানে থাকার জন্য অতিথিদের জমা দিতে হবে এনআইডি কার্ডের ফটোকপি, এক কপি ছবি, স্থানীয় ঠিকানা ও মোবাইল নম্বর।

গতকাল শনিবার সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, দুইটি রুমে তিনটি করে ৬টি নতুন ঝকঝকে বিছানা। রুমগুলো সুন্দরভাবে সাজানো-গোছানো। রয়েছে বালিশ, কম্বল ও পানির জগ। ৬ জন ব্যক্তির সিট হলেও থাকার জায়গা হবে প্রায় ১২ জনের। এরমধ্যে একটি পুরুষ ও অন্যটি নারীদের জন্য। রয়েছে বাথরুমের সুব্যবস্থা ও পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা।

মোহাম্মদ নাছির উদ্দীন বলেন, অনেকে শহরে চাকরি, ভর্তি পরীক্ষা কিংবা চিকিৎসার জন্য আসেন। এদের মধ্যে অনেকেই আছেন যারা মধ্যবিত্ত শ্রেণির। অনেক সময় তাদের পক্ষে টাকার বিনিময়ে হোটেলে থাকা সম্ভব হয় না। আবার অনেকের শহরে কোনো আত্মীয়-স্বজনও নেই। এমন মানুষদের জন্যই আমি এ ব্যবস্থা করেছি। চাকরির জন্য আসা এ মানুষগুলো এক থেকে তিনদিন থাকতে পারবে। তবে চিকিৎসার জন্য আসা মানুষগুলো তাদের চিকিৎসার উপর ভিত্তি করে থাকতে পারবে। এটি এক বা এক সপ্তাহ বা তার বেশিও হতে পারে। এরজন্য আমাদের কোনো টাকা দিতে হবে না। বরং আমরাই তারা যতদিন থাকবে ততদিন থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা করবো।

অভিনব এমন উদ্যোগের কারণ জানতে চাইলে মোহাম্মদ নাছির উদ্দীন বলেন, আমাদের বাড়ির সামনে মেহমানখানা নামে একটি ঘর ছিল যেখানে প্রায়ই আমার বাবা কিছু মানুষকে এনে রাখতেন। তারা কারা, কেনই বা আসছে আমরা কিছুই জানতাম না। শুধু দেখতাম আমার মা রান্না করলে বাবা তাদের খাবারের ব্যবস্থা করে দিতেন। পরে বড় হয়ে বুঝতে পারি এরা বাবার পরিচিত কেউ নন। হয়তো এলাকায় কোনো কাজে আসছে মসজিদের বারান্দায় কিংবা খোলা জায়গায় থাকছেন। তাদের দেখলেই বাবা সেই মানুষগুলোকে বাড়িতে নিয়ে আসতেন। আর তাদের সুবিধামত কয়েকদিন থাকতে ও খেতে দিতেন। বাবার সেই কাজই আমার অনুপ্রেরণার কারণ।

 

পূর্বকোণ/পি-এন.এইচ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট