চট্টগ্রাম শনিবার, ২৭ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

তারের জঞ্জাল-মুক্তি কবে

টেন্ডার আহ্বান করতে লাগবে আরো ৩/৪ মাস

তারের জঞ্জাল-মুক্তি কবে

বহুমুখী ভূ-সুড়ঙ্গ সিস্টেম স্থাপন দরকার

তাসনীম হাসান

৮ ডিসেম্বর, ২০২০ | ১:২৪ অপরাহ্ণ

সড়কে বের হলেই ঝুলে থাকা বৈদ্যুতিক তারের জঞ্জাল চোখে পড়বেই। এই তার একদিকে যেমন দুর্ঘটনার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে, তেমনি অন্যদিকে চোখের জন্যও অস্বস্তির। তাই মাটির নিচ দিয়ে তার নেওয়ার প্রকল্প হাতে নিয়েছিল বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি), চট্টগ্রাম। তবে এ প্রকল্প কবে আলোর মুখ দেখবে তা বলা যাচ্ছে না। করোনার কারণে আরও পিছিয়ে গেছে সম্ভাবনা।

প্রকল্পের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট পিডিবি চট্টগ্রামের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, প্রায় তিন বছর আগে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় চট্টগ্রাম মহানগরীতে মাটির নিচ দিয়ে তার নেওয়ার জন্য ৪৫৮ কোটি টাকা অনুমোদন দেওয়া হয়। ‘পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন সিস্টেম ডেভেলপমেন্ট’ প্রকল্পের অধীনে এটি বাস্তবায়ন হওয়ার কথা। প্রাথমিকভাবে নগরের ২৪টি পয়েন্টে ৮৩ কিলোমিটার বিদ্যুৎ বিতরণ লাইন ভূগর্ভ দিয়ে নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়।

তবে দ্রুতই এই প্রকল্পের কাজ শুরু হচ্ছে না। ফোনে কথা হলে প্রকল্প পরিচালক মকবুল হোসেনের কণ্ঠে সেই আভাসই মিলল। তিনি পূর্বকোণকে বলেন, প্রাথমিকভাবে ৮৩ কিলোমিটার বিদ্যুৎ বিতরণ লাইন নির্মাণের জন্য নকশা চূড়ান্ত করা হয়েছে। তিন-চারমাস পর দরপত্র আহ্বান করা হতে পারে। এরপর কাজ পাওয়া ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি হবে। কতদিন পর এই প্রকল্পের কাজ শুরু হতে পারে তা স্পষ্ট করে জানাতে পারেননি মকবুল হোসেন। তবে তিনি একটি আনুমানিক ধারণা দেন। বলেন, ‘আশা করছি সব ঠিকঠাক হলে ছয় মাস পর কাজ শুরু হতে পারে। তবে করোনার কারণে কিছুটা পিছিয়ে গেছি আমরা। একই কারণে সরকারের পক্ষ থেকে অর্থছাড়ও কমিয়ে দেওয়া হয়েছে।’ অথচ গত বছরের জুনে এই প্রকল্পের দরপত্র আহ্বান করার কথা শুনিয়েছিলেন পিডিবি চট্টগ্রামের কর্মকর্তারা।

দেশে প্রথমবারের মতো মাটির নিচ দিয়ে বিদ্যুৎ সরবরাহ কার্যক্রম চালু হয় সিলেট নগরীতে। চলতি বছরের শুরুতে হজরত শাহজালালের (রহ.) মাজার এলাকায় ভূগর্ভস্থ বিদ্যুৎ লাইনে বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়ার পর পরীক্ষামূলকভাবে সঞ্চালন চালানো হয়। ধারাবাহিকভাবে সিলেট শহরের অন্যান্য এলাকায়ও ভূগর্ভ দিয়ে বিদ্যুৎ সরবরাহ কার্যক্রম চালানো হচ্ছে। সেখানে বিদ্যুতের তারের পাশাপাশি টেলিফোন, ইন্টারনেট, ক্যাবল লাইনসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সব তারও ভূগর্ভ দিয়ে নেওয়া হচ্ছে। এর ফলে একদিকে যেমন নগরীর সৌন্দর্য ফিরে এসেছে, তেমনি দুর্ঘটনাও কমে আসছে।

ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স চট্টগ্রাম সূত্র জানায়, গত পাঁচ বছরে চট্টগ্রামে ৩ হাজার ২৯৯টি অগ্নিকাণ্ড ঘটেছে। এসব অগ্নিকা-ের অর্ধেকেরই পেছনে ছিল বৈদ্যুতিক গোলযোগ। মাটির নিচ দিয়ে বিদ্যুতের তার নিয়ে যাওয়া হলে এই দুর্ঘটনা অনেকাংশে কমে যেতে পারে বলে মনে করছেন নগর পরিকল্পনাবিদরা।

তাই প্রকল্পটি দ্রুত বাস্তবায়ন করার দাবি জানিয়েছেন ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন, বাংলাদেশের (আইইবি) চট্টগ্রাম কেন্দ্রের সাবেক চেয়ারম্যান দেলোয়ার হোসেন মজুমদার।

তিনি পূর্বকোণকে বলেন, ‘এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করা গেলে অবশ্যই তা হবে প্রশংসনীয় উদ্যোগ। তবে এটি কেন্দ্রীয় বহুমুখী ভূ-সুড়ঙ্গ সিস্টেম স্থাপনের মাধ্যমে নেওয়া দরকার। যে সুড়ঙ্গ দিয়ে যাবতীয় তারের পাশাপাশি পানি ও গ্যাসের লাইনও নেওয়া যাবে। পিডিবির সঙ্গে অন্যান্য সেবা সংস্থা সমন্বয় করে এই সিস্টেম স্থাপন করতে পারে। এতে একদিকে যেমন অহেতুক অর্থ ব্যয় হবে না, তেমনি বারবার সড়ক কাটার ফলে সৃষ্ট ভোগান্তিও দূর হবে।’

 

 

 

 

পূর্বকোণ/আরপি

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট