নগরীর পাঁচলাইশ থানাধীন মোহাম্মদপুর মোহাম্মদীয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় সংলগ্ন ওই এলাকার একমাত্র জলাধারটি কৌশলে ক্রমান্বয়ে ভরাট করে ফেলা হচ্ছে। পুকুরটি রক্ষায় স্থানীয়দের পক্ষ থেকে সরকারের বিভিন্ন সংস্থায় একাধিকবার লিখিত আবেদন করলেও কোন সংস্থা এগিয়ে আসেনি।
পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিসংখ্যানে দেখা যায়, ১৯৮১ সালে চট্টগ্রামে ছোট-বড় মিলিয়ে প্রায় ২৫ হাজার পুকুর, দিঘি ও জলাশয় ছিল। ১৯৯১ সালে জেলা মৎস্য বিভাগের জরিপ অনুযায়ী চট্টগ্রামে দিঘি বা জলাধারের সংখ্যা ছিল ১৯ হাজার ২৫০টি। ২০০৬-০৭ সালের সিডিএ’র সর্বশেষ জরিপে পাওয়া যায় চার হাজার ৫২৩টি জলাধার।
সিডিএ’র ডিটেইলড এরিয়া প্ল্যান অনুযায়ী চট্টগ্রাম শহরে ১৫ কাঠার উপরে সকল দিঘি-পুকুর সংরক্ষিত হিসেবে গণ্য হবে। পুকুরের উপর ভবন নির্মাণের অনুমোদন দেয়ারও সুযোগ নেই। কিন্তু এই পুকুরে সেমিপাকা ঘর নির্মাণ করা হয়েছে। তাছাড়া আইনে বলা আছে, পুকুর ভরাট করে স্থাপনা নির্মাণ করতে গেলে সিডিএ, ফায়ার সার্ভিস, পরিবেশ অধিদপ্তরসহ সংশ্লিষ্ট সংস্থার অনুমোদন প্রয়োজন।
পুকুরটি রক্ষায় ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স ২০১৬ মালে একটি তদন্ত প্রতিবেদনও দিয়েছিল। ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, মোহাম্মদপুর এলাকায় বড় কোন পুকুর না থাকার কারণে অগ্নিকা-ের সময় এই পুকুরটির পানিই একমাত্র ভরসা। ফায়ার সার্ভিসের প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, পুকুরটির পশ্চিম পাশে প্রাথমিক বিদ্যালয় ও কিছু কাঁচা ঘর, দক্ষিণে দোকান এবং উত্তর ও পূর্বে কিছু অংশ ভরাট করা হয়েছে। প্রভাবশালী লোক পুকুরটি ভরাট করছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।
সরেজমিন পরিদর্শনকালে এলাকাবাসী জানান, গত কয়েকবছর ধরেই পুকুরটি ধীরে ধীরে ভরাট করা হচ্ছে। শুষ্ক মৌসুম এলে ভরাট করার তৎপরতা বেড়ে যায়। এবারো শুষ্ক মৌসুমের শুরুতে ভরাটের তৎপরতা শুরু হয়েছে।
দেখা গেছে, পুকুরটি চারপাশ থেকেই ধীরে ধীরে ভরাট করা হচ্ছে। মোহাম্মদীয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় সংলগ্ন অংশে ভরাট করে মাঠ বানানো হয়েছে। অপরপাশে সেমিপাকা বাড়ি নির্মাণ করা হয়েছে। ভরাট কাজ আড়াল করতে চারপাশে উঁচু করে ঘেরা দেয়া হয়েছে। পুকুরের মধ্যে সারাবছর সব ধরনের ময়লা আবর্জনা ফেলা হয়। পুকুরটি কখনোই সংস্কার করা হয় না। ইচ্ছাকৃতভাবেই পুকুরটিকে ব্যবহার অনুপযোগী করে কৌশলে ভরাট করা হচ্ছে বলে আশপাশের বাসিন্দারা জানান।
বাংলাদেশ পরিবেশ সংরক্ষণ আইন, ১৯৯৫ (সংশোধিত-২০১০) এর ৬(ঙ) অনুযায়ী জাতীয় অপরিহার্য স্বার্থ ছাড়া কোনো ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান কর্তৃক সরকারি বা আধাসরকারি এমনকি স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের বা ব্যক্তিমালিকানাধীন পুকুর ভরাট না করার বিধান রয়েছে। প্রাকৃতিক জলাধার সংরক্ষণ আইন-২০০০ অনুসারে কোনো পুকুর, জলাশয়, নদী, খাল ইত্যাদি ভরাট করা বেআইনি। ওই আইনের ৫ ধারা মতে প্রাকৃতিক জলাধার হিসেবে চিহ্নিত জায়গার শ্রেণি পরিবর্তন করা যাবে না বা উক্তরূপ জায়গা অন্য কোনোভাবে ব্যবহার করা যাবে না বা অনুরূপ ব্যবহারের জন্য ভাড়া, ইজারা বা অন্য কোনোভাবে হস্তান্তরও করা যাবে না। একই সঙ্গে প্রাকৃতিক জলাধার সংরক্ষণ আইন ২০০০ এর ৮ ও ১২ ধারার বিধানমতে, কোনো ব্যক্তি এই বিধান লঙ্ঘন করলে ৫ বছরের কারাদ- বা অনধিক ৫০ হাজার টাকা অর্থদ-ে অথবা উভয়দণ্ডে দণ্ডনীয় হবে।
পুকুরটির একাংশের মালিক আমিন চৌধুরী পূর্বকোণকে বলেন, তারা চান পুকুরটি রক্ষা হোক। অংশীদারদের কেউ কেউ টাকার প্রয়োজনে কিছু অংশ বিক্রি করেছে। মূলত বাইরের ক্রেতাদের কয়েকজন পুকুরটি ভরাট করছে। এবিষয়ে তিনি সরকারের সংশ্লিষ্ট সংস্থাসমূহের হস্তক্ষেপ কামনা করেন।
জানতে চাইলে সিডিএ’র ইমারত নির্মাণ কমিটির চেয়ারম্যান ও প্রধান নগর পরিকল্পনাবিদ শাহীনুল ইসলাম খান পূর্বকোণকে বলেন, এবিষয়ে খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা নেব।
পরিবেশ অধিদপ্তরের চট্টগ্রাম মহানগর পরিচালক নুর উল্লাহ নূরী পূর্বকোণকে বলেন, এ পুকুর নিয়ে কোন অভিযোগ পরিবেশ অধিদপ্তরে পড়েছে কিনা তাঁর জানা নেই। তবে এখন যেহেতু শুনেছেন তাই পুকুরটি রক্ষায় আইনি পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।
পূর্বকোণ/পি-আরপি