২০১৭ সালের ২৫ অক্টোবর আনুষ্ঠানিকভাবে সেবা কার্যক্রম শুরু হয় চমেক হাসপাতালের নতুন এমআরআই মেশিনের। প্রায় ১০ কোটি টাকা মূল্যের জাপানি মেশিনটি (‘হিটাচি ১.৫ টেসলা’র) সরবরাহ করে ঢাকার মেডিটেল প্রা. লিমিটেড নামের এক প্রতিষ্ঠান।
ক্রয় চুক্তি অনুযায়ী তিন বছরের ওয়ারেন্টি দেয়া হয়। যাত্রা শুরুর পর থেকে ঠিকঠাকই চলছিল। কিন্তু তিন বছর পূর্তির মাত্র তিনদিন পার হতেই যান্ত্রিক ত্রুটি দেখা দেয় গুরুত্বপূর্ণ ম্যাগনেটিং রিজোনেন্স ইমেজিং (এমআরআই) মেশিনটির। সাথে সাথেই অচল। এদিকে, ত্রুটি সারাতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ থেকে নেয়া হয়েছে উদ্যোগ। কেন্দ্রীয় দপ্তরে চালাচালি হয়েছে চিঠিপত্রও। কিন্তু মাস পেরুলেও সাড়া না পাওয়ায় কার্যত হারাতে বসেছে কোটি টাকা মূল্যের অত্যাধুনিক যন্ত্রটি। আর সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন সাধারণ রোগীরা। যদিও দ্রুত সময়ের মধ্যে পুনরায় চালু করতে ইতোমধ্যে ইঞ্জিনিয়ারের সহযোগিতা নেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। কিন্তু সে চেষ্টাও বৃথা।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, চলতি বছরের ২৮ অক্টোবর হঠাৎ যান্ত্রিক সমস্যা দেখা যায় হাসপাতালের রেডিওলজি ও ইমেজিং বিভাগের আওতাধীন উচ্চক্ষমতার এমআরআই মেশিনটির। যার কারণে বন্ধ হয়ে যায় রোগীদের সেবা কার্যক্রমও। জনস্বার্থে দ্রুত মেশিনটি মেরামত করতে পরদিন তথা ২৯ অক্টোবর হাসপাতালের রেডিওলজি ও ইমেজিং বিভাগের বিভাগীয় প্রধান চিঠির মাধ্যমে অবহিত করেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে। এর পরপরই হাসপাতাল পরিচালক বিষয়টি নিয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন ন্যাশনাল ইলেকট্রো-মেডিকেল ইকুইপমেন্ট মেইনটেন্যান্স ওয়ার্কশপ এন্ড ট্রেনিং সেন্টার (নিমিইউ এন্ড টিসি) এর সাথে যোগাযোগ করেন। কিন্তু এমআরআই মেশিনটির গুরুত্বপূর্ণ কিছু যন্ত্রের অংশ পুরোপুরি কার্যত হারানোর কারণে প্রয়োজন প্রায় দশ লাখ টাকা। নিমিইউ কর্তৃপক্ষ থেকে অনুমোদন না পেলে সেই ত্রুটি সারানোও কাজ করা অসম্ভব চমেক কর্তৃপক্ষের। বাধ্য হয়েই কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্তের দিকে তাকিয়ে আছেন তারা।
হাসপাতালের তথ্য অনুযায়ী, প্রতিদিনই চমেক হাসপাতালের নতুন কার্ডিওলজি বিভাগের নিচ তলায় অবস্থিত এমআরআই মেশিনে দিনে ১৫ থেকে ২০ জনের পরীক্ষা করা হয়ে থাকে। বেসরকারি ডায়াগনস্টিকে দাম তিনগুণ বেশি হওয়ায় চমেকে ভিড় করে থাকেন সাধারণ রোগীরা। কিন্তু গত ২৮ অক্টোবর থেকে যান্ত্রিক সমস্যা দেখায় সব ধরণের কাজ সাময়িকভাবে বন্ধ রয়েছে।
মেক হাসপাতালের রেডিওলজি ও ইমেজিং বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ও অধ্যাপক ডা. সুভাষ মজুমদার পূর্বকোণকে বলেন, ‘আপাতত সার্ভিসের জন্য বন্ধ আছে। ইতোমধ্যে নষ্ট মেশিন সচল করতে কোটেশন সংগ্রহ করা হয়েছে। এ কাজে ৯ থেকে ১০ লাখ টাকার প্রয়োজন হবে। তবে এখন পর্যন্ত বাজেট পাশ হয়নি। নিমিইউ থেকে ছাড় পেলেই দ্রুত কার্যক্রম চালু হবে।’
কবে নাগাদ এমআরআই মেশিনটির কার্যক্রম শুরু হতে পারে জানতে চাইলে হাসপাতালের উপ-পরিচালক ডা. আফতাবুল ইসলাম পূর্বকোণকে বলেন, ‘মাঝখানে একটু টেকনিক্যাল সমস্যা হয়েছিলো, বিষয়টি আমরা ঢাকায় লিখেছি। উনারা এসে দেখছেন, রিপিয়ারিং কাজ চলছে। কিছুটা সময় লাগবে।’
প্রসঙ্গতঃ শরীরের বিভিন্ন অংশের সূক্ষ্ম রোগ নির্ণয়ের জন্য বর্তমানে এমআরআই একটি নির্ভরযোগ্য যন্ত্র হিসেবে চিকিৎসকদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ। মস্তিষ্কের রোগ (টিউমার, স্ট্রোকসহ সব), মেরুদ-, জয়েন্ট (হাঁটু, কাঁধ, কব্জি, এবং গোড়ালি), পেট, স্তন, রক্তনালী, হার্ট এবং শরীরের অন্যান্য অংশের পরীক্ষার জন্য এমআরআই ব্যবহার করা হয়।
পূর্বকোণ/পি-আরপি