বয়স আনুমানিক ১৯ বছর। হাস্যোজ্জ্বল চেহারা। ডাক নাম কলি। আসল নাম সানজিদা মোহনা কলি। অল্প বয়সে বাবাকে হারান। বাবা মারা যাওয়ার পর মায়ের সাথে সংসারের হাল ধরেন। যদিও কলির বড় এক ভাই ও বোন আছে। ভাই-বোনের বিয়ে হয়েছে অনেক আগে। বড় ভাই তার সংসার নিয়ে থাকে। তাই কলিকেই মায়ের সাথে সংসারে হাল ধরতে হয়েছে। পূর্ব ষোলশহর বাদশা চেয়ারম্যানঘাটা এলাকার স্থানীয় বাসিন্দা কলি। চেয়ারম্যানঘাটা হাসান সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনে দেখা হয় কলির সাথে। সেখানে সবজি বিক্রি করেন তিনি। কেউ আসলেই প্রশ্ন করেন কি নিবেন। সকাল থেকে প্রায় রাত অবধি বিক্রি করেন সবজি। তার দৈনিক আয় গড়ে ৫/৬শ টাকা। জীবনের গল্প বলতে গিয়ে কলি বলেন, ‘যখন আমার বাবার আদর ও সহযোগিতা সম্পূর্ণভাবে দরকার ছিল তখনই আমি বাবাকে হারাই। বোনকে বাবা বিয়ে দিয়ে যায়। কিন্তু বড় ভাই থাকলেও বাবা মারা যাওয়ার পরে আমি আর মা কোনো সহযোগিতা পাইনি ভাই থেকে। ভাই তার সংসার ও ছেলে-মেয়ে নিয়ে আলাদা থাকেন। সেই সময় আমি আর মা অনেকটা অসহায় হয়ে পড়ি। তখন আমি মাকে বলি আমরা বাবার সবজি বিক্রির ব্যবসাটি চালিয়ে নেবো। তুমি আমাকে সবজি কিনে দাও আমি বিক্রি করবো। যেমন ভাবনা তেমন কাজ। মা একটি সমিতি থেকে কিছু টাকা লোন নিয়ে দেয়। আমি স্কুলের সামনে একটা ভ্যান গাড়ি নিয়ে সেখানে সবজি বিক্রি করতে শুরু করি। ধীরে ধীরে ব্যবসা ভালো হয়। এখন আমি আরেকটা ভ্যান গাড়ি নিয়েছি। আগের চেয়ে ব্যবসাও বড় হয়েছে। কিন্তু আমার কপালে সুখ বেশি দিন সইলো না। ২০১৬ সালে মিরসরাইয়ের এক ছেলের সাথে আমার বিয়ে হয়। প্রায় দুই বছর সংসারও করি। সে কোনো কাজই করতো না। আমিই তাকে বসিয়ে খাওয়াতাম। মোটামুটি ভালোই চলছিল মা আর তাকে নিয়ে আমার ছোট সংসার। প্রায় দেড় বছর আগে আমার হাতে একটি বিষ ফোঁড়া উঠে। এ ফোঁড়ার বিষে আমি অনেক দিন কাজ করতে পারিনি। তখন সংসারে আবার অভাব দেখা দেয়। তবুও আমি অসুস্থ শরীরে সবজি বিক্রি করে সাংসার চালাতাম। সে তখনই আমাকে ফেলে চলে যায়। অল্প বয়সে বাবাকে হারাই। ভাই বোনের ভালোবাসাও কপালে জুটলোনা। মা ছাড়া আমি কারো ভালোবাসা পাইনি’। এসময় একটি দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে আসে কলির।
তার সাথে আলাপকালে এসে পড়েন কলির মা নুর নাহার বেগমও। তিনি বলেন, আমার মেয়ে জীবনে অনেক কষ্ট করেছে। বাবা ও ভালোবাসার মানুষটিকেও হারিয়েছে। এখন আমার মেয়ে নিজেই স্বাবলম্বী।
পূর্বকোণ/এএ