চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪

সীমান্তে মিয়ানমারের ‘সেনা চৌকি’: বিজিবি’র টহল জোরদার

সীমান্তে মিয়ানমারের ‘সেনা চৌকি’: বিজিবি’র টহল জোরদার

উখিয়া সংবাদদাতা

১৪ সেপ্টেম্বর, ২০২০ | ৮:৫২ অপরাহ্ণ

বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ির তুমব্রু সীমান্তের ওপারে হঠাৎ ভারী অস্ত্র ও অতিরিক্ত সেনা মোতায়েন করেছে মিয়ানমার। সীমান্তের বাইশফাঁড়ি এলাকাসহ আশপাশে নতুন করে সবুজ রঙের তাঁবু টাঙিয়ে অস্থায়ী চৌকি স্থাপন করেছেন সেনারা। মিয়ানমারের এ ধরনের উস্কানিমূলক আচরণে শূন্যরেখায় অবস্থানরত হাজার হাজার রোহিঙ্গা ও সীমান্তের এপারের লোকজনের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে।

আজ সোমবার (১৪ সেপ্টেম্বর) সীমান্তে নজর রাখেন এমন একাধিক সরকারি কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।

কর্মকর্তারা বলছেন, এ বিষয়টি সংশ্লিষ্ট দপ্তরে জানানো হয়েছে। এদিকে গত রবিবার (১৩ সেপ্টেম্বর) সীমান্তে মিয়ানমারের সেনাদের সন্দেহজনক গতিবিধি লক্ষ করা গেছে। এমন পরিস্থিতিতে ঢাকায় মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূত অং কিউ ওয়েকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে তলব করা হয়েছিল।

জানতে চাইলে কক্সবাজার-৩৪ বিজিবি অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল আলী হায়দার আজাদ আহমেদ বলেন, আমরা আমাদের টহলসহ কার্যক্রম আরও জোরদার করেছি। আর সীমান্তে সবাইকে সতর্ক অবস্থানে রেখেছি। এ ব্যাপারে কোনোরকম নতুন অনুপ্রবেশসহ কোনো ঘটনা ঘটলে কঠোরভাবে প্রতিহত করা হবে। ওদের এলাকায় সন্দেহজনক গতিবিধিসহ সেনাদের উপস্থিতি আছে, সেটি জেনেছি।

সীমান্তের লোকজন জানায়, মিয়ানমার সেনাবাহিনীকে সীমান্তে চৌকি স্থাপনসহ তৎপর দেখা গেছে। বিশেষ করে কয়েকদিন ধরে সীমান্তের তুমব্রু থেকে লেবুছড়ি পর্যন্ত এলাকায় এপার থেকে প্রতিদিন মিয়ানমার সেনা সদস্যদের নানা তৎপরতার দৃশ্য চোখে পড়ছে। আমাদের সন্দেহ, মিয়ানমার সেনাবাহিনীর সদস্যরা তাদের বিজিপির (বর্ডার গার্ড পুলিশ) পোশাক পরে সেখানে অবস্থান করছে। তারা সেখানে ৭-৮টি তাঁবু টাঙিয়ে নতুন অস্থায়ী চৌকি স্থাপন করছে, যা আগে ছিল না। এর আগেও বেশ কয়েকবার সীমান্তে সেনা টহল বৃদ্ধির ঘটনা ঘটেছিল।

শূন্যরেখায় বাস করা রোহিঙ্গা শিবিরের এক নেতা বলেন, দুই দিন ধরে তমব্রু সীমান্তে গাড়ি চলাচল বেড়ে গেছে। যারা আসা-যাওয়া করছে তারা পুলিশ নাকি সেনাবাহিনী সেটি নিশ্চিত হওয়া যায়নি। তবে এই নিয়ে রোহিঙ্গা শিবিরের লোকজন ভয়ে আছে।

সূত্রে জানা গেছে, নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্তে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর সদস্য বৃদ্ধি করেছে। তারা সেখানে ভারী অস্ত্রশস্ত্র মজুদ করেছে। সীমান্তের এপার থেকেও মিয়ানমার সেনাবাহিনীর এ তৎপরতা লক্ষ করা যাচ্ছে। বিচ্ছিন্নতাবাদী আরাকান আর্মি, রাখাইনের সশস্ত্র সংগঠন আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মি (আরসা) দমন ও মিয়ানমারে আগামী ৮ অক্টোবর নির্বাচনসহ রাখাইনে মিয়ানমার সেনাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধরত আরাকান বিদ্রোহী বাহিনীর হেফাজতে থাকা দুই সেনা রোহিঙ্গা গণহত্যার স্বীকারোক্তি দেয়ায় সেনাদের এই তৎপরতা বলে জানা গেছে। তবে এসব তথ্য নিরপেক্ষভাবে যাচাই-বাচাই করা সম্ভব হয়নি।

সেন্টমার্টিন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নুর আহমেদ বলেন, দ্বীপের বরাবরের মতো আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা সতর্ক অবস্থানে রয়েছে। মিয়ানমারের জলসীমানায় বড় বড় জাহাজ দেখা যাচ্ছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সীমান্তে নজরদারি করা সরকারি এক কর্মকর্তা বলেছেন, মিয়ানমারে আগামী অক্টোবর মাসে নির্বাচন হওয়ার কথা রয়েছে। হয়তো নির্বাচন ঘিরে যাতে কোনও ধরনের বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি না হয়, সেজন্য তাদের এই তৎপরতা দেখা যাচ্ছে। তবে আমরা সীমান্তে কঠোর নজরদারি রাখছি।

টেকনাফ-২ বিজিবি অধিনায়ক লে. কর্নেল মো. ফয়সল হাসান খান বলেন, মিয়ানমারের অভ্যন্তরে সেনা সমাবেশ ও তাদের সন্দেহজনক গতিবিধির কথা জেনেছি। তবে সীমান্তে সেনা টহল বৃদ্ধির বিষয়টি সত্য নয়। সীমান্তে আমরা সতর্ক অবস্থানে রয়েছি।

 

 

 

 

 

 

পূর্বকোণ/কায়সার-আরপি

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট