চট্টগ্রাম মঙ্গলবার, ৩০ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

করোনার দ্বিতীয় ঢেউ নিয়ে উদ্বেগ

করোনার দ্বিতীয় ঢেউ নিয়ে উদ্বেগ

ইমাম হোসাইন রাজু

২৪ আগস্ট, ২০২০ | ৩:০০ অপরাহ্ণ

অঘোষিত দীর্ঘ লকডাউন, ব্যাপক হারে নমুনা পরীক্ষা। বহু সংখ্যক প্রাণহানির পরও সুখবর নেই করোনার সংক্রমণ রোধে। তারমধ্যে এ মহামারী কবে শেষ হবে, সেটাও নিশ্চিত নয়। এদিকে সব কিছুই এখন স্বাভাবিক। এমন পরিস্থিতির মধ্যেও স্বাস্থ্যবিধি থাক দূরের কথা, সব কিছুতেই যেন উদাসীনতা সাধারণ মানুষের। যার কারণে নতুন করে ফের সংক্রমণের আতঙ্ক বাড়ছে চট্টগ্রামে। ফলে যেকোন মুহূর্তে দ্বিতীয় দফা বা সেকেন্ড ওয়েব সংক্রমণ বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের। তাঁদের মতে, বিধি-নিষেধে শিথিলতা আনায় দ্বিতীয় দফায় সংক্রমণের ঝুঁকি প্রাণঘাতী হতে পারে।

এদিকে, ফের সংক্রমণের হানা নিয়ে নতুন করে জল্পনা শুরু করে দিয়েছে স্বয়ং স্বাস্থ্য বিভাগও। ইতোমধ্যে মাঠ পর্যায়ে মাস্ক ব্যবহার ও সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখাসহ স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিতে সংশ্লিষ্ট বিভাগ ও সংস্থাকে কঠোর হওয়ার পরামর্শ দিয়ে চিঠি দিয়েছেন চট্টগ্রাম বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ডা. হাসান শাহরিয়ার কবীর।

চিঠিতে তিনি উল্লেখ করেন, সামাজিক দূরত্ব ও মাস্ক ব্যবহারসহ স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করা না গেলে যে কোন মুহূর্তে দ্বিতীয় পর্যায়ে কোভিড-১৯ সংক্রমণের হার পুনরায় বেড়ে যাবে। একই সাথে পরিস্থিতি সামাল দেয়া কঠিন ও কষ্ট সাধ্য হয়ে পড়বে। দ্বিতীয় পর্যায়ে সংক্রমণের ফলে অন্যান্য জটিল রোগী বিশেষ করে ডায়াবেটিস, হৃদরোগে আক্রান্ত, কিডনী জটিলতাসহ অন্যান্য রোগীদের অবস্থা খুবই জটিল আকার ধারণ করবে। তাই এমনাবস্থায় প্রশাসক, আইন শৃঙ্খলা বাহিনী ও স্বাস্থ্য বিভাগসহ স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের যৌথ সমন্বয়ের মাধ্যমে স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিতসহ মাস্ক ব্যবহারের মনিটরিং জোরদার করা, বিধি না মানলে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার মাধ্যমে কঠোর হওয়া এবং প্রয়োজনে ব্যবস্থা গ্রহণ করার কথাও উল্লেখ করেন স্বাস্থ্য পরিচালক।

স্বাস্থ্য বিভাগের তথ্যে, ইতোমধ্যে চট্টগ্রামে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা প্রায় সাড়ে ১৬ হাজারের দ্বারপ্রান্তে। যাদের মধ্যে ২৬৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। এরমধ্যে চলতি মাসেই মৃত্যু হয়েছে ৩০ জনের। যদিও মাসের শুরুর দিকে মৃত্যুর হার কম ছিল, কিন্তু বিগত সপ্তাহে তা বেড়েছে। একদিনে সর্বোচ্চ চারজনের মৃত্যুও হয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে স্বাস্থ্য বিভাগও।

যদিও দ্বিতীয় ওয়েবের জন্য সতর্ক অবস্থানের কথা জানিয়ে চট্টগ্রাম জেলা সিভিল সার্জন ডা. সেখ ফজলে রাব্বি পূর্বকোণকে বলেন, ‘আগের চেয়ে মানুষের উদাসীনতা বেড়েছে। যা সংক্রমণের হারকে বাড়াতে পারে। যদিও পূর্বের চেয়ে শনাক্তের হার কিছুটা কমেছে। তবে দ্বিতীয় পর্যায়ে যে সংক্রমণ দেখা দিবে না, তা নিশ্চিত নয়। মূলত স্বাস্থ্যবিধি না মানার প্রবণতা এমন ঝুঁকি বাড়চ্ছে। এজন্য সবাইকে এখনই বাড়তি সতর্ক থাকতে হবে’।

তবে স্বাস্থ্য বিভাগ থেকে সংক্রমণের হার কমছে উল্লেখ করা হলেও মূলত নমুনা পরীক্ষার সংখ্যা কমায়, শনাক্তের হার কমেছে বলে উল্লেখ করেন স্বাস্থ্য সংশ্লিষ্টরা। তাদের মতে, পরীক্ষার সংখ্যা যদি পূর্বের ন্যায় বাড়ে, তাহলে সংক্রমণের হারও বাড়বে। এরমধ্যে যারা আক্রান্ত হচ্ছেন, কিন্তু পরীক্ষার আওতায় আসছেন না, এমন ব্যক্তিদের থেকেই দ্বিতীয় সংক্রমণের ঝুঁকি রয়েছে। এছাড়া সাধারণ মানুষের মধ্যে স্বাস্থ্যবিধি মানার যে প্রবণতা কমে এসেছে, তাতেও ঝুঁকি বাড়ার কারণ হতে পারে বলে আশঙ্কা চিকিৎসকদের।

দ্বিতীয় ওয়েব সামাল দেয়া চ্যালেঞ্জ উল্লেখ করে জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ মুক্তিযোদ্ধা ডা. মাহফুজুর রহমান বলেন, বিশ্বের অনেক দেশে দ্বিতীয় সংক্রমণ শুরু হয়েছে। আমাদের এখানেও আশংকা উড়িয়ে দেওয়া যায় না। তাই এখন থেকেই সব কিছু ঠিক রাখতে হবে। আর মানুষকে স্বাস্থ্যবিধি মানাতে প্রশাসনকে কঠোর হতে হবে। প্রয়োজনে এলাকা ভিত্তিক লকডাউনের চিন্তা করা উচিত। কেননা দ্বিতীয় সংক্রমণ শুরু হলে তা দীর্ঘস্থায়ী হবে। পরিস্থিতি সামাল দেয়া অনেক কঠিন হয়ে পড়বে। এজন্য এখন থেকেই নমুনা পরীক্ষা বাড়ানোর পাশাপাশি শনাক্তদের পৃথক করা নিশ্চিত করতে হবে। প্রয়োজনে বাসাবাড়িতেই আইসোলেশনের ব্যবস্থা করতে হবে’।

স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিতে প্রশাসনকে কঠোর হওয়ার পরামর্শ দিয়ে চট্টগ্রাম বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ডা. হাসান শাহরিয়ার কবীর পূর্বকোণকে বলেন, ‘স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিতে প্রয়োজনে আইন প্রয়োগ করতে হবে। ইতোমধ্যে এ বিষয়ে প্রশাসনকে চিঠিও দেয়া হয়েছে। আগে তারা স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিতে যেভাবে কঠোর ছিল, এখনও যদি বিষয়টি নজর দেয়, তাহলে অন্তত কিছুটা হলেও ফলপ্রসূ হবে। তাছাড়া বিষয়টি নিয়ে সাধারণ মানুষের মাঝেও সচেতনতা আসতে হবে। কিন্তু সবার মধ্যেই উদাসীনতা। এমন অবস্থায় পরবর্তী পরিস্থিতি কঠিন হয়ে পড়বে। তাই এখনই সময়, নিজেদের সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে’।

পূর্বকোণ/এএ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট