চট্টগ্রাম শনিবার, ১১ মে, ২০২৪

গ্রেপ্তার আতংকে এলাকাছাড়া পুরুষ

জেলে-পুলিশ সংঘর্ষের জের সীতাকু-ে সাড়ে ৬’শ জেলের বিরুদ্ধে মামলা

সৌমিত্র চক্রবর্তী , সীতাকু-

২৩ মে, ২০১৯ | ২:৪৪ পূর্বাহ্ণ

সীতাকু-ের কুমিরায় জেলে ও পুলিশের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনায় সুনির্দিষ্ট ৫৯ জনসহ ৬৫৬ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছে পুলিশ। বুধবার সীতাকু- থানার এসআই জাহেদ বাদি হয়ে মামলাটি দায়ের করেন। এদিকে গ্রামবাসীর বিরুদ্ধে মামলা দায়ের হওয়ায় গ্রেপ্তার আতঙ্কে এলাকাছাড়া হয়ে গেছেন পূরুষেরা। ফলে ওই এলাকায় চরম আতঙ্ক বিরাজ করছে। এদিকে এ ঘটনায় ইতিপূর্বে গ্রেপ্তারকৃতদের কোর্ট হাজতে পাঠালে আদালত তাদেরকে জেলে প্রেরণ করেন। মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, গত সোমবার রাত ১১টার দিকে সীতাকু- থানার এসআই জাহিদুল ইসলাম জসীম ফোর্স নিয়ে রুবেল নামক একজন আসামি ধরতে গেলে জেলেরা পুলিশের কাছ থেকে তাকে ছিনিয়ে নেয়। এ নিয়ে পুলিশের সাথে দফায় দফায় সংঘর্ষেও ঘটনা ঘটে। এসময় ওসি (তদন্ত) আফজাল হোসেন গুলিবিদ্ধ হওয়াসহ ১০ পুলিশ আহত হন। ভাঙচুর করা হয় পুলিশের গাড়ি। তাই সরকারি কাজে বাধা ও হামলার অভিযোগে বুধবার দুপুরে মামলা দায়ের করে পুলিশ। ঘটনার দিন গ্রেপ্তার করা ১১ জেলেকে এ মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে চালান করা হয়। আদালত তাদেরকে জেলে প্রেরণ করেন। এদিকে এ ঘটনার পর থেকে জেলে পূরুষরা দলে দলে এলাকা থেকে পালিয়ে যেতে শুরু করেছেন। বিশেষত যুবকদের কেউই এখন এলাকায় নেই। তার উপর মামলা হওয়ায় সর্বত্র গ্রেপ্তার আতঙ্ক বিরাজ করছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন জেলে গতকাল অভিযোগ করে

জানান, রুবেলের বিরুদ্ধে আগে কোন অভিযোগ ছিলো না। সে ভালো ছেলে হিসেবে এলাকায় পরিচিত। তাই তাকে ইয়াবা ব্যবসায়ী সাজিয়ে গ্রেপ্তার কেউ মেনে নিতে পারেনি বলেই তাকে কেড়ে নেওয়া হয়। এ ঘটনা নিয়ে উত্তেজনায় পুলিশ ও জেলেদের মধ্যে সংঘর্ষ হলেও পুলিশের পক্ষ নিয়ে বহিরাগত কিছু যুবক ওই এলাকায় রীতিমত তা-ব চালায়। এতে জেলেদের অন্তত ৩০-৪০টি ঘরে ভাঙচুর করা হয়। মন্দিরের প্রতীমা ভাঙচুর করা হয়েছে। অর্ধশত জেলে নারী-পূরুষ তাদের ধারালো ও দেশীয় অস্ত্রে আহত হন। কিন্তু এরপরও জেলেরা কারো কাছে অভিযোগ করতে পারছেন না। উল্টো পুলিশই এক তরফা মামলা করে হয়রানি করছে।
এদিকে ইতিমধ্যে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে বাংলাদেশ হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদ সভাপতি পঙ্কজ দেবনাথ। বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ সীতাকু- শাখার সভাপতি বিমল চন্দ্র নাথ, সম্পাদক স্বপন কুমার বণিক, সাবেক সভাপতি অধ্যাপক রঞ্জিত সাহা, সহ-সভাপতি সুলাল দাস সুনীল, সহ-সভাপতি ডা. সজল শীল, মাস্টার বাবুল চন্দ্র দে, উপদেষ্টা সঞ্জিত দে রেড্ডি, মিন্টু মল্লিক, যুগ্ন সম্পাদক সুমন দাশ, জন্মাষ্টমী উদযাপন পরিষদের সভাপতি বিষ্ণু চরণ দাশ, সাধারণ সম্পাদক বিশ^জিত পাল প্রমুখ। নেতৃবৃন্দ জানান, যাকে পুলিশ মাদক ব্যবসায়ী বলছে সে রুবেল আসলে একজন ভালো ছেলে হিসেবে পরিচিত। এলাকার কেউ পুলিশের কথা বিশ^াস করেননি। এ কারণে তারা বাধা দেন।
সেখানে পুলিশের সাথে সংঘর্ষের সময় ব্যাপক তা-ব চালানো হয়েছে। মন্দিরের প্রতীমা, প্রায় অর্ধশত ঘরবাড়ি ভাঙচুর, শ্লীলতাহাতিসহ নানান ঘটনা ঘটেছে। অর্ধশত জেলে আহতও হয়েছেন। কিন্তু ১১ জন জেলে গ্রেপ্তার হয়েছেন। তাদের বেশিরভাগও নিরপরাধ। এর মধ্যে আবার মামলা হওয়ায় গ্রামের পূরুষরা সব পালিয়ে গেছেন। এক অন্যরকম আতঙ্ক বিরাজ করছে সেখানে। তারা এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে কোন নীরিহ কেউ যেন হয়রানি না হয় সেজন্য প্রশাসনের সুদৃষ্টি কামনা করেন।
সীতাকু- থানার ওসি মো. দেলওয়ার হোসেন বলেন, ইয়াবা ব্যবসায়ী রুবেলের কাছে ৩০ হাজার ইয়াবা থাকার তথ্য নিশ্চিত হয়েই আমাদের ফোর্স সেখানে গিয়ে তাকে গ্রেপ্তার করে। কিন্তু ইয়াবা ব্যবসায়ীর অন্য সঙ্গীরা সাধারণ জেলেদের ভুল বুঝিয়ে আমাদের ওপর ব্যাপক হামলা করায় ১০ জন পুলিশ আহত হয়। আমাদের ব্যবহৃত মাইক্রোবাসটিও ভাঙচুর করে তারা। এসব কারণে এসআই জাহিদুল ইসলাম জসীম বাদি হয়ে মামলা দায়ের করেন। মামলায় সুনির্দ্বিষ্ট ৫৯ জন ও অজ্ঞাত ৬০০ জনকে আসামি করা হয়েছে। এতে গ্রেপ্তার আছে ১১ জন। অন্য আসামিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে। বহিরাগত যুবকদের নিয়ে জেলেদের ওপর হামলা বিষয়ে জানতে চাইলে হামলার কথা অস্বীকার করে ওসি মো. দেলওয়ার হোসেন বলেন, আমরা সেখানে হামলার শিকার পুলিশ সদস্যদের উদ্ধারে গিয়েছিলাম। কোন হামলা করিনি। তবে অন্য কেউ হামলা চালিয়েছে কিনা তিনি জানেন না।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট