চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

ভারী গাড়ির ভার সামলাতে হিমশিম

আয়তন: ১.২৫ বর্গ কিলোমিটার জনসংখ্যা: ১ লাখ ১০ হাজার ভোটার: ২৯ হাজার ৬৯৭ জন

আল-আমিন সিকদার

২৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২০ | ২:২৫ পূর্বাহ্ণ

বাংলাদেশের অর্থনীতির চাকা যেমন সচল রেখেছে চট্টগ্রাম বন্দর। তেমনি চট্টগ্রাম বন্দরের চাকা সচল রেখেছে পরিবহণ খাত। প্রতিদিন দেশের বিভিন্ন স্থানে এই পরিবহনের মাধ্যমে পণ্য আনা-নেয়া করছেন ব্যবসায়ীরা। এই পরিবহণ ব্যবসাপাড়া হিসেবে সমধিক পরিচিত চট্টগ্রামের ২৯ নম্বর পশ্চিম মাদারবাড়ি ওয়ার্ড।

বন্দরকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা চট্টগ্রামের পরিবহন ব্যবসায়ীদের তালিকাটাও কিছুটা দীর্ঘ। প্রতিদিন এই জায়গায় ৭ থেকে ৮ কোটি টাকার লেনদেন হয়ে থাকে পরিবহন ব্যবসায়ীদের। শুধু পরিবহন ব্যবসা নয়, এই ওয়ার্ডটির পরিচিতি রয়েছে পুরনো জাহাজের পাইপ, লোহার শিট ও লুব্রিকেন্টের পাইকারি ও খুচরা ব্যবসার জন্যও।

তবে এই ব্যবসায় এতো বড় ভূমিকা রাখছে যে ট্রাক কাভার্ডভ্যান নামক পরিবহণ, সেই ভারী যানবাহনের জন্য এই ওয়ার্ডে নেই কোন টার্মিনাল, গ্যারেজ কিংবা স্ট্যান্ড। নির্দিষ্ট কোনো স্ট্যান্ড না থাকায় রাস্তার পাশে সারিবদ্ধভাবে পার্ক করে রাখা ট্রাক, কাভার্ডভ্যান আর লরির কারণে সৃষ্টি হয় তীব্র যানজটের।
এদিকে, পশ্চিম মাদারবাড়ি ওয়ার্ডে তীব্র আকার ধারণ করা যানজটের ভোগান্তির তীব্রতাকে ছাপিয়ে গেছে মাদক আর জুয়া। অভিযোগ রয়েছে, কাউন্সিলর কার্যালয়ের পাশেই মাদক সেবন ও কেনা-বেচা হয়ে থাকে। সন্ধ্যা হলেই বালুর মাঠ, স্টেশন কলোনি এলাকায় বসে মাদকের হাট।
শুধু তাই নয় জরাজীর্ণ রাস্তাঘাট, অনুন্নত ড্রেনেজ ব্যবস্থা আর আবর্জনা অপসারণে গাফিলতির কারণে এখানকার জনজীবন অনেকটাই বিপন্ন হয়ে পড়েছে। এমনটাই অভিযোগ স্থানীয়দের।
সিএনজি চালক মনির বলেন, ‘আমাদের এলাকায় তো বেশ কিছু সমস্যা আছে তবে আমি যেহেতু সিএনজি চালাই তাই আমার যানজটের সমস্যায় বেশি পড়তে হয়। ঘণ্টার পর ঘণ্টা আমাদের জ্যামে আটকে থাকতে হয়। আর ময়লা আবর্জনার সমস্যাও আমাদের এলাকায় আছে।’
কুদ্দুস নামে এই ওয়ার্ডের আরেক এক বাসিন্দা বলেন, ‘আমিতো যানজটকেই আমাদের প্রধান সমস্যা হিসেবে দেখি। আমার মনে হয় ট্রাফিক বিভাগ যদি এই বিষয়ে নজর দেয় তাহলে আমাদের এই সমস্যার সমাধান হবে। আর মাদকের সমস্যাও আমাদের এলাকায় রয়েছে। মাদকের আখড়াগুলো যদি উচ্ছেদ করা হয় তাহলে মাদক ব্যবসায়ী ও সেবনকারী নির্মূল হবে বলে আমি মনে করি। ভবিষ্যত কাউন্সিলর যেই আসুক তিনি যেন এই সমস্যার সমাধান করেন’।

এই ওয়ার্ডের বর্তমান কাউন্সিলর গোলাম মো. জোবায়েরের কাছে জানতে চাওয়া হয় যানজট ও রাস্তাঘাটের বেহাল দশার বিষয়ে। তিনি পূর্বকোণকে বলেন, ‘আমাদের এলাকায় বেশকিছু ট্রান্সপোর্টের ব্যবসা থাকায় তারা মালামাল লোড-আনলোড করতে রাস্তায় গাড়ি দাঁড় করায়। আর এই ট্রাকগুলোর পার্কিংয়ের জন্য শহরের বাইরে একটি ট্রাক টার্মিনাল করার পরিকল্পনা করছে সিটি কর্পোরেশন। এই টার্মিনাল নির্মাণের পরিকল্পনা যদি বাস্তবায়ন হয় তাহলে এই যানজট আর থাকবে না বলে আমি মনে করি। আর এলাকার এমন কোনো সড়ক নেই আমি সংস্কার করিনি। ১৫টিরও বেশি রাস্তা সংস্কার করেছি আমি’।
মাদক নিয়ে এলাকাবাসীর অভিযোগের ভিত্তিতে তাকে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, আমাদের ওয়ার্ডে বরিশাল কলোনি নামে একটি এলাকা ছিল যাকে মাদকের আখড়া বলা হতো। তৎকালীন পুলিশ কমিশনার ও এলাকাবাসীকে সাথে নিয়ে ঐ কলোনি উচ্ছেদ করে সেখানে একটি মাদ্রাসা আমি নির্মাণ করেছি’।
এলাকায় সুপেয় পানির অভাবের কথা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এমপি এম এ লতিফ সাহেব এলাকায় চাহিদা অনুযায়ী বেশ কিছু গভীর নলকূপ স্থাপন করেছেন, যার মাধ্যমে সুপেয় পানির অভাব অনেকটা লাঘব হয়েছে। আর ওয়াসার নতুন সংযোগের যে কাজ চলছে তা ২০২১ সালের মধ্যে শেষ হয়ে যাওয়ার কথা রয়েছে। এই কাজ শেষ হলে সুপেয় পানির অভাব আর থাকবে না’।

বিগত সময়ে ওয়ার্ডের উন্নয়নে কি কি করেছেন? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমি প্রায় ২৪ কেটি টাকার বরাদ্দ পেয়েছিলাম যার মধ্যে ২২ কেটি টাকার কাজ শেষ হয়েছে। এর মধ্যে আলি ফজল মেম্বার বাড়ি থেকে নজিপুকুর মাজার পর্যন্ত নর্দমা আমি সম্পূর্ণ সংস্কার করেছি। আর বর্তমানে শুভপুর বাসস্ট্যান্ড থেকে বারেক বিল্ডিং পর্যন্ত তিনটি কালভার্টসহ রাস্তা সংস্কারের কাজ চলমান রয়েছে এবং হোটেল নেওয়াজ থেকে শুরু করে নোয়াখালী বাসস্ট্যান্ড পর্যন্ত রাস্তার সংস্কার কাজ অর্ধেক হয়েছে আর বাকিটা খুব শীঘ্রই সম্পন্ন হবে। আমার মেয়াদকালের মধ্যেই এই চলমান কাজগুলো শেষ করার চেষ্টা আমি করবো’। আওয়ামী লীগের সমর্থিত প্রার্থী হিসেবে জনগণের রায় প্রত্যাশা করেছেন তিনি।
অন্যদিকে দলের সমর্থন না পেলেও নির্বাচনে অংশগ্রহণ করার কথা জানিয়েছেন সদরঘাট থানা আওয়ামী লীগের সদস্য মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন। স্বতন্ত্র হয়ে লড়ার ঘোষণা দিয়েছেন তিনি। নির্বাচিত হলে তিনি মাদকের বিস্তার রোধে সচেতনতা বৃদ্ধি করা, ওয়ার্ডে সরকারি বিদ্যালয় স্থাপনে প্রয়োজনীয় পদক্ষপ গ্রহণ করা, সবুজ ও বাসযোগ্য ওয়ার্ডে পরিণত করার লক্ষ্যে বৃক্ষরোপণ ও সামাজিক বনায়ন বৃদ্ধি করা, যানজট নিরসনে ট্রাফিক সিস্টেম আধুনিকায়ন, রাস্তাঘাটের উন্নয়ন ও জলাবদ্ধতা নিরসনে নালা নর্দমায় প্রয়োজনীয় উন্নয়ন সাধন করা, এলাকায় বেকার যুবক-যুবতীদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা এবং বেকারত্ব নিরসনে কারিগরি শিক্ষ প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার বিষয়ে জোর দেবেন।

এই ওয়ার্ডের কাউন্সিলর হিসেবে জয়লাভ করতে বিএনপির হয়ে লড়বেন বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী সদরঘাট থানা বিএনপির সভাপতি মো. সালাউদ্দীন। নির্বাচিত হলে ওয়ার্ডের উন্নয়নে তিনি ৮টি বিষয়কে প্রাধান্য দিবেন বলে জানিয়েছেন। এগুলো হলো- এলাকা থেকে মাদক নির্মূল, এলাকার সুপেয় পানির অভাব মেটাতে কাজ করা, অনুন্নত রাস্তার সংস্কার করা, শিক্ষার মান উন্নয়নে কাজ করা। এছাড়া ভরাট হয়ে যাওয়া ঐতিহ্যবাহী গুলজার খাল খননে কর্তৃপক্ষের সহযোগিতায় কাজ করতে চান তিনি। তবে নিজ উদ্যোগে তিনি এলাকার গরিব ও সুবিধাবঞ্চিতদের জন্য একটি এম্বুলেন্সের ব্যবস্থা করার পাশাপাশি সম্পূর্ণ ওয়ার্ডকে সিসি ক্যামেরার আওতায় আনার কথা জানিয়েছেন পূর্বকোণকে।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট