চট্টগ্রাম শনিবার, ২৭ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

বহু বাজিকর সর্বস্বান্ত

অনলাইনে জুয়া হ গ্রেপ্তার ১৬ জুয়াড়ি

নিজস্ব প্রতিবেদক

১৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২০ | ৩:১৬ পূর্বাহ্ণ

‘বাজি ধরা’র নামে জুয়া সারাদেশে মহামারির মতো ছড়িয়ে পড়েছে। এখন এটা আর স্থানীয় পর্যায়ে বা দেশের মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই। অনলাইনে আন্তর্জাতিক বেটিং সাইটগুলোয় বাংলাদেশি জুয়াড়িদের অংশগ্রহণ বেড়েই চলেছে। ফলে অনেক বাজিকর তো সর্বস্বান্ত হচ্ছেই, একইসঙ্গে দেশের টাকার একটি অংশও চলে যাচ্ছে বিদেশে।

অনলাইনে জুয়া খেলার অপরাধে গতকাল (বৃহস্পতিবার) নগরীর নুপূর মার্কেট পাখি গলির ভেতরে জনৈক ইদ্রিসের ভাতঘর নামক একটি খাবারের দোকান থেকে ১৬ জুয়াড়িকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তারা হল, কোতোয়ালী আলকরণ এলাকার মৃত রাজা মিয়ার ছেলে মো. শিপু (৩২), আবদুল রাজ্জাকের ছেলে ইমান আলি মিঠু (৩০), শাহ আলমের ছেলে আমজাদ হোসেন রুবেল (২৯), ওমর মিয়ার ছেলে মো. ইদ্রিস (৪০), শরীয়তপুরের মৃত গিয়াস উদ্দিনের ছেলে মো. শাহ আলম (৩১), সাতকানিয়ার সোলায়মান সওদাগরের ছেলে মো. ওসমান (৩৭), সাতকানিয়ার হাজি ফরিদুল আলমের ছেলে আবদুল ছফুর প্রকাশ নয়ন (৩০), সাতকানিয়া রূপকানিয়ার আবদুল গফুরের ছেলে মো. রানা (২৬), বাকলিয়ার বলিরহাটের সুনীল চৌধুরীর ছেলে বিপ্লব চৌধুরী (৩২), পটিয়ার আবদুল আজিজের ছেলে মো. রায়হান ইসলাম (৩১), সাতকানিয়ার গোয়াজর পাড়ার আবুল কাশেমের ছেলে মো. ফারুক (২৫), পটিয়ার মুজিবুল হকের ছেলে বেলাল উদ্দিন (২৭), কুমিল্লার তিতাস থানার মো. সানি (২৩), নগরীর বক্শির হাটের মৃত মনোরঞ্জন বনিকের ছেলে রাজু বনিক (২)), সাতকানিয়ার মির্জাখীলের ফরিদুল আলমের ছেলে আবদুল ওয়াহেদ (২৬) ও লোহাগাড়ার উত্তর কলাউজানের নূর বাদশার ছেলে নজরুল ইসলাম।
কোতোয়ালী থানার পরিদর্শক মোহাম্মদ মহসিন জানান, বেট ৩৬৫ নামক একটি ওয়েবসাইটের মাধ্যমে তারা দীর্ঘদিন ধরে অনলাইনে ক্রিকেট জুয়া খেলছিলো। তারা ডলারে জুয়া খেলতো। ওসি মহসিন বলেন, অনলাইন জুয়ার মাধ্যতে অবৈধভাবে দেশের বাইরে টাকা পাচার করছিলো। তাদের কাছে জুয়া খেলা সংক্রান্ত বেশ কিছু জিনিসপত্র পাওয়া গেছে।

জানা যায়, বেট ৩৬৫ ছাড়াও অনলাইনে বেশকিছু বেটিং সাইট আছে, যারা ক্রিকেট, ফুটবলসহ অসংখ্য খেলায় বাজি ধরার ব্যবস্থা করে দেয়। এগুলো বেশিরভাগই ইংল্যান্ড, যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়া বা যেসব দেশে জুয়া বৈধ সেসব দেশভিত্তিক। সেসব সাইটে একাউন্ট খুলতে রেজিস্ট্রেশন করতে হয়। ডলারও জমা দিতে হয়। এর জন্য প্রয়োজন হয় পাসপোর্ট অথবা জাতীয় পরিচয় পত্রের কপি, ব্যাংক একাউন্টসহ প্রয়োজনীয় কাগজপত্র। বাংলাদেশিদের এই দেশে থেকে ওইসব সাইটে একাউন্ট খোলা প্রায় অসম্ভব।

জানা গেছে, এজন্য পরিচিত বাংলাদেশি অথচ বিদেশে থাকেন তাদের নামে বাজিকররা একাউন্ট খোলেন। আর সেই একাউন্ট চালানো হয় বাংলাদেশ থেকে। বেটিং একাউন্টের টাকা লেনদেন হয় বিদেশে থাকা ব্যক্তির একাউন্টে। কিন্তু বাংলাদেশে থাকা একাউন্ট চালনাকারীর সঙ্গে লেনদেন হয় অন্য উপায়ে। হয় তিনি মানি লন্ডারিংয়ের মাধ্যমে বিদেশে টাকা পাঠান, অথবা বিদেশে থাকা ব্যক্তির বাংলাদেশি প্রতিনিধি টাকা আদান-প্রদান করেন। যাদের বিদেশে কোনো পরিচিতজন নেই তাদের জন্যও রয়েছে অন্য ব্যবস্থা। মাসিক ভাড়ায়ও পাওয়া যায় বেটিং একাউন্ট। বাংলাদেশে এখন ভাড়ায় বেশি চলছে বেটিং একাউন্ট। বিশেষ করে আইপিএল, বিপিএলের মতো টি-২০ লিগগুলো শুরু হলেই এই একাউন্টগুলোর চাহিদা বাড়ে। বেটিং সাইটগুলোয় যেকোনো খেলা শুরুর আগে বাজির দর নির্ধারণ করে দেয়া হয়। কোন দলের পক্ষে বাজি ধরে জিতলে কত টাকা দেয়া হবে এবং হারলে কত টাকা দিতে হবে সেটা উল্লেখ করা থাকে।
শুধু তাই নয়, বাজি ধরার জন্যও রয়েছে পরামর্শ সাইট ও ফেসবুক পেইজ। এসব সাইট বা পেইজে যে কোনো টুর্নামেন্টের শুরুতে ফ্রিতে পরামর্শ দেয়া হয় এবং দেয়া হয় খেলা সম্পর্কিত নানা তথ্য দেয়া হয়। পরে টাকার বিনিময়ে পরামর্শ দেয়া হয়।

বেট ৩৬৫ কি. বিশ্বে অনেক বেটিং সাইট রয়েছে। সেগুলোর মধ্যে যুক্তরাজ্যের স্টোর সিটির কোটস পরিবার ২০০১ সালে চালু করে ক্রীড়াবিষয়ক বেটিং সাইট বেট ৩৬৫ ডটকম। গত ১৮ বছরের পথচলায় বিশ্বের বৃহৎ স্পোর্টস গেম্বলিং সাইট বা ক্রীড়া বিষয়ক বাজির (জুয়া) সাইটে পরিণত হয়েছে । বিশ্বের ২০০টি দেশের ১৯ মিলিয়নেরও বেশি গ্রাহক রয়েছে বেট ৩৬৫ সাইটের। বেট ৩৬৫ আন্তর্জাতিক মানের একটি প্রতিষ্ঠান। যেখানে দেশি বিদেশের যে কোন মানুষ বিভিন্ন খেলাধূলার উপর বাজি ধরতে পারে। যেটাকে ইংরেজিতে বলা হয় বেট করা।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট