চট্টগ্রাম শনিবার, ২৭ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

আজ থেকে ৬৫ দিন সাগরে মাছ ধরা বন্ধ

২ লাখ মৎস্যজীবী উৎকন্ঠায়

নিজস্ব সংবাদদাতা , কক্সবাজার

২০ মে, ২০১৯ | ২:৫৪ পূর্বাহ্ণ

আজ (২০ মে) থেকে আগামী ২৩ জুলাই পর্যন্ত টানা ৬৫ দিন বঙ্গোপসাগরে মাছ ধরা বন্ধ থাকছে। সরকারি আদেশে সাগরে মাছধরা বন্ধ থাকছে। তবে দীর্ঘ ৬৫ দিন সাগরে না গেলে কক্সবাজারের প্রায় ২ লাখ মৎস্যজীবী কিভাবে তাদের সংসার চালাবে এই নিয়ে দেখা দিয়েছে উৎকন্ঠা। জেলে পরিবার গুলোতে চলছে হতাশা।
ইতোমধ্যে সেই নির্বাহী আদেশ গেজেট সহকারে প্রতিটি জেলাসহ কক্সবাজারের মৎস্য বিভাগেও এসে পৌঁছেছে। সে অনুযায়ী জেলার মৎস্য অফিস ৬৫ দিন সাগরে মাছ ধরা বন্ধের বিধি নিষেধ বাস্তবায়ন শুরু করে দিয়েছে।
কক্সবাজার জেলা মৎস্য অফিসার এস.এম খালেকুজ্জামান বলেন, আজ ২০ মে থেকে ২৩ জুলাই পর্যন্ত ৬৫ দিন সাগরে মাছ ধরা বন্ধ রাখার বিষয়ে গেজেট সহকারে নিদের্শ পেয়েছি, সে অনুযায়ী আমরা ইতিমধ্যে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে সভা করেছি। মাইকিং লিফলেট বিতরণও করা হয়েছে। তবে এই দীর্ঘ সময় মাছ ধরা বন্ধ থাকাকালে জেলেদের জন্য কোন প্রণোদনা দেওয়ার ব্যবস্থার বিষয়ে তিনি স্পষ্ট কিছুই জানেন না বলে জানান। হলে সেটা ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের আওতায় হবে বলে জানান তিনি।
এদিকে প্রথমবারের মত দীর্ঘ ৬৫ দিন সাগরে যেতে না পারলে পরিবার পরিজন নিয়ে না খেয়ে থাকতে হবে বলে জানান বেশির ভাগ মৎস্যজীবী। তাই এই সময়টা কিছুটা কমানোর দাবি জানান তারা। কক্সবাজার জেলা মৎস্য অফিস সূত্রে জানা গেছে, সারা দেশে আজ ২০ মে থেকে ২৩ জুলাই মোট ৬৫ দিন সাগরে সব ধরনের নৌযান চলাচল নিষিদ্ধ থাকবে। তাই এই ৬৫ দিন সাগরে কোন বোট যেতে পারবে না অর্থাৎ মাছ ধরা বন্ধ থাকবে।
জানা গেছে, চলতি বছরের ২৪ জানুয়ারি চট্টগ্রাম সার্কিট হাউসে একটি সভায় সরকারের মৎস্য ও প্রাণী সম্পদ প্রতিমন্ত্রী মো. আশরাফ আলী খান খসরু এমপি’র সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় সিদ্ধান্ত হয় এবারেই প্রথমবারের মত সারাদেশে ৬৫ দিন বঙ্গোপাসাগরে সব ধরনের নৌযান চলাচল বন্ধ থাকবে। মূলত সামুদ্রিক মৎস্য সম্পদের সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার জন্য মাছের প্রজননের সুবিধার্থে প্রতিবছর ২০ মে থেকে ২৩ জুলাই ৬৫ দিন বঙ্গোপাসাগরে মাছ ধরা বন্ধ থাকবে। এতে সাগরে মাছের উৎপাদন বাড়বে এবং নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের পরে সাগরে মাছ আহরণের সংখ্যা বাড়বে। এতে মৎস্যজীবীদের কল্যাণ হবে বলে মনে করেন উক্ত কমিটি।
তবে এই খবরে উৎকন্ঠায় পড়ে কক্সবাজারের প্রায় ২ লাখ মৎস্যজীবী। সরকারি হিসাবে ৪৮ হাজার ৩৯৩ জন মৎস্যজীবী বা জেলে থাকলেও বেসরকারি হিসাবে ২ লাখের বেশি মানুষ এই পেশার সাথে জড়িত বলে জানা গেছে।
কক্সবাজার শহরের টেকপাড়া এলাকার বোট মালিক জয়নাল সওদাগর বলেন, আমরা যখন থেকে ৬৫ দিন অবরোধের কথা শুনেছি রীতিমত আতংকিত হয়ে পড়েছি। কারণ এখন অনেকটা মৌসুম সাগরে কিছুটা মাছ ধরা পড়ছে, যেহেতু আমাদের আর কোন ব্যবসা নেই, সাগরে বোট পাঠিয়ে সেখান থেকে কিছু পেলে সেটা দিয়েই আমাদের সংসার চলে। এছাড়া আগস্টের দিকে আরো ২২ দিন অবরোধতো আছেই। সব মিলিয়ে আমার মতে সরকার এটা ভুল সিদ্ধান্ত নিয়েছে, এতে মৎস্যজীবীদের ব্যাপক ক্ষতি হবে।
একই এলাকার আমির হোসন বলেন, ঈদের মৌসুমে সাগরে যদি মাছ ধরতে আমাদের বোট না যায়; তাহলে সংসার-ছেলে মেয়েরা কি করবে ? আমার মতে এটা খুব খারাপ সিদ্ধান্ত হয়েছে। এখনো সময় আছে সরকারের কাছে সময়টা আবারো বিবেচনা করার জন্য অনুরোধ করছি।
এদিকে টেকনাফ উপজেলার মৎস্যজীবী আমির হোসেন বলেন, ইয়াবা পাচার হওয়ার অজুহাতে বছর খানেক ধরে আমরা নদী বা সাগরে যেতে পারছি না, তার উপর এখন এই দীর্ঘ সময় অবরোধের কারণে টেকনাফের বেশির ভাগ বোট মালিক বোট বিক্রি করতে বাধ্য হবে।
মহেশখালীর মাঝি নজরুল ইসলাম বলেন, দীর্ঘ ৬৫ দিন মাছ ধরা বন্ধ থাকবে। বাড়িতে ৪ ছেলে মেয়ে স্কুল-কলেজে যায়। তাদের লেখাপড়ার খরচ কে দেবে। ভাত কাপড় কিভাবে আসবে বুঝতে পারছি না। যেহেতু আমার পরিবারে আর কোন আয়ের মানুষ নেই। আমি মনে করি সময়টা কিছুটা কমালে সাগরে মাছের আকাল পড়বে না।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট