চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

মায়েদের জন্য অফুরান ভালোবাসা

মুনমুন বড়ুয়া

১০ মে, ২০২০ | ৮:০৫ অপরাহ্ণ

দেশের জাতীয় সংগীতে আমার সবচেয়ে প্রিয় সত্যি কথাটা বলা হয়ে গেছে – ‘মা তোর মুখের বাণী আমার কানে লাগে সুধার মতো, মা তোর বদনখানি মলিন হলে আমি নয়ন জলে ভাসি’। পৃথিবীতে সন্তানের কাছে সবচেয়ে প্রিয় বন্ধুটি মা। মায়েরা পৃথিবীতে সন্তানের জন্য যা করেন তা পৃথিবীর অন্য কারো সাথে তুলনা করা যায় না। আঁধারের সাথে আমার কোন বিরোধ নেই, কিন্তু মায়ের মুখে একটু কষ্টের ছায়াও আমার কাছে চরম অস্বস্তিকর। সুখ-দুঃখ নিয়েই মানুষের জীবন, কিন্তু মায়ের দুঃখগুলো যেন তাঁর মনকে স্পর্শ করতে না পারে সেজন্য সবসময় তাঁকে যতটা পারি হাসি-আনন্দে রাখার চেষ্টা করি। কাছাকাছি যখন থেকেছি তখন সারাক্ষণ বিরামহীন রেডিও র মতো মায়ের কানের কাছে বেজেই যেতাম। এজন্য মুখে হাজার বকুনি শুনলেও বুঝতাম এই অত্যাচার ই মায়ের ভালো লাগে! মাঝে মাঝে কিছুটা মান-অভিমানে মন খারাপ হলেও পরক্ষণে আবার সব ঠিকঠাক মিটিয়ে নিয়েছি। কাউকে ভালোবাসলে সবচেয়ে বেশি যে জিনিসটা বোঝা দরকার সেটা হল – কোন কাজে ভালোবাসার মানুষ টা খুশি হয়, আর কিসে কষ্ট পায়। আমাদের মধ্যে বোঝাপড়াটা তেমনই বেশ আঁটসাঁট, জোরালো।

চাকরি সূত্রে পরিবার থেকে দূরে গিয়ে যেন এই ভালোবাসার গভীরতা বেড়েছে বহুগুণ। বুঝেছি মায়ের ছায়া থেকে দূরে থাকাটা কতটা কষ্টের। এ পর্যন্ত চট্টগ্রামের বাসা থেকে কর্মস্থলে আসার সময় মায়ের চোখে চোখ রেখে-’ আসি’ বলাটাই কখনো হয়ে ওঠেনি ! পৃথিবীতে সবকিছুকে ইতিবাচক ভাবে মেনে নিলে আসলেই জীবনে অনেক কিছু শেখা যায়। পরিবার থেকে দূরে থেকে এখন নিজের ভুল গুলোকে নিজের চোখে দেখে সেগুলোকে বার বার শুধরে নিজেকে আরো গুছিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করি। নিজের একাকীত্ব আমাকে কখনো তাড়া করে না। অফিস থেকে বাসায় ফিরে নিজের খাওয়ার মত একটু আধটু রান্না-বান্না করে, বাসার দরজা-জানালা, পাহাড়, লেক, গাছপালা, ফুল, প্রজাপতি, পাখি আর বইপত্তের সাথে কথা বলে, এই হেরে গলায় গান গেয়ে আমার সময় ঠিক ই কেটে যায়।

আমি সব সময় ভয় পাই- আমার মায়ের একাকীত্বকে। আমি বুঝি – ‘মনুষ্য বিহীন একাকীত্বের চেয়েও মানুষের মাঝে থেকে একাকীত্ব’ মানুষকে কতটা অসহায় করে দিতে পারে। তাই দূরে থাকলেও প্রতিটা মুহূর্তে কথায় কথায় মায়ের কাছাকাছি থাকার চেষ্টা করি। সেই শৈশব থেকে সারাবেলা মায়ের আদর যত্নে বেড়ে উঠে ছেলেমেয়েরা, বড় হয়ে অনেকেই ভাবে মা কে অত সময় দেওয়ার সুযোগ কই! এটা না ভেবে আমাদের প্রত্যেকের ভাবা উচিত মা ই আছে আমার ছায়া হয়ে আমার পাশে পাশে। মা এতকাল আগলে রেখেছেন, এবার আমাদের মা কে আগলে রাখবার পালা।

দেশটাও আমার কাছে মায়ের ই মতো। এদেশের জল, হাওয়া, প্রকৃতিতে আমাদের বেড়ে ওঠা। এদেশের কাছ থেকে আমরা পেয়েছি আমাদের প্রয়োজনীয় সকল অধিকার। হয়তো অন্যান্য দেশের মত অনেক কিছু দেওয়ার সাধ্য আমাদের মায়ের ছিল না। তারপরও বলতে চাই -“ অনেক তোমার খেয়েছি গো অনেক নিয়েছি মা, জানি নে তো কি বা তোমায় দিয়েছি মা!” এবছর চাকরি করে দেশ মাতা আমাকে যা দিয়েছেন তার ঋণ বহুমূল্যে শোধ করবার সুযোগ পেয়েছি। জানি পৃথিবীতে কোন মায়ের ঋণ ই শোধ করা যায় না। তবুও দেশমাতৃকার কল্যাণে কাজ করে দেশের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য যদি আরো একটু বেশি সুন্দর একটা বাংলাদেশ রেখে যেতে পারি তবেই ভাববো আমার এ জন্ম সার্থক! সবাইকে মা দিবসের শুভেচ্ছা। পৃথিবীর সব মা ভালো থাকুক, মায়ের প্রতিটা সন্তান ভালো থাকুক।

 

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট