সুপারসাইক্লোন আম্ফানে রাজশাহীতে আমের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। চাষিদের মতে বাগানের প্রায় এক- তৃতীয়াংশ আম ঝরে পড়ে গেছে যেখানে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মতে,ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ ১০ শতাংশ হতে পারে। এদিকে ঝড়ে আম পড়ে ফেটে যাওয়ার কারণে সে আম কেউ কিনতে চাইছেন না। যে কারণে ক্ষতির মুখে আমচাষিরা।
জানা গেছে, বুধবার (২১ মে) রাত ১২টার পর থেকে জেলার চারঘাট, পুঠিয়া ও বাগমারা উপজেলার উপর দিয়ে ব্যাপক তাণ্ডব চালায় ঘূর্ণিঝড় আম্ফান। এতে করে এসব এলাকার সিংহভাগ আম গাছ থেকে পড়ে যায়।
বেশকিছু এলাকায় গাছপালা ভেঙে পড়ে। মাঠের পাকা ধান নষ্ট হয়েছে। নিচু জমির ধান বৃষ্টির পানিতে ডুবে গেছে।
জেলা দুর্যোগ সাড়া দান গ্রুপের বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, এই ঝরে পড়া আম প্রাণ কোম্পানির পক্ষ থেকে কেনা হবে। তবে কৃষি বিভাগ জানিয়েছে, প্রাণ এই আম কিনবে না বলে জানিয়ে দিয়েছে। কারণ ঝড়ে পড়া আম নষ্ট হয়ে যায়। গাছ থেকে কাঁচা আম কিনবে তারা।
রাজশাহী কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, এবার জেলায় ২ লাখ ১১ হাজার মেট্রিক টন আম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। ঝড়ের পর এই লক্ষ্যমাত্রা অর্জন নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে।
ব্যবসায়ী ও আমচাষি আনোয়ার হোসেনের সাথে কথা বলে জানা যায় , বাগানের বড় সব আম ঝরে গেছে। গাছের দিকে তাকালে মনে হচ্ছে গাছে আমই নেই। তিনি বলেন, গত বছর তাঁর নিজের ও কেনা মিলে প্রায় ৩০ লাখ টাকার আম বিক্রি হয়েছিল। গত বছরের দামে হিসাব করলে এবার তাঁর অন্তত ২৫ লাখ টাকার আম ছিল। এখন ঝড়ের পর গাছ দেখে মনে হচ্ছে, গাছে পাঁচ লাখ টাকার বেশি আম নেই।
এদিকে, বাঘা উপজেলার দিঘা গ্রামের আমচাষি গোলাম তোফাজ্জল বলেন, গত বছরের মতো দাম পেলে এবার তাঁর তিন লাখ টাকার আম ছিল। ঝড়ের পর বাগানে গিয়ে মনে হচ্ছে দামই আসবেন না।
উপজেলার নওটিকা গ্রামের আমচাষি তোহাজ্জত হাসান বলেন, তাঁর গ্রামের বাগানগুলোর এক–তৃতীয়াংশ আম ঝড়ের কারণে পড়ে গেছে। অনেক গাছের ডালপালা ভেঙে গেছে।
দিঘা গ্রামের আরেক আমচাষি জিয়াউর রহমান। তিনি বলছেন, ঝড়ে পড়া ২০ মণ আম কুড়িয়েই তিনি ভুল করেছেন। এই আম নেয়ার কোনো লোকই তিনি পাচ্ছেন না।
উপজেলার পীরগাছা গ্রামের চাষি নবাব আলী বলেন, তেঁথুলিয়া ও পীরগাছা গ্রামের রাস্তার পাশে একটি পরিবার অন্তত ৫০ মণ আম কুড়িয়ে স্তূপ করেছে। তাঁর পাশের আরেকটি পরিবার ৩০ মণ আম কুড়িয়েছে। তাঁরা এখন এই আম বিক্রি করার কোনো ক্রেতা পাচ্ছেন না। এই আম ফেলে দিতে হবে বা পানির দরে বিক্রি করে দিতে হবে।
রাজশাহী জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা আমিনুল ইসলাম বলেন, জেলা দুর্যোগ সাড়াদান গ্রুপের সভায় সিদ্ধান্ত হয়েছিল ঝড়ে পড়ে যাওয়া আম প্রাণ কোম্পানি কিনবে।
কিন্তু খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রাণ কোম্পানি রাজশাহীর ঝড়ে পড়া আম কিনবে না। তারা জানিয়েছে, ঝড়ে পড়ে যাওয়া আম নষ্ট হয়ে যায়। গাছ থেকে পেড়ে দিলে আচার তৈরির জন্য তারা সেই আম কিনবে।
পূর্বকোণ/ এএ