চট্টগ্রাম শনিবার, ২৭ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

করোনার দিন

কেমন আছেন সৌদি প্রবাসী বাংলাদেশিরা

কামাল পারভেজ অভি, সৌদিআরব

৬ এপ্রিল, ২০২০ | ২:৫২ পূর্বাহ্ণ

বৈশ্বিক মহামারী প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস মধ্যপ্রাচ্যের সৌদিআরব সহ সারা পৃথিবীকে ইতিমধ্যে গ্রাস করেছে। প্রায় পুরো পৃথিবীতে এ মহামারী ছড়িয়ে পড়েছে। এখন পর্যন্ত বিশ্বে ১২ লাখের বেশি মানুষ করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে। এ রোগে আক্রান্ত হয়ে বিশ্বে এখন পর্যন্ত ৬৪ হাজারের ও বেশি মানুষ মৃত্যুবরণ করেছে। বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো সৌদিআরবও করোনাভাইরাসে অবরুদ্ধ। দেশটিতে দিন দিন আক্রান্তের সংখ্যা হু হু করে বেড়েই চলছে। গতকাল রবিবার পর্যন্ত আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ছিল ২ হাজার ৩শ’ ৭০ জন। এখন পর্যন্ত মৃত্যু হয়েছে ২৯ জনের। এদের মধ্যে মদিনায় করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর মিছিলে চার বাংলাদেশিও রয়েছে। করোনা প্রতিরোধে গত ২৫ মার্চ থেকে পুরো সৌদিআরব জুড়ে চলছে কারফিউ। অন্যদিকে, শুধুমাত্র পবিত্র মক্কা নগরী, মদিনা ও জেদ্দায় আংশিক এলাকায় চলছে ২৪ ঘণ্টা কারফিউ। ফলে দেশটির জনগণের পাশাপাশি বাসায় বসে অবরুদ্ধ দিন কাটাচ্ছেন প্রায় ২০ লাখ প্রবাসী বাংলাদেশি। বিশেষ কোন কাজ ছাড়া কেউ ঘর থেকে বের হচ্ছেন না। সরকার, প্রশাসন থেকে কড়া নির্দেশ জারি করা হয়েছে। অপ্রয়োজনে ঘোরাঘুরি বন্ধ এবং সব ধরনের জনসমাগমও নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। গণপরিবহনও বন্ধ। শাস্তি হিসেবে জেল-জরিমানা করা হচ্ছে। বন্ধ রয়েছে সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। শিক্ষার্থীদের জন্য অনলাইন ক্লাস চালু করা হয়েছে। তারা যেন ঘরে বসেই লেখাপড়ার কাজ করতে পারে। আবার অনেক বাংলাদেশি শিক্ষার্থী বাসায় বসেই অনলাইনে ক্লাস আর পরীক্ষা দিচ্ছে। কারফিউ থাকায় আর আতঙ্কের কারণে কেউ বাহিরে বের হতে পারছে না। সরেজমিনে দেখা যায়, কয়েকজন প্রবাসী বাংলাদেশি এই অবসর সময়ে ঘরেই ক্রিকেটসহ বিভিন্ন খেলাধুলা করে ব্যস্ত সময় পার করছেন। তবে বেশী বিপাকে পড়েছেন সৌদিআরবে অবস্থানরত বাংলাদেশি পরিবারগুলো। বিশেষ করে ছোট ছেলে মেয়েরা। তারা এখন ঘরবন্দী জীবনযাপন করছে। দেশটিতে কারফিউ জারির ফলে বাচ্চারা এখন আর সাগর পাড়ে, শিশুপার্ক, বিনোদনকেন্দ্রগুলোয় যেতে পারছে না। খাবারের দোকানসহ সব ব্যবসা প্রতিষ্ঠানও বন্ধ করে দেয় দেশটির সরকার। অধিকাংশ অফিস-আদালত, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান বন্ধ। কয়েকজন জেদ্দার প্রবাসী বাংলাদেশি ব্যবসায়ী দৈনিক পূর্বকোণকে জানান, আমরা অনেক বাংলাদেশিরাই এখানে ব্যবসা করি। করোনার কারণে আমরা সবাই ব্যবসা গুটিয়ে কোয়ারেন্টিনে বাসায় আছি। আর অবসরে ঘরেই ক্রিকেটসহ বিভিন্ন খেলাধুলা করে আমাদের সময় কাটছে। এদিকে, মক্কার ব্যবসায়ীরাও জানান, করোনাভাইরাস বিস্তার ঠেকাতে আবাসিক হোটেলগুলো বন্ধ করে দেওয়ার কারণে এখন নিজের খরচ চালাতে হিমশিম খাচ্ছি। আয়ের ওপরেই চলে আমাদের পরিবার। আমরা আসলে আতঙ্কিত আমাদের দেশে থাকা পরিবার পরিজনদের জন্য। কারণ দেশেও ভাইরাস ছড়াচ্ছে বা ছড়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে, সেটা নিয়েই আমরা বেশি আতঙ্কিত।
বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে অসহায়দের মধ্যে নগদ অর্থ ও খাদ্যসামগ্রী বিতরণ করছেন সৌদি প্রবাসী বাংলাদেশিরা। দেশটিতে অবস্থানরত বাংলাদেশিরা জানান, প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের কারণে বাংলাদেশের নিম্ন আয়ের মানুষেরা আর্থিক সংকটে পড়েছে। এই পরিস্থিতিতে সারা দেশে ত্রাণ কার্যক্রম পরিচালনায় অংশ নিচ্ছে প্রবাসী বাংলাদেশিরা। এদিকে সৌদিআরবে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত গোলাম মসিহ দেশটিতে বসবাসরত বাংলাদেশিদের করোনা প্রতিরোধে সতর্কতা ও সৌদিআরবের আইন মেনে চলার আহবান জানান।
সৌদি প্রবাসীদের একটা বড় অংশ নিয়মিত পরিবারের খরচের জন্য দেশে টাকা পাঠিয়ে থাকেন। এখন তারাও বিপাকে পড়েছেন সবচেয়ে বেশি। আবার অনেক বাংলাদেশি তাদের বেতন না পাওয়ার কারণে নিজের খরচ চালাতে প্রায় হিমশিম খাচ্ছেন। এই অচলাবস্থা কিছুদিন চলতে থাকলে প্রবাসী বাংলাদেশিরা মানবেতর জীবনযাপন করবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
করোনা থেকে মুক্তি পেতে এবং দেশ-জাতি ও বিশ্ববাসীর জন্য মহান আল্লাহর রাব্বুল আলামিনের কাছে সাহায্য কামনা করে কোরআন তেলোয়াত, পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ ও নফল রোজা রাখছেন গৃহবন্দী ২০ লাখ প্রবাসী বাংলাদেশি।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট