চট্টগ্রাম শনিবার, ২৭ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

মন্ত্রণালয়ের নির্দেশ উপেক্ষিত

৮৩ শতাংশ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেই সতর্কতামূলক নোটিশ নেই শতভাগ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন লঙ্ঘন ৪ শতাংশ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে তামাকজাত দ্রব্যের বিজ্ঞাপন ৩ শতাংশ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সীমানার মধ্যে তামাক বিক্রেতা ৬২ শতাংশ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ১০০ মিটারের মধ্যে বিক্রয়কেন্দ্র

ইমরান বিন ছবুর

১৪ জানুয়ারি, ২০২০ | ৩:১৯ পূর্বাহ্ণ

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশ উপেক্ষা করে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের আশপাশে চলছে সিগারেট ও তামাকজাত দ্রব্যের বিক্রি ও বিজ্ঞাপন। এছাড়া নগরীর সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ১০০ গজের মধ্যে তামাকের বিক্রয়, বিজ্ঞাপন ও প্রচারণা বন্ধে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন। গত বছরের সেপ্টেম্বরে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করলেও তা এখনো বাস্তবায়ন হয়নি।

স্কুলগামী শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্যঝুঁকি বিবেচনায় রেখে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের আশপাশে সিগারেট ও তামাকজাত দ্রব্য বিক্রি নিষিদ্ধ করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। দেশের মাধ্যমিক পর্যায়ের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং প্রতিষ্ঠানের পাশে ধূমপান ও তামাকজাত পণ্যের ব্যবহার, বিক্রি, প্রদর্শন ও বিজ্ঞাপন প্রচার বন্ধের জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। শিক্ষাবোর্ড চেয়ারম্যান, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালককে এ নির্দেশ দিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।

গত বছরের ১২ ডিসেম্বর তামাকজাত পণ্য ব্যবহার বন্ধসহ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ভেতরে ও আশপাশে বিক্রি, প্রদর্শন ও বিজ্ঞাপন প্রচারণা বন্ধের এ আদেশ জারি করা হয়। আদেশের পর গত ৮ জানুয়ারি মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তা ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রধানকে তা বাস্তবায়নের নির্দেশ দিয়েছে মন্ত্রণালয়।
দেশে ধূমপান বা তামাকজাত পণ্যের ব্যবহার নিয়ন্ত্রণে আইন থাকলেও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বা আশেপাশে ধূমপানসহ মাদকদ্রব্যের ব্যবহার বন্ধ হয়নি। এমনকি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের দেয়াল ঘেঁষে গড়ে উঠেছে পান সিগারেটের দোকান। এছাড়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের দেয়ালে লাগানো হয় তামাকপন্যের বিজ্ঞাপনও। এর ফলে খুব সহজেই তামাকের মৃত্যুফাঁদে পা দিচ্ছে স্কুলপড়–য়া কোমলমতি শিক্ষার্থীরা। শখের বসে ধরা সিগারেট থেকে পরবর্তীতে জড়িয়ে পড়ছে অন্য মরণনেশায়।
এ সম্পর্কে জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মো. জসিম উদ্দিন জানান, মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনার পর আমরা বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন করেছি। যেসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের আশপাশে দোকান রয়েছে আমরা তাদের মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা জানিয়ে দিয়েছি। পরিদর্শনের সময় আমাদের পরিদর্শকরা এ বিষয়টি গুরুত্বে সাথে দেখছেন। তবে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের আশপাশে তামাক প্রদর্শন ও বিক্রি হচ্ছে না বলে দাবি জেলা শিক্ষা অফিসারের।

সম্প্রতি ‘চট্টগ্রাম শহরে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন প্রতিপালনের অবস্থা শীর্ষক’ এক জরিপ পরিচালনা করে বেসরকারি উন্নয়ন সংগঠন ইপসা। এতে জরিপের ফলাফলে বলা হচ্ছে, চট্টগ্রামের ৪১ শতাংশ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ধূমপানের নিদর্শন পাওয়া গেছে। আইন অনুযায়ী সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ধূমপান হতে বিরত থাকার সতকর্তামূলক নোটিশ থাকা বাধ্যতামূলক হলেও ৮৩ শতাংশ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেই সতর্কতামূলক নোটিশ পাওয়া যায়নি। সংস্থাটি বলছে, চট্টগ্রামের শতভাগ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন লঙ্ঘনের চিত্র পাওয়া গেছে। গত বছরের জুনে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের ১২৫টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এই জরিপ পরিচালনা করা হয়।

এছাড়া ৪ শতাংশ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে তামাকজাত দ্রব্যের বিজ্ঞাপন পাওয়া গেছে, ৩ শতাংশ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সীমানার মধ্যে ভ্রাম্যমান বিক্রেতাকে তামাকজাত দ্রব্য বিক্রয় করতে দেখা গেছে, ৬২ শতাংশ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সীমানা থেকে ১০০ মিটারের মধ্যে পাওয়া গেছে তামাকজাত দ্রব্যের বিক্রয়কেন্দ্র।
এ সম্পর্কে ইপসার উপ-পরিচালক নাছিম বানু বলেন, ‘শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে তামাকজাত পণ্যের ব্যবহারের চিত্র খুবই হতাশাজনক। আমরা তামাকমুক্ত চট্টগ্রাম শহর গড়ে তোলার জন্য চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের সাথে যৌথভাবে কাজ করছি। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এই সার্কুলারের ফলে সেই কর্মসূচি আরো এগিয়ে যাবে বলে আশা রাখি। ’
এদিকে, নগরীর সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ১০০ গজের মধ্যে তামাকপণ্যের বিক্রয়, বিজ্ঞাপন ও প্রচারণা বন্ধে গত বছরের আগস্ট মাসে গণবিজ্ঞপ্তি জারি করেছিল চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন। গত বছরের ১০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে এই নির্দেশনা বাস্তবায়নে বিক্রেতা ও পৃষ্ঠপোষকদের সময় বেঁধে দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু ৪ মাস পেরোলেও এখনো পর্যন্ত বন্ধ হয়নি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের আশেপাশে তামাকপণ্যের বিক্রয়, বিজ্ঞাপন।

এ প্রসঙ্গে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন প্রধান শিক্ষা কর্মকর্তা সুমন বড়ুয়া বলেন, মানুষের এসব অভ্যাস তো রাতারাতি পরিবর্তন করা যাবে না। মানুষকে সচেতন করার জন্য আমরা কাজ করছি। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ নগরীর বিভিন্ন স্থানে ক্যাম্পেন চালাচ্ছি। এছাড়া, তামাকপণ্যের ক্ষতিক্ষর প্রভাব থেকে সচেতন হওয়ার জন্য আমরা অসংখ্য লিফলেট, স্টিকার ও পোষ্টার ছাপানোর চিন্তা ভাবনা করছি।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট