চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

ভেটেরিনারি সার্জন নেই বাঁশখালীতে, নেই ড্রেসারও

প্রয়োজনীয় সেবাবঞ্চিত খামারি

একটি সিলিং মেশিন স্থাপন প্রাণের দাবি শত শত গরু ভুগছে লাম্পি স্কিন ডিজিজে

অনুপম কুমার অভি, বাঁশখালী

৩ ডিসেম্বর, ২০১৯ | ৪:৪১ পূর্বাহ্ণ

বাঁশখালী উপজেলায় গ্রামেগঞ্জে প্রতিটি ইউনিয়নে দুই তিনজন পল্লী চিকিৎসক নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে গরু, ছাগল, হাঁস, মুরগি লালন- পালনকারীরা। পশু হাসপাতালে ভেটেরিনারি সার্জন নেই। নেই ড্রেসারও। প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ও তিনজন উপ-সহকারী কর্মকর্তা থাকলেও খামারিরা তাদের কাছ থেকে প্রয়োজনীয় সেবা পান না।

উপজেলায় উন্নত জাতের গরু লালন-পালনের সংখ্যা দিন দিন বৃদ্ধি পাওয়ায় এলাকাটি ডেইরি জোন হিসাবে স্বীকৃতি পেয়েছে। এলাকায় অর্ধশতাধিক খামারি অস্ট্র্রেলিয়ান, ফ্রিজিয়ান, হলস্টেন, শাহিওয়ালসহ বিভিন্ন বিদেশি জাতের দুধের গরু লালন পালন করছেন। এ খামারিদের উৎপাদিত দুধ প্রক্রিয়াজাতকরণ সংরক্ষনণ ও সরবরাহের ব্যবস্থা না থাকায় খামারিরা ক্ষতির সম্মুখিন হচ্ছেন।
খামারিরা সরকারিভাবে কৃষিঋণ না পাওয়াতে ধার-কর্জ করে গরুর খামার গড়ে তুলেছেন। প্রতিটি ইউনিয়নে শত শত ছোট-বড় গরুর মধ্যে লাম্পি স্কিন ডিজিজ মহামারী আকারে দেখা দিলে খামারিদের মধ্যে আতংক দেখা দিয়েছে।

বাঁশখালী প্রাণিসম্পদ অফিস সূত্র জানায়- বাঁশখালী উপজেলার ছনুয়া, শেখেরখিল, পুঁইছড়ি, চাম্বল, শীলকূপ, গ-ামারা, সরল, কাথারিয়া, কালীপুর, বৈলছড়ি, খানখানাবাদ, বাহারছড়া, সাধনপুর, পুকুরিয়া এই ১৪টি ইউনিয়নে ও বাঁশখালী পৌরসভা সদর জলদিতে ৪৫টি গরুর খামার রয়েছে। এছাড়া ১২টি ছাগলের খামার, ব্রয়লার মুরগির খামার ৩৪৩টি, লেয়ার (ডিম) খামার ১৮টি, ভেড়ার খামার সাতটি, মহিষের আটটি খামার রয়েছে। অধিকাংশ বসতবাড়িতে হাঁস-মুরগি লালন পালন চলছে।

প্রাণিসম্পদ বিভাগে সরকারি সেবার পাশাপাশি বেসরকারিভাবে ব্রাক, এসিআই, লালটিপ, আমেরিকান ডেইরি, প্রজননের জন্য কাজ করে যাচ্ছে।
পুকুরিয়া ইউনিয়নের পল্লী পশু চিকিৎসক সাজু মিয়া বলেন, এলাকায় চিকিৎসা সেবার চাহিদা থাকায় দীর্ঘদিন থেকে সামান্য টাকা নিয়ে (৫০ থেকে ১০০ টাকায়) গরু ও হাঁস-মুরগির চিকিৎসা করছেন। কাথারিয়া ইউনিয়নের ধুপি পাড়ার টুনু দত্তের স্ত্রী রুপা দত্ত বলেন, এলাকায় বিভিন্ন বাড়িতে গরুর ক্ষুরা রোগ ও গায়ের চামড়ায় ফোস্কা উঠে জ্বর বাড়ছে। একমাস ধরেও এ চিকিৎসার কোনো উন্নতি হচ্ছে না।
বৈলছড়ি ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ডের মোহাম্মদ ইউছুফ বলেন, গরুর চামড়ায় ক্ষত হয়ে যাচ্ছে। জ্বর ও ব্যথা আছে। খাবারের অনীহা রয়েছে। এ রোগে আক্রান্ত গরু দিয়ে চাষাবাদ ও করা যাচ্ছে না।

বাঁশখালীর ডেইরি ফার্মার মোহাম্মদ হোসাইন বলেন, গত ৫-৬ বছর ধরে বাঁশখালীতে গড়ে উঠেছে অর্ধশতাধিক গরুর খামার। প্রতিটি খামারে তিন থেকে ৩০টি পর্যন্ত উন্নত জাতের গরু রয়েছে। এলাকায় ২০ থেকে ২৫ লিটার দুধ বিক্রি হলেও অধিকাংশ দুধ খামারিদের গলার কাঁটা হয়ে যায়। পক্ষান্তওে উন্নত জাতের প্রতিটি গরু থেকে ৩০-৩২ লিটার পর্যন্ত দুধ উৎপাদন হয়। বাজারজাতকরণের কোন ব্যবস্থা নেই। এখানে একটি সিলিং মেশিন স্থাপন খামারিদের দাবি। নিজস্ব উদ্যোগে খামার গড়ে তোলা হলেও খামারিদের সরকারিভাবে কোনো ঋণের ব্যবস্থা নেই।

বাঁশখালী উপজেলার প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা ডা. সমরঞ্জন বড়–য়া বলেন, উপজেলার প্রতিটি এলাকার খামারিদেরকে রোগ বালাইসহ গরুর স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিতকরণের কাজ চলছে। তিনি অভিযোগ করেন, সাধারণ কৃষকদের গরুর রোগব্যাধি হলেই প্রশিক্ষণবিহীন পল্লী চিকিৎসকরা ১/২ মাস এন্টিবায়োটিক ঔষধ ব্যবহার করে গরুকে আরো অসুস্থ করে ফেলে। এতে হাসপাতালে আনার পর সেবা দিতে গিয়ে অনেক সমস্যা দেখা দেয়। অধিকাংশ গরুর মালিক বেসরকারি ডাক্তারদের চিকিৎসা নিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। প্রতিটি এলাকায় হাঁস-মুরগি গরু-ছাগলের গণনা চলছে। গণনা শেষ হলেই আধুনিকায়ন করা হবে। আবহাওয়ার কারণে বিভিন্ন জায়গা থেকে সংক্রামক হিসাবে মশা মাছির কামড়ে এ রোগের সৃষ্টি হচ্ছে বলে ধারনা। সাম্প্রতিক সময়ে ৩ মাস ধরে লাম্পি স্কিন ডিজিজ বাড়ছে, চিকিৎসা সেবাও চলছে।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট