চট্টগ্রাম শনিবার, ২৭ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

নগরীর স্কুলসমূহের পিছিয়ে পড়ার নেপথ্যে ৪ বিষয়

ইফতেখারুল ইসলাম

৭ মে, ২০১৯ | ২:২৮ পূর্বাহ্ণ

এসএসসি পরীক্ষায় চট্টগ্রাম শহরের স্কুলসমূহের ফল গতবারের তুলনায় খারাপ হওয়ার জন্য চারটি বিষয়কে দায়ী করছে শিক্ষা বোর্ড। বোর্ডের ভাষ্যমতে শিক্ষার্থীরা ফিন্যান্স এ- ব্যাংকিং, বাংলা, গণিত এবং বিজ্ঞান বিষয়ে খারাপ করেছে। তাই জিপিএ-৫ কমে গেছে। তবে শিক্ষাবোর্ড বলছে কঠোর নজরদারির কারণে পাবর্ত্য চট্টগ্রামসহ মফস্বলের পরীক্ষার্থীরা এবার গতবারের তুলনায় ভাল ফলাফল করেছে। কিন্তু শহরের পরীক্ষার্থীদের পিছিয়ে পড়ার কারণ ব্যাখ্যা করেনি বোর্ড।
এদিকে, শিক্ষকদের অভিমত অতি আত্মবিশ^াস শহরের পরীক্ষার্থীদের ডোবাতে পারে। এছাড়া যথাযথ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত শিক্ষকের হাতে শহরের স্কুলগুলোর পরীক্ষার্থীদের খাতা মূল্যায়নের দায়িত্ব পড়েছে কিনা তাও খতিয়ে দেখা উচিত।
চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ড জানায়, গতবার তাদের অধীনে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করা পরীক্ষার্থীদের মধ্যে মোট জিপিএ-৫ পেয়েছিল ৮০৯৪ জন। এবার তা ৭০১ জন কমে ৭৩৯৩ হয়েছে। এর জন্য তারা চারটি বিষয়কেই দায়ী করেছেন। তাদের তথ্যমতে গতবার বাংলায় জিপিএ-৫ পেয়েছিল ১০২৩৪ জন। এবার তা কমে ৬৫৮১ জনে নেমে এসেছে। পরীক্ষার্থীরা মূলত এই বিষয়ের নৈর্ব্যক্তিক প্রশ্নে কম নম্বর পেয়েছে। গতবার গণিতে জিপিএ-৫ পেয়েছিল ১৩৪৮৭ জন। এবার তা প্রায় ৩৬ শতাংশ কমে গেছে। এবার গণিতে জিপিএ-৫ পেয়েছে ৮৭১২ জন। বিজ্ঞানেও জিপিএ-৫ এর সংখ্যা কমে গেছে। গতবার পেয়েছিল ৬২৩০ জন। এবার তা ৪৭৩১ জনে নেমে এসেছে। অপরদিকে, ফিন্যন্স ও ব্যাংকিংয়ে গতবার জিপিএ-৫ পেয়েছিল ৩১৭২ জন। এবার তা কমে প্রায় অর্ধেকে নেমে এসেছে। এবার পেয়েছে ১৫৮৮ জন।
কলেজিয়েট স্কুলের প্রধান শিক্ষক দেবব্রত দাশ এজন্য খাতা মূল্যায়ন পদ্ধতিকেই দুষছেন। পূর্বকোণকে তিনি বলেন, অনেক সময় যথাযথ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত শিক্ষকের হাতে খাতা মূল্যায়নের দায়িত্ব না পড়লে ভাল শিক্ষার্থীরা বঞ্চিত হয়। অতীতে এই ধরনের ঘটনা ঘটেছে। এবারো সে ধরনের কিছু ঘটেছে কিনা তা খতিয়ে দেখা উচিত।
তবে ডা. খাস্তগীর স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা শাহেদা আকতার বলেন, অতি আত্মবিশ^াসও পরীক্ষার্থীদের ডোবাতে পারে। ডা. খাস্তগীর স্কুলে চট্টগ্রামের সেরা শিক্ষার্থীরা ভর্তি হন, এক্ষেত্রে আরো বেশি জিপিএ-৫ পাওয়া উচিত ছিল কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, জিপিএ-৫ আরো বেশি পাওয়ার সুযোগ ছিল। হয়তো দেখা যাবে, সামান্য নম্বরের জন্য কেউ কেউ তা অর্জন করতে সক্ষম হয়নি।
সরকারি মুসলিম উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জিয়াউল চৌধুরী হেনরি বলেন, অনেক সময় অতিআত্মবিশ^াসও শিক্ষার্থীদের ফলাফল খারাপ করে। কিছু ক্ষেত্রে দেখা যায়, এমন শিক্ষকের হাতে খাতা মূল্যায়নের দায়িত্ব পড়ে যারা যথাযথ প্রশিক্ষিত নন। ওই ধরনের শিক্ষকরা ভালভাবে না পড়েই খাতার মূল্যায়ন করেন এবং গড়ে নম্বর দিয়ে দেন। তখন একজন মেধাবী পরীক্ষার্থী ক্ষতিগ্রস্থ হয়। মুসলিম উচ্চ বিদ্যালয়ের সেরা মেধাবীরাই ভর্তি হয়, তারপরেও ৮০ জন পরীক্ষার্থী জিপিএ-৫ অর্জন করতে সক্ষম হয়নি। এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এখানে ১২ শতাংশ কোটায় ভর্তি হয়। কোটায় ভর্তি হওয়া শিক্ষার্থীরা কিছুটা দুর্বল। তবুও আরো বেশি জিপিএ-৫ পাওয়া উচিত ছিল বলে তিনি স্বীকার করেন।
মূলত কলেজিয়েট স্কুল, সরকারি মুসলিম উচ্চ বিদ্যালয়, নাসিরাবাদ সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়, ডা. খাস্তগীর বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, বাওয়া স্কুলসহ কিছু স্কুলে নিজের সন্তানকে ভর্তি করানোর জন্য অভিভাবকরা মরিয়া হয়ে উঠেন। প্রতিযোগিতার মাধ্যমেই এসব স্কুলে সেরা শিক্ষার্থীরা ভর্তি হন। অভিভাবকদের প্রত্যাশা থেকে এসব স্কুলে ভর্তি হতে পারলেই তাদের সন্তানরা আশানুরূপ ভাল ফলাফল করবে।
বোর্ডের স্কুলভিত্তিক ফলাফল বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, এবার কলেজিয়েট স্কুল থেকে ৪৫৭ জন পরীক্ষা দিলেও ৪১১ জন জিপিএ-৫ পেয়েছে। একজন ফেলও করেছে। বাকি ৪৬ জন কাক্সিক্ষত ফল অর্জন করতে পারেনি। সরকারি মুসলিম উচ্চ বিদ্যালয়ে ৩৯২ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে জিপিএ-৫ পেয়েছে ৩১২ জন। বাকি ৮০ জন কাঙিক্ষত ফল অর্জন করতে পারেনি। নাসিরাবাদ সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের ৪৬১ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে দুইজন ফেল করেছে। জিপিএ-৫ পেয়েছে ২৯৪ জন। এই স্কুলের ১৬৭ পরীক্ষার্থী কাক্সিক্ষত ফল অর্জন করতে পারেনি। ডা. খাস্তগীর স্কুলের ৫৪ পরীক্ষার্থী কাক্সিক্ষত ফল অর্জিত হয়নি। বাওয়া স্কুলের অবস্থাও একই। এই স্কুল থেকে ৪৬৯ পরীক্ষার্থীর মধ্যে জিপিএ-৫ পেয়েছে ২৬৪ জন। পায়নি ২০৫ জন।
শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক মাহাবুব হাসান পূর্বকোণকে বলেন, গতবার চট্টগ্রাম জেলা এবং পাবর্ত্য জেলার স্কুলগুলির ফল খারাপ হওয়ার কারণে তাদের নিয়ে আমার বৈঠক করা হয়েছিল। খোঁজ খবর রেখে কঠোর নজরদারি করা হয়েছিল। তাই হয়তো তারা গতবারে তুলনায় এবার একটু ভাল ফল করেছে। শহরের পরীক্ষার্থীরা পিছিয়ে পড়ার কারণ এখনো জানা যায়নি। বিষয়টি নিয়েও খোঁজ খবর নেয়া হবে। আর জিপিএ-৫ কমে যাওয়ার কারণ হিসেবে হিনি চারটি বিষয়কে দায়ী করেন। বিষয়গুলি হল বাংলা, গণিত, সাধারণ বিজ্ঞান এবং ফিন্যান্স ও ব্যাংকিং।
চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের প্রধান শিক্ষা কর্মকর্তা সুমন বড়–য়া পূর্বকোণকে জানান, গতবারের তুলনায় এবার সিটি কর্পোরেশন পরিচালিত স্কুলসমূহে জিপিএ-৫ এর সংখ্যা কিছুটা কমেছে। গতবার জিপিএ-৫ পেয়েছিল ৫২২ জন। এবার ৯৪ জন কম পেয়েছে। কারণ খতিয়ে দেখা হবে উল্লেখ করে বলেন, যদি কোন একটা বিষয়ে ফল খারাপ হয় তাহলে সামগ্রিক ফলাফলের উপর তার প্রভাব পড়ে। আগামীতে ভাল ফলাফল করার ক্ষেত্রে করণীয় নির্ধারণ করতে শিক্ষকদের সাথে বসে তাদের মতামত নেবেন বলে উল্লেখ করেন।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট