চট্টগ্রাম শনিবার, ২৭ এপ্রিল, ২০২৪

চাঁদা দিয়ে সড়ক দখল!

নিজস্ব প্রতিবেদক 

২৯ নভেম্বর, ২০২০ | ১২:৪৯ অপরাহ্ণ

চট্টগ্রামের ‘লাইফ লাইন’ খ্যাত পোর্ট কানেক্টিং সড়কটি হালিশহরবাসীর দুঃখের নাম হয়ে গিয়েছিল। বছরের পর বছর ধরে সংস্কারকাজ চলায় তাদের ভোগান্তি চরমে উঠেছিল। তবে সড়কের বড়পোল থেকে নিমতলা পর্যন্ত সংস্কারকাজ শেষ হয়েছে। কিন্তু এতেও সুফল মিলছে না। কারণ প্রায় এক কিলোমিটার অংশজুড়ে সড়কের দুই পাশ দখল নিয়েছে কাভার্ডভ্যান ও ট্রেইলার। দিনরাত সড়কের ওপর এসব গাড়ি দাঁড়িয়ে থাকায় যানজট লেগে থাকে। স্থানীয় ছাত্রলীগ ও যুবলীগ নামধারী ব্যক্তিদের পাশাপাশি সমিতির নামেও এসব গাড়ি থেকে টাকা তোলা হয়। পুলিশের পকেটেও সেই টাকার ভাগ যায় বলে অভিযোগ রয়েছে। মূলত তাদের ১০০ থেকে ২০০ টাকা চাঁদা দিয়ে সড়কের ওপর ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থাকে গাড়িগুলো।

চট্টগ্রাম বন্দরের কনটেইনার ও পণ্যবাহী গাড়ি রাজধানীসহ সারাদেশে পরিবহনের জন্য পোর্ট কানেকটিং সড়কটি নির্মিত হয়। প্রতিদিন গড়ে ১০-১১ হাজার পণ্যবাহী গাড়ি এই সড়ক দিয়ে বন্দর থেকে সারা দেশে যায় এবং সমপরিমাণ গাড়ি বন্দরে ফিরে আসে। সংষ্কারকাজের জন্য বেশ কিছুদিন গাড়ি চলাচল বন্ধ থাকলেও এখন পুরোদমে গাড়ি চলছে। পাশাপাশি হালিশহর, আগ্রাবাদ ও অলংকার থেকে প্রতিদিন হাজারো শ্রমিককে নিয়ে বিভিন্ন বাস দুটি ইপিজেডে আসা-যাওয়া করে। ফলে দিনভরই ব্যস্ত থাকে এই সড়কটি। কিন্তু এখন সড়কের দুই পাশে দখল করে গাড়ি রাখায় সড়ক অনেকটাই সংকুচিত হয়ে গেছে। এই সড়ক দিয়ে নিয়মিত যাওয়া আসা করা মানুষেরা জানান, সড়ক সংকুচিত হয়ে যাওয়ায় দিনে অন্তত তিনবার বড় যানজট লাগে। এর মধ্যে সকাল ও বিকেলে ইপিজেডগামী গাড়ির চাপ বেড়ে গেলে দুই দফায় যানজট লেগে যায়। এ ছাড়া দুপুরের দিকে বন্দর থেকে পণ্যভর্তি গাড়ি বের হলে আরেক দফা যানজট তৈরি হয়। মাঝে মাঝে দুর্ঘটনাও ঘটছে একই কারণে।

গতকাল শনিবার বিকেলে সরেজমিনে দেখা যায়, বড় পোল থেকে একটু সামনে এগোতেই সড়কের দুই পাশেই কয়েক স্তর করে গাড়ির মিছিল। সেসবের বেশিরভাগই কাভার্ডভ্যান আর ট্রেইলার। কোথাও কোথাও রাখা হয়েছে বাসও। একটি কাভার্ডভ্যানের চালকের সহকারীর সঙ্গে কথা হয়। তিনি নাম প্রকাশ না করে পূর্বকোণকে বলেন, দিন-রাত হিসাবে টাকা তোলা হয়। প্রতি বেলায় ১০০টাকা করে দিতে হয়।

একই কথা বলেন আরও দুজন চালক। তাঁরা বলেন, গাড়িগুলো বন্দর থেকে পণ্য ভরার জন্য অপেক্ষা করে। গাড়ি রাখার জায়গা সংকটের জন্য তারা এখানে রাখতে বাধ্য হন।

কারা টাকা নেন? এমন প্রশ্নে স্থানীয় ব্যক্তি ও গাড়ির চালকেরা জানান, ছাত্রলীগ ও যুবলীগের নাম ব্যবহার এবং সমিতির নামে টাকা তোলা হয়। ওই এলাকার নানা জায়গায় এক যুবলীগ নেতার নামে পোস্টার টাঙানো ছিল। তার অনুসারীরাই বেশিরভাগ সময় টাকা তোলেন বলে অভিযোগ করেন স্থানীয়রা। অবশ্য তারা জানান, সেই টাকার একটা অংশ পায় পুলিশ। সেজন্য ট্রাফিক পুলিশেরও সড়ক থেকে গাড়ি সরাতে তেমন তোড়জোড় নেই।

প্রতিদিন এই সড়ক দিয়ে যাওয়া আসা করেন একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মী মিজানুর রহমান। তিনি পূর্বকোণকে বলেন, সড়ক পুরোদমে চালু হওয়ায় আমাদের দীর্ঘদিনের ভোগান্তি কমবে ভেবেছিলাম। কিন্তু সড়ক দখল করে রাখায় যানজটের কারণে একই ভোগান্তি রয়ে গেছে। চাঁদার বিনিময়ে এভাবে সরকারি সড়ক দখল করে রাখার সুযোগ যারা করে দিচ্ছেন তাদের খুঁজে বের করে শাস্তির আওতায় আনা উচিত।

তবে সড়কের ওপর রাখায় প্রতিদিন ৮-১০টি গাড়িকে জরিমানা করা হচ্ছে বলে দাবি করেন নগর পুলিশের উপকমিশনার (ট্রাফিক-বন্দর) মোহাম্মদ তারেক আহমেদ। তিনি পূর্বকোণকে বলেন, ‘মূলত রাত ১১টা থেকে সকাল ৭টা পর্যন্ত সড়কে ট্রাফিক পুলিশ থাকে না। ওই সময়ে সড়কে দখল নেয় গাড়িগুলো। পরে আমরা এলেই জরিমানা করি। কিন্তু চালকেরা অজুহাত দেখান, টার্মিনাল না থাকায় বাধ্য হয়ে তারা সড়কে গাড়ি রাখছেন।’

পুলিশের চাঁদার ভাগ পাওয়ার বিষয়টি সঠিক নয় বলে মনে করেন মোহাম্মদ তারেক আহমেদ। তিনি বলেন, ‘টাকা নিলে তো সেখানে দায়িত্বরত ট্রাফিক ইন্সপেক্টর গাড়ির চালককে জরিমানা করতেন না।’

পূর্বকোণ/এএ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট